বেকারত্ব কি ? বিভিন্ন ধরণের বেকারত্ব ও কারণ – PDF Download
Unemployment : Types & Reason
বেকারত্ব কি ? বিভিন্ন ধরণের বেকারত্ব ও কারণ
প্রিয় পাঠকেরা, আজকে আমরা আলোচনা করবো বেকারত্ব কি ? বিভিন্ন ধরণের বেকারত্ব ও কারণ নিয়ে । ভারতের মতাে জনবহুল দেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সামঞ্জস্য রেখে কর্মসংস্থানের সুযােগ সৃষ্টি না হওয়ায় বেকারত্বের সমস্যা উদ্ভব হয়। কোনাে কর্মক্ষম ব্যক্তি (15-60 বছর বয়স্ক) তার যোগ্যতা সত্ত্বেও যদি উৎপাদনমুখী ও আয় সৃষ্টিকারী কার্যকলাপে নিযুক্ত হতে না পারে, তবে তাকে বেকার বলা হয়। bekartowo kake bole ? bibhinno dhoroner bekarotwo
ভারতীয় অর্থনীতির একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় এই বেকারত্ব। বেকারত্ব কাকে বলে, ভারতের কত প্রকারের বেকারত্ব দেখা যায়, বেকারত্বের কারণগুলি কি কি – এগুলি থেকে বিভিন্ন পরীক্ষায় মাঝে মধ্যেই প্রশ্ন এসে থাকে। আমাদের এই নোটটি পড়া থাকলে সেই সমস্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া সোজা হয়ে যাবে।
অফলাইন পড়ার জন্য দেওয়া রইলো PDF ফাইল ডাউনলোডে অপসন ।
বেকারত্বের ধরন (Types of unemployment) :
ভারতের মতাে স্বল্পোন্নত বা উন্নয়নশীল দেশে বেকারত্বের প্রকৃতি পর্যালােচনা করলে বেকারত্বের যে ধরনগুলি চিহ্নিত করা যায় সেগুলি নিম্নরূপ :
(ক) সংঘর্ষজনিত বেকারত্ব (Frictional unemployment) :
উৎপাদন পদ্ধতিতে আমূল সংস্কারের ফলে অথবা শিল্পক্ষেত্রে শ্রমিক-মালিক সম্পর্কের অবনতির ফলে যে বেকারত্বের সমস্যা সৃষ্ট হয়, তাকে সংঘর্ষজনিত বেকারত্ব বলা যায়।
যেমন, কোনাে শিল্পে অত্যাধুনিক কম্পিউটার-চালিত উৎপাদন পদ্ধতি প্রয়ােগ করা হলে সেক্ষেত্রে অনভিজ্ঞ কর্মচারীদের বেকার হয়ে পড়ার সমস্যা দেখা দেয়। আবার, শিল্পক্ষেত্রে ধর্মঘট, লক-আউট ইত্যাদি ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে শ্রমিকেরা কিছুকাল বেকার হয়েপরে ।
[ আরো দেখুন : একনজরে পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা ]
(খ) কাঠামােগত বেকারত্ব (Structural unemployment) :
অর্থনৈতিক কাঠামােগত অপূর্ণতার কারণে যে বেকারত্বের সমস্যা দেখা দেয়, সেই বেকারত্বকে কাঠামােগত বেকারত্ব বলা হয়।
যেমন, উৎপাদনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে উপাদানের জোগানে অস্থিতিস্থাপকতার ফলে উৎপাদন বৃদ্ধির গতি ধীর হয়ে পড়লে সেসব ক্ষেত্রে কর্মসংস্থান বৃদ্ধির সুযােগ কমে
আসে। ভারতবর্ষের মতাে স্বল্পোন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলিতে এই সমস্যা দেখা যায়।
(গ) মরশুমি বেকারত্ব (Seasonal unemployment) :
ভারতের মতাে কৃষিপ্রধান দেশে কৃষিক্ষেত্রে উপযুক্ত সেচের অভাবে কৃষকেরা প্রধানত অনুকূল মরশুমের (বা বৃষ্টিপাতের) ওপর নির্ভর করে কৃষিকাজ সম্পন্ন করে। এর ফলে কৃষিক্ষেত্রে বছরের সকল সময় কর্মপ্রাপ্তির সুযােগ থাকে না। প্রতিকূল মরশুমের কারণে কৃষক এবং কৃষি শ্রমিকেরা একটি বছরে 4 – 6 মাস কর্মহীন অবস্থায় থাকে। একেই মরশুমি বেকারত্ব বলে।
[ আরো দেখুন : প্রশ্নোত্তরে রাষ্ট্রবিজ্ঞান – পার্ট ১ ]
(ঘ) প্রচ্ছন্ন বেকারত্ব (Disguised unemployment) :
ভারতের মতাে স্বল্পোন্নত বা উন্নয়নশীল দেশগুলিতে জনসংখ্যা বৃদ্ধির চাপে গ্রামীণ ক্ষেত্রে উদ্বৃত্ত শ্রমের অস্তিত্ব লক্ষ করা যায়। অর্থাৎ গ্রামাঞলে পারিবারিক খামারগুলিতে (যেখানে মূলত কৃষক পরিবারের সদস্যরাই কৃষিকাজে অংশগ্রহণ করে) কৃষিকাজে প্রয়ােজনের অতিরিক্ত শ্রমিক নিযুক্ত থাকে। তাদের উৎপাদনের কাজ থেকে সরিয়ে নিলেও কৃষি উৎপাদনে কোনাে হেরফের হয় না। অর্থাৎ আপাতদৃষ্টিতে এই কৃষকদের কর্মে নিযুক্ত মনে হলেও কৃষি উৎপাদনে প্রকৃতপক্ষে তাদের কোনাে ভূমিকা না থাকার ফলে, তাদের প্রচ্ছন্ন বেকার বলা হয়।
(ঙ) শিক্ষিত বেকারত্ব (Educated unemployment) :
যখন কোনাে দেশে শিক্ষিত ও কর্মক্ষম ব্যক্তিরা তাদের শিক্ষাগত যােগ্যতা থাকা সত্ত্বেও উপযুক্ত কর্মনিযুক্তির সুযােগ থেকে বঞ্চিত হয়, তাকে শিক্ষিত বেকারত্ব বলা হয়।
যেমন, ভারতে পরিকল্পনাকালীন সময়ে কর্মমুখী শিক্ষার তুলনায় প্রথাগত সাধারণ শিক্ষার সুযােগ অধিক বিস্তৃত হয়েছে। তা ছাড়া গ্রামাঞ্চলের তুলনায় শহরাঞ্চলেই উচ্চশিক্ষার সুযােগ বেশি সৃষ্ট হয়েছে। ফলে এক বিপুল সংখ্যক যুবক-যুবতী ওই সাধারণ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়েও উপযুক্ত কর্মসংস্থানের সুযােগ পায়নি। কারণ এই ধরনের শিক্ষিত বেকারের জোগানের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে কর্মসংস্থানের সুযােগ বিস্তার লাভ করেনি।
(চ) শিল্পক্ষেত্রে বেকারত্ব (Industrial unemployment ) :
কোনাে দেশে বিভিন্ন শিল্পে শ্রমিক জোগানের সাথে সামঞ্জস্য রেখে শিল্পে নিযুক্তির সুযােগ যদি বৃদ্ধি না পায়, তবে শিল্পক্ষেত্রে বেকারত্বের উদ্ভব হয়।
যেমন, ভারতে 1972-78 সালে উৎপাদন শিল্পে (Manufacturing industry) কর্মসংস্থান সৃষ্টির ক্ষেত্রে গড় বার্ষিক বৃদ্ধির হার ছিল 5.10 শতাংশ। কিন্তু 1993-2000 সালের মধ্যে এই বৃদ্ধির হার হ্রাস পেয়ে হয়েছে 2’05 শতাংশ ।
উল্লেখ্য যে ভারতের গ্রামাঞ্চলে মরশুমি বেকারত্ব এবং প্রচ্ছন্ন বেকারত্বের সমস্যাই বেশি।
[ আরো দেখুন : প্রশ্নোত্তরে রাষ্ট্রবিজ্ঞান – পার্ট ১ ]
বিভিন্ন ধরনের বেকারত্বের কারণসমূহ
এখন আমরা ভারতে ওই নানান ধরনের বেকারত্বের মূল কারণগুলি নির্দেশ করতে পারি। (Causes of different types of unemployment)
(ক) ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার চাপ :
পরিকল্পনাকালীন সময়ে ভারতে জনসংখ্যার চাপ ক্রমাগত বৃদ্ধি পেয়েছে। এর ফলে শ্রমজোগানে বৃদ্ধি ঘটেছে। যেহেতু ভারতে মােট জনসংখ্যার এক গরিষ্ঠ অংশ গ্রামাঞ্চলে বসবাস করে, সেহেতু গ্রামাঞ্চলে এই চাপ তুলনামূলকভাবে বেশি ছিল। গ্রামীণ ক্ষেত্রে প্রচ্ছন্ন বেকারত্বের মূল কারণ হল গ্রামাঞ্চলে এই জনসংখ্যা বৃদ্ধির চাপ।
(খ) সেচের অপর্যাপ্ত সুবিধা :
1950-51 সালে ভারতে শস্যচাষের আওতাধীন মােট আবাদি জমির মধ্যে মাত্র 17 শতাংশ জমি সেচের সুবিধা পেয়েছে (যেমন- খাল, নলকূপ ইত্যাদির মাধ্যমে)। 1992-93 সালে ওই অংশ বৃদ্ধি পেয়ে প্রায় 35 শতাংশ হলেও আবাদি জমির প্রায় 2/3 অংশ বৃষ্টিপাতের ওপর নির্ভরশীল। এই কারণে সেক্ষেত্রে একই জমিতে বছরে একবার মাত্র চাষ সম্ভব। ফলে মরশুমি বেকারত্বের মূল কারণ হল অপর্যাপ্ত সেচ।
[ আরো দেখুন : ভারতের ইতিহাস – ৩০০টি MCQ ( PDF ) ]
(গ) বিভিন্ন শিল্পে কর্মনিয়ােগ বৃদ্ধির ধীর গতি :
বিভিন্ন পরিকল্পনাকালে শিল্পক্ষেত্রে শ্রমজোগান বৃদ্ধির সাথে সংগতি রেখে কর্মনিয়ােগের হারে বৃদ্ধি ঘটেনি । এর ফলে শিল্পক্ষেত্রে বেকারত্বের সমস্যা ক্রমাগত তীব্র হয়েছে।
(ঘ) গ্রামাঞ্চল থেকে শহরাঞ্চলে শ্রমিক প্রচরণ :
কৃষিক্ষেত্রে জনসংখ্যার চাপ বৃদ্ধি পাওয়ায় কর্মসংস্থানের আশায় এক বিপুল পরিমাণ শ্রমিক কৃষিক্ষেত্র থেকে শিল্পক্ষেত্রে স্থানান্তরিত হয়েছে। ফলে শিল্পক্ষেত্রে পরিযায়ী শ্রমিকদের (Migrated labour) জোগান বৃদ্ধি ঘটেছে। অথচ সেই অনুপাতে শিল্পক্ষেত্রে কর্মসংস্থানের সুযােগ বৃদ্ধি ঘটেনি।
(ঙ) পুঁজি-নিবিড় উৎপাদন পদ্ধতি :
শিল্পক্ষেত্রে বেশিরভাগ শিল্পে উৎপাদন পদ্ধতি পুঁজি-নিবিড় ধরনের হওয়ার ফলে উৎপাদন প্রক্রিয়ায় শ্রমের তুলনায় মূলধনের নিয়ােগ বেশি হয়েছে। এই কারণে শিল্পোৎপাদন যে হারে বৃদ্ধি পেয়েছে, কর্মসংস্থানের সুযােগ তার তুলনায় কম হারে বৃদ্ধি পেয়েছে (অর্থাৎ শিল্পক্ষেত্রে উৎপাদনের সাপেক্ষে কর্মসংস্থানগত স্থিতিস্থাপকতা অপেক্ষাকৃত অস্থিতিস্থাপক ছিল)।
(চ) শিল্পক্ষেত্রে সরকারি বিনিয়ােগ হ্রাস :
1991 সালের পর থেকে ভারতীয় অর্থনীতিতে যে উদার অর্থনৈতিক পরিমণ্ডল গড়ে তােলার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে, সেখানে সরকারি শিল্পক্ষেত্রে বিনিয়ােগ হ্রাস এবং বেসরকারি ক্ষেত্রের প্রসারের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এর ফলে অনেক অলাভজনক সরকারি শিল্পোদ্যোগ বন্ধ করা হয়েছে। আবার বেশ কিছু লাভজনক সরকারি শিল্পোদ্যোগের শেয়ার মূলধনে (Share capital) সরকারের অংশ বেসরকারি উদ্যোক্তাদের কাছে বিক্রয় করা হয়েছে। একে বিলগ্নিকরণ নীতি (Disinvestment policy) বলা হয়। অন্যদিকে, বেসরকারি উদ্যোগগুলি মূলত মুনাফা সর্বোচ্চ করার লক্ষ্যে মূলধন-নিবিড় প্রযুক্তি ব্যবহার করেছে। ফলে সামগ্রিকভাবে শিল্পক্ষেত্রে কর্মসংস্থানের সুযােগ হ্রাস পেয়েছে।
(ছ) শিল্পে মন্দাজনিত অবস্থা :
শিল্পক্ষেত্রে উৎপাদিত দ্রব্যসমূহের বাজার যদি প্রসারিত না হয়, তবে বিভিন্ন শিল্পদ্রব্যের জোগানের তুলনায় চাহিদার পরিমাণ স্বল্প হবে। ফলে শিল্পক্ষেত্রে মন্দাজনিত পরিস্থিতির উদ্ভব হয়। যেমন, কৃষিক্ষেত্রে কোনাে কারণে শস্যহানি ঘটলে কৃষিক্ষেত্রে শিল্পদ্রব্যের জন্য যথেষ্ট চাহিদার সৃষ্টি হয় না। ফলে শিল্পদ্রব্যের দেশীয় বাজার সংকুচিত হয়ে পড়ে। ভারতবর্ষে 1965-75 সালের মধ্যে এমন পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছিল। আবার, একটি উদার অর্থনৈতিক পরিমণ্ডলে বিশ্ব বাজারে সৃষ্ট মন্দা সহজেই দেশীয় শিল্পকে প্রভাবিত করে। এক্ষেত্রে দেশীয় শিল্পদ্রব্যের বৈদেশিক বাজার সংকুচিত হয়। ভারতে 1997-2002 সালের মধ্যে এই ধরনের পরিস্থিতি সৃষ্ট হয়। এই কারণে শিল্পক্ষেত্রে কর্মসংস্থান সৃষ্টির গতি হ্রাসপ্রাপ্ত হয়।
(জ) শিক্ষাব্যবস্থার গলদ :
আমরা ইতিমধ্যেই উল্লেখ করেছি যে, ভারতে শিক্ষাপদ্ধতিতে কর্মমুখী শিক্ষার পরিবর্তে প্রথাগত সাধারণ শিক্ষার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। শিক্ষাব্যবস্থায় এই গলদের কারণেও দেশে শিক্ষিত বেকারত্বের প্রকোপ বৃদ্ধি পেয়েছে।
Download Section
- File Name : বেকারত্ব (Unemployment)
- File Size : 189 KB
- No. of Pages : 03
- Format : PDF
- Language : Bengali
- Subject : ভারতের অর্থনীতি
To check our latest Posts - Click Here