Biography

মাদার টেরিজা জীবনী ,কুইজ ও বাণী – Mother Teresa Biography in Bengali

Unveiling the Life and Legacy of Mother Teresa: A Biography

Mother Teresa Biography in Bengali : আজকে আমরা এক মহান আত্মা, মাদার টেরিজার জীবনী নিয়ে আলোচনা করবো। সঙ্গে দেখে নেবো এই মহামানবীর জীবন সম্পর্কিত কিছু প্রশ্ন ও উত্তর ।

একনজরে মাদার টেরিজা

একনজরে দেখে নেওয়া যাক মাদার টেরিজা সম্পর্কিত কিছু তথ্য।

নাম মাদার টেরিজা
প্রকৃত নাম অ্যাগনিস গঞ্জা বোজাঝিউ
জন্ম ২৬ আগস্ট ১৯১০
জন্মস্থান ইউস্কুপ, অটোম্যান সাম্রাজ্য (অধুনা স্কপিয়ে, উত্তর মেসিডোনিয়া)
পিতা নিকোল্লে বোজাঝিউ
মাতাড্রানাফাইলে বোজাঝিউ
পেশাক্যাথলিক সন্ন্যাসিনী, ধর্মপ্রচারক
নাগরিকত্ব আলবেনীয় (১৯১০-১৯২৮), ব্রিটিশ ভারতীয় (১৯২৮-১৯৪৭), ভারতীয় (১৯৪৭-১৯৯৭)
পুরস্কার নোবেল শান্তি পুরস্কার (১৯৭৯)
ভারতরত্ন (১৯৮০)
প্রেসিডেন্সিয়াল মেডেল অফ ফ্রিডম (১৯৮৫)
বালজান পুরস্কার (১৯৭৮)
মৃত্যু ৫ই সেপ্টেম্বর, ১৯৯৭ (৮৭ বছর বয়স )

জন্ম

মাদার টেরিজা ২৬শে অগাস্ট ১৯১০ সালে অটোমান সাম্রাজ্যের আলবেনিয়া রাজ্যের স্কপিয়েতে জন্মগ্রহণ করেন। তবে ২৬ আগস্ট জন্ম হলেও তিনি ২৭ আগস্ট তারিখটিকে তার “প্রকৃত জন্মদিন” মনে করতেন; কারণ ওই তারিখেই তার বাপ্তিস্ম সম্পন্ন হয়েছিল। তিনি এক রোমান ক্যাথলিক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। জন্মকালীন তার নাম ছিল (প্রকৃত নাম ) অ্যাগনিস গঞ্জা বোজাঝিউ। তার পিতা নিকোল্লে বোজাঝিউ এবং মাতা ড্রানাফাইলে বোজাঝিউ ।

গৃহত্যাগ

মাত্র আট বছর বয়সে তিনি তার পিতাকে হারান। ছোট থেকেই তিনি ধর্মপ্রচারকদের জীবন ও কাজকর্মের গল্প শুনতে শুনতে বড় হন। ১২বছর বয়সেই তিনি সন্ন্যাসী হবার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিলেন। ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত তিনি ইউস্কুপ বা স্কপিয়েতে ছিলেন। এর পর তিনি গৃহত্যাগ করেন এবং একজন ধর্মপ্রচারক হিসেবে যোগ দেন সিস্টার্স অফ লোরেটো সংস্থায়।

প্রথমে আয়ারল্যান্ডের রথফার্নহ্যামে লোরেটো অ্যাবেতে ইংরেজি ভাষা শিক্ষা করতে যান। কারণ এই ভাষাই ছিল ভারতে সিস্টার্স অফ লোরেটোর শিক্ষার মাধ্যম। ১৯২৯ সালে ভারতে এসে দার্জিলিঙে নবদীক্ষিত হিসেবে কাজ শুরু করেন। ১৯৩১ সালের ২৪ মে তিনি সন্ন্যাসিনী হিসেবে প্রথম শপথ গ্রহণ করেন। এই সময় তিনি ধর্মপ্রচারকদের পৃষ্ঠপোষক সন্ত Thérèse de Lisieux –এর নামানুসারে টেরিজা নাম গ্রহণ করেন। ১৯৩৭ সালের ১৪ মে পূর্ব কলকাতায় একটি লোরেটো কনভেন্ট স্কুলে পড়ানোর সময় তিনি চূড়ান্ত শপথ গ্রহণ করেন।

কর্মজীবন

১৯২৯ সালে ভারতে এসে তিনি খ্রিস্টধর্ম প্রচার করতে শুরু করেন। ভারতে এসে তিনি দার্জিলিং-এ শিক্ষিকা হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। পরবর্তীকালে তিনি কলকাতার এন্টালিতে সেন্ট মেরিজ হাইস্কুলে ভূগোল শিক্ষিকা হিসাবে কাজ শুরু করেন। এর পরে তিনি লরেটো স্কুলেও যোগদান করেন।

১৯৪৭ সালে ভারতের স্বাধীনতার ঠিক আগে তিনি ভারতের নাগরিকত্ব পান। কিন্তু ভারতের বিভিন্ন দাঙ্গা, মন্বন্তর, অবর্ণনীয় দুঃখ ও কষ্ট তাঁর মনকে ব্যথিত করে। ১৯৫০ সালে তিনি ‘ডায়োসিসান ধর্মপ্রচারকদের সংঘ’ তৈরী অনুমতি পান ভ্যাটিকানের কাছ থেকে। এই সংঘই পরবর্তীতে ‘মিশনারিস অফ চ্যারিটি’ তে পরিণত হয়। এই সংঘ কলকাতার মতিঝিল বস্তির দুরারোগ্য ও দুঃস্থ মানুষের জন্য কাজ করতে থাকে।

১৯৫২ সালে তিনি এক পরিত্যক্ত মন্দিরকে “কালীঘাট হোম ফর দ্যা ডাইং” এ পরিণত করেন এবং এটিই পরবর্তীকালে “নির্মল হৃদয়” নামে নামাঙ্কিত হয়। মাদার টেরিজা টিটাগড়ে কুষ্ঠরোগীদের সেবার জন্য একটি আশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন যার নাম দেন ‘শান্তি নগর’। তিনি মিশনারিস অফ চ্যারিটির উদ্যোগে প্রত্যন্ত অঞ্চলেও কুষ্ঠরোগের চিকিৎসা কেন্দ্র স্থাপন করেন। এছাড়াও অনাথ শিশুদের লালন পালন করতেন এবং তাদের জন্য থাকার জন্য ১৯৫৫ খ্রিস্টাব্দে ‘নির্মল শিশু ভবন’ স্থাপন করেন যা বসতিহীন শিশুদের কাছে এনে দিয়েছিল একধরণের স্বর্গ।

পুরস্কার

  • ১৯৬২ সালে ‘পদ্মশ্রী পুরস্কার’ সম্মানে ভূষিত হন।
  • ১৯৬২ সালে তিনি রমন ম্যাগসেসে পুরস্কার পান।
  • ১৯৭২ সালে ‘নেহেরু পুরস্কার’ লাভ করেন।
  • ১৯৭৩ সালে তিনি টেমপেল্টন পুরস্কার পান।
  • ১৯৭৮ সালে ‘বালজান পুরস্কার’ পান।
  • ১৯৭৯ খ্রিস্টাব্দে ভারতের প্রথম মহিলা হিসাবে ‘নোবেল শান্তি পুরস্কার’ পান ।
  • ১৯৮০ সালে ভারতের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান ‘ভারতরত্ন’ লাভ করেন।
  • ১৯৮৫ খ্রিস্টাব্দে পান ‘প্রেসিডেন্সিয়াল মেডেল অফ ফ্রীডম’ সম্মান।

বার্ধক্য ও মৃত্যু

সারাজীবন মানুষের নিঃস্বার্থ সেবা করলেও তাঁর বার্ধক্য জীবন মোটেও সুখদায়ক ছিল না। ১৯৮৩ সালে তিনি পোপ জনপল ২ এর সাথে দেখা করার উদ্দেশ্যে রোম সফর যাবার সময় তাঁর হার্ট অ্যাটাক হয়। পরবর্তীকালে ১৯৮৯ সালে আবার তাঁর হার্ট অ্যাটাক হলে তাঁর দেহে পেসমেকার স্থাপন করা হয়। ১৯৯১ সালে যখন তিনি মেক্সিকোতে ছিলেন তখন তাঁর নিউমোনিয়া হয়। এর ফলে তাঁর ক্রমাগত শারীরিক অবনতি হতে থাকে। ১৯৯৭ সালের ১৩ই মার্চ শারীরিক অসুস্থতার কারণে তিনি মিশনারিস অফ চ্যারিটির প্রধানের পদ থেকে সরে দাড়ান। ৫ই সেপ্টেম্বর ১৯৯৭ সালে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন।

মাদার তেরেসার কিছু বাণী

বাণী ১ :

বাইরের জগতে এখনি বেড়িয়ে পড়ো এবং ভালোবাসো প্রত্যেকটি মানুষকে। তোমার উপস্থিতি যেন হাজারো মানব হৃদয়ে নতুন আলোর সঞ্চার জাগায়।

– মাদার তেরেসা

বাণী ২ :

যদি তুমি একশো মানুষকে সাহায্য করতে সক্ষম না হও, তাহলে অন্তত একজনকে সাহায্য করো।

– মাদার টেরিজা

বাণী ৩ :

কারোর নেতৃত্বের অপেক্ষা না করে নিজ থেকেই সকল উদ্যোগ নেয়া উচিত।

– মাদার টেরিজা

বাণী ৪ :

আমি একা এই পৃথিবীকে বদলে করতে পারবোনা। তবে আমি স্বচ্ছ জলে একটি ছোট পাথরের টুকরো নিক্ষেপ করে বড় বড় জলতরঙ্গ সৃষ্টি করতে পারবো।

– মাদার টেরিজা

বাণী ৫ :

সৃষ্টিকর্তা তোমাদের সফল হওয়ার আদেশ দেননি, শুধুমাত্র সর্বদা অবিরাম চেষ্টা ধরে রাখার আহ্‌বান করেছেন।

– মাদার টেরিজা

বাণী ৬ :

মানুষকে বিচার করে সময় নষ্ট করলে কখনোই তাদেরকে ভালবাসার সময় পাওয়া যাবে না।

– মাদার টেরিজা

বাণী ৭ :

প্রত্যেকের প্রতি ভালবাসার শুরুটা হোক হাসির মাধ্যমে।

– মাদার টেরিজা

বাণী ৮ :

আমরা সকলেই শুরুতেই বিশাল কোনো মহৎ কাজ করতে পারবো না। কিন্তু ভালবাসা দিয়ে ছোট ছোট অনেক ভাল কাজ করা সম্ভব।

– মাদার টেরিজা

বাণী ৯ :

অস্ত্র দিয়ে কখনোই শান্তিকে ঘরে আনা সম্ভব নয়, সম্ভব ভালবাসা ও সহানুভূতির হাত ধরে।

– মাদার টেরিজা

বাণী ১০ :

সবচেয়ে ভয়াবহ দারিদ্রতা হচ্ছে একাকীত্ব এবং প্রিয়জনের সহানুভূতি না পাওয়ার অনুভূতি।

– মাদার টেরিজা

মাদার টেরিজা কুইজ প্রশ্নোত্তর

কুইজের প্রশ্নোত্তর খুব শীঘ্র আপলোড করা হবে ।

এরকম আরও কিছু পোস্ট

দেখে নাও : Dadabhai Naoroji : Grand Old Man India – দাদাভাই নওরোজি এর জীবনী
দেখে নাও : Khudiram Bose Biography in Bengali – ক্ষুদিরাম বসু জীবনী
দেখে নাও : স্বামী দয়ানন্দ সরস্বতী – জীবনী ও অবদান

To check our latest Posts - Click Here

Telegram
Back to top button