পশ্চিমবঙ্গ জন পরিষেবা অধিকার আইন, ২০১৩
The West Bengal Right to Public Services Act, 2013
পশ্চিমবঙ্গ জন পরিষেবা অধিকার আইন, ২০১৩
দেওয়া রইলো পশ্চিমবঙ্গ জন পরিষেবা অধিকার আইন, ২০১৩ সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য।
Table of Contents
পশ্চিমবঙ্গ জন পরিষেবা অধিকার আইন কী ?
এই আইনটি ২০১৩-এর ৩ রা অক্টোবর চালু হয়। নাগরিকেরা যাতে সরকারী দপ্তর বা সরকারের অধীনস্থ সংস্থা
থেকে একটি নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে পরিষেবা পান সেটাই এই আইনের উদ্দেশ্য।
কীভাবে এটা নাগরিকদের সাহায্য করে?
এই আইন একজন নাগরিককে প্রজ্ঞাপিত পরিষেবাগুলি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পেতে সাহায্য করবে।
এই আইন অনুযায়ী একজন নাগরিক কোন্ কোন্ সরকারী দপ্তর থেকে পরিষেবা পেতে পারেন ?
সরকারী বা সরকার দ্বারা গঠিত কোনো কর্তৃপক্ষ বা সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান যা (১) সংবিধান অনুযায়ী (২) রাজ্য বিধানসভার আইন অনুযায়ী (৩) রাজ্য সরকার কর্তৃক বিজ্ঞপ্তি বা আদেশ জারির মাধ্যমে গঠিত এবং
(ক) রাজ্য সরকারের নিজস্ব, নিয়ন্ত্রিত বা যথেষ্ট পরিমাণে আর্থিক সহায়তাপ্রাপ্ত সংস্থা ;
(খ) অসরকারী সংস্থা যা সরাসরি বা পরোক্ষভাবে রাজ্য সরকারের আর্থিক সহায়তাপ্রাপ্ত। এইসব দপ্তর বা সংস্থা থেকে নাগরিকেরা এই আইন অনুযায়ী পরিষেবা পাবেন ।
রাজ্য সরকার সময় সময় সরকারী গেজেটে এই আইনাধীন কর্তৃপক্ষ, পরিষেবা, দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক, আপীল
আধিকারিক, পুনর্বিবেচনা আধিকারিক ও পরিষেবার নির্দিষ্ট সময়সীমা প্রকাশ করবেন ।
কোন্ কোন্ গুরুত্বপূর্ণ পরিষেবা এই আইনের মধ্যে পড়ছে ?
বেশ কিছু পরিষেবা ইতিমধ্যেই এই আইনের আওতাধীন। কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পরিষেবার নাম নীচে দেওয়া হল
- (ক) তফশিলী জাতি/উপজাতি, অনান্য অনগ্রসর সম্প্রদায়-দের জাতিগত শংসাপত্র;
- (খ) যানবাহন নিবন্ধীকরণ, ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রদান ইত্যাদি;
- (গ) নতুন রেশন কার্ড, ঠিকানা, বয়স, উপাধি, পরিবার-কর্তার নাম পরিবর্তন, রেশন কার্ডের নকল, রেশন কার্ডের সমর্পণ ও পরিবর্তন, রেশন কার্ডের পুনর্নবীকরণ;
- (ঘ) জমির তথ্য, অধিকার তথ্যের শংসিত নকল, ডব্লু. বি. এল. আর ও ডব্লু. বি. ই. এ. আইনের ধারায় শংসিত নকল প্রদানের আদেশ;
- (ঙ) অ্যাডমিট কার্ড, মার্কশীট, শংসাপত্রের নকল বা সংশোধন (মাধ্যমিক/উচ্চ মাধ্যমিক), বোর্ড পরিবর্তনের ছাড়পত্র (মাধ্যমিক/উচ্চ মাধ্যমিক);
- (চ) প্রতিবন্ধী শংসাপত্র, জননী সুরক্ষা যোজনা, জন্মের শংসাপত্র ও মৃত্যুর শংসাপত্র;
এছাড়া আরও অনেক পরিষেবা।
দেখে নাও : পশ্চিমবঙ্গের 7 নতুন জেলা – জেলা সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ালো 30 এ
কীভাবে একজন নাগরিক এই আইনে বর্ণিত পরিষেবা গ্রহণ করতে পারবেন ?
পরিষেবা পাওয়ার জন্য একজন নাগরিক দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিকের কাছে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ ঐ পরিষেবার জন্য নির্দিষ্ট নিদর্শে (ফর্ম) আবেদন করবেন ।
প্রজ্ঞাপিত পরিষেবা পাওয়ার আবেদনপত্র জমা দেবার পর একজন নাগরিক কি পাবেন ?
উত্তর : দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক বা তাঁর দ্বারা ক্ষমতাপ্রদত্ত আধিকারিকের কাছ থেকে ঐ নাগরিক নিৰ্দশ-১ (ফর্ম-১)-তে একটি প্রাপ্তিস্বীকারপত্র পাবেন।
প্রাপ্তিস্বীকারপত্রে কি থাকবে ?
আবেদনপত্রের সঙ্গে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র থাকলে নিদর্শ-১ (ফর্ম-১)-এর প্রাপ্তিস্বীকারপত্রে পরিষেবা প্রদানের তারিখ জানাতে হবে। কাগজপত্র ঠিক না থাকলে পরিষেবা প্রদানের তারিখ জানানো হবে না। তখন কি কি কাগজপত্র আরও প্রয়োজন তা লেখা থাকবে।
কীভাবে একজন নাগরিক তাঁর আবেদনপত্রের অবস্থা জানতে পারবেন ?
দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিকের দেওয়া তাঁর কার্যালয়ের রসিদে উল্লেখিত নং ও তারিখ উল্লেখ করে একজন নাগরিক
তাঁর আবেদনপত্রের অবস্থা জানতে পারবেন ।
সংশ্লিষ্ট দপ্তরের ওয়েবসাইটেও প্রয়োজনীয় তথ্য পাওয়া যাবে ।
কোন্ কোন্ পরিষেবা এই আইনের আওতাধীন একজন নাগরিক তা কীভাবে জানবেন ?
দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক তাঁর কার্যালয়ের নোটিশবোর্ডে পরিষেবা সংক্রান্ত সমস্ত তথ্য এবং নির্দিষ্ট সময়সীমা,
দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক, আপীল আধিকারিক ও পুনর্বিবেচনাকারী আধিকারিক কে কে তা জনগণের সুবিধার্থে টাঙিয়ে দেবেন।
পরিষেবা পাবার জন্য আবেদনপত্রের সঙ্গে কী কী কাগজপত্র দিতে হবে তা এবং এই আইনে প্রযোজ্য নিদর্শও (ফর্ম) অনুরূপভাবে টাঙিয়ে রাখতে হবে। এছাড়া সংশ্লিষ্ট দপ্তরের ওয়েবসাইটে ঐ সমস্ত তথ্য পাওয়া যাবে।
দেখে নাও : পশ্চিমবঙ্গের উল্লেখযোগ্য পাহাড় পর্বত ও তাদের অবস্থান – PDF
দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিকের কার্যালয়ে কে আবেদনপত্র গ্রহণ করবেন ?
দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক তাঁর কার্যালয়ের কোনো অধস্তন আধিকারিককে আবেদনপত্র জমা নেওয়া ও রসিদ
দেওয়ার দায়িত্ব দিতে পারেন। ঐ আধিকারিকের নামও নোটিশবোর্ডে টাঙাতে হবে ।
আবেদনপত্রের সঙ্গে কোন্ কোন্ কাগজপত্র জমা দিতে হবে ?
উত্তর : প্রত্যেক আবেদনপত্রের সঙ্গে কী কী কাগজপত্র লাগবে তা দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক তার নোটিশবোর্ডে টাঙিয়ে রাখবেন। সেইমতো একজন আবেদনকারীও তাঁর আবেদনের সঙ্গে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দেবেন। আবেদনপত্রের সঙ্গে দেওয়া সমস্ত কাগজপত্র যথাযথ হলে তবেই সংশ্লিষ্ট আধিকারিক পরিষেবা দেবার তারিখ জানাবেন ।
দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক যে পরিষেবা দিতে পারলেন না তা আবেদনকারী কীভাবে জানবেন ?
কোনো আবেদন পাবার পর দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে হয় পরিষেবাটি প্রদান করবেন, নয়তো
আবেদনপত্রটি বাতিল করবেন। বাতিল করলে, বাতিল করার কারণ লিখিতভাবে আবেদনকারীকে জানাবেন ।
প্রত্যেক পরিষেবা প্রদানের যে নির্দিষ্ট সময়সীমা রয়েছে তার মধ্যে সরকারী ছুটির দিন কি গণ্য হবে ?
নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে সরকারী ছুটির দিন থাকলে তা গণ্য হবে না।
কে আপীল করতে পারেন?
যে আবেদনপত্র দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক বাতিল করেছেন বা যে ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে পরিষেবা দেওয়া
হয়নি, সেই আবেদনকারী আবেদন করতে পারেন।
দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিকের আদেশের বিরুদ্ধে কতদিনের মধ্যে আপীল করতে হবে ?
আবেদনপত্র বাতিল এই আদেশ জানবার বা সময়সীমা অতিক্রম করার ৩০ দিনের মধ্যে আবেদনকারী আপীল
করতে পারেন।
আপীল বা পুনর্বিবেচনার আবেদনের সঙ্গে কোনো ফী জমা দিতে হবে কী ?
আপীল বা পুনর্বিবেচনার আবেদনপত্রের জন্য কোনো ফী লাগবে না ।
দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিকের আদেশের বিরুদ্ধে একজন আবেদনকারী কীভাবে আপীল করবেন?
দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিকের আদেশের বিরুদ্ধে একজন আবেদনকারী নিম্নলিখিত তথ্য/কাগজপত্রসহ নিদর্শ-২
(ফর্ম-২)-তে আপীল করতে পারেন ।
- (ক) আপীলকারীর নাম ও সম্পূর্ণ ঠিকানা;
- (খ) কী পরিষেবা চাওয়া হয়েছিল তার সংক্ষিপ্ত বর্ণনা;
- (গ) দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিকের কাছে পরিষেবা চেয়ে আবেদন করার তারিখ;
- (ঘ) যে আদেশের বিরুদ্ধে প্রথম বা দ্বিতীয় আপীল করা হবে তার স্ব-শংসিত নকল;
- (ঙ) যেসব কাগজপত্রের উপর ভিত্তি করে প্রথম আপীল বা দ্বিতীয় আপীল করা হচ্ছে তার স্ব-শংসিত নকল
- (চ) আপীলের কারণ ;
- (ছ) কী প্ৰতিবিধান চাওয়া হচ্ছে;
- (জ) আপীল করার জন্য প্রয়োজনীয় আর কোনো তথ্য যা আবেদনকারী গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন। আপীলটি যদি দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিকের প্রাপ্তিস্বীকারপত্র না দেওয়ার বিরুদ্ধে হয়, তবে আবেদনের তারিখ, দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিকের নাম ও ঠিকানা;
আপীল আধিকারিকের কাজ কী ?
আপীল আধিকারিক দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিককে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পরিষেবাটি দেবার আদেশ দিতে পারেন বা
আপীলটি বাতিল করতে পারেন।
কে পুনর্বিবেচনার আবেদন জানাতে পারেন ?
একজন আপীলকারী যদি আপীল আধিকারীকের আদেশে সন্তুষ্ট না হন তবে তিনি ঐ আদেশের বিরুদ্ধে
পুনর্বিবেচনা আধিকারিকের কাছে দ্বিতীয়বার আপীল করতে পারেন ।
পুনর্বিবেচনার আবেদনের সময়সীমা কী ?
আপীল আধিকারিকের আদেশের ৬০ দিনের মধ্যে পুনর্বিবেচনা আধিকারিকের কাছে আপীল করতে হবে।
আপীল আধিকারিকের আদেশের বিরুদ্ধে কীভাবে পুনর্বিবেচনার আবেদন জানানো যাবে?
আপীল আধিকারিকের আদেশের বিরুদ্ধে নিম্নলিখিত তথ্য/কাগজপত্রসহ নিদর্শ-৩ (ফর্ম-৩)-তে উচ্চতর
কর্তৃপক্ষের কাছে পুনর্বিবেচনার আবেদন জানাতে পারেন : –
- (ক) আপীলকারীর নাম ও সম্পূর্ণ ঠিকানা
- (খ) কি পরিষেবা চাওয়া হয়েছিল তার সংক্ষিপ্ত বর্ণনা;
- (গ) দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিকের কাছে পরিষেবা চেয়ে আবেদন করার তারিখ;
- (ঘ) যে আদেশের বিরুদ্ধে প্রথম ও দ্বিতীয় আপীল করা হচ্ছে তার স্ব-শংসিত নকল ;
- (ঙ) যেসব কাগজপত্রের উপর ভিত্তি করে প্রথম আপীল বা দ্বিতীয় আপীল করা হয়েছে;
- (চ) আপীলের কারণ;
- (ছ) কী প্ৰতিবিধান চাওয়া হচ্ছে;
- (জ) আপীল করার জন্য প্রয়োজনীয় আর কোনো তথ্য, আপীলটি যদি দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিকের প্রাপ্তিস্বীকারপত্র না দেওয়ার বিরুদ্ধে হয়, তবে আবেদনের তারিখ, দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিকের নাম ও ঠিকানা।
আপীল বা পুনর্বিবেচনার আবেদনের উপর সিদ্ধান্ত নিতে কী পদ্ধতির আশ্রয় নেওয়া হবে?
আপীল আধিকারিক বা পুনর্বিবেচনা আধিকারিক যখন কোনো আপীল বিবেচনা করবেন, তখন তিনি
- (ক) সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র, সরকারী কাগজপত্র বা তার নকল পরীক্ষা করবেন;
- (খ) আপীলটি শুনানীর সময় দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক ও আবেদনকারী বা তাঁর প্রতিনিধির বক্তব্য শুনবেন ।
আপীলও পুনর্বিবেচনার তারিখ কীভাবে সংশ্লিষ্ট পক্ষকে জানানো হবে ?
নিম্নলিখিত যে কোন একটি পদ্ধিতি অবলম্বন করে আবেদনের শুনানীর তারিখ জানানো যেতে পারে-
- (ক) বিশেষ পত্রবাহকের মাধ্যমে হাতে হাতে চিঠি দিয়ে (দস্তি);
- (খ) প্রাপ্তিস্বীকারপত্রসহ রেজিস্টার্ড ডাকে;
- (গ) সরকারী কর্মী হলে তাঁর নিয়ন্ত্রক আধিকারিকের মাধ্যমে ।
কত দিন আগে নোটীশ দেওয়ার প্রয়োজন ?
আপীল, আবেদন বা পুনর্বিবেচনার আবেদন প্রত্যেক ক্ষেত্রেই শুনানীর আগে কমপক্ষে পরিস্কার ৭ দিনের নোটীশ দিতে হবে ।
আপীল বা পুনর্বিবেচনার আদেশ জানানোর কোনো সংস্থান আছে কী ?
হ্যাঁ, প্রথম বা দ্বিতীয় আপীলের আদেশ হবে লিখিত। আপীলের আদেশের নকল আপীলকারী, দায়িত্বপ্রাপ্ত
আধিকারিক বা আপীল আধিকারিক, যেমন প্রযোজ্য, তাঁকে দিতে হবে।
সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক বা আপীল আধিকারিকের উপর কোনোরূপ জরিমানা ধার্য করার সংস্থান আছে ?
(ক) এক্ষেত্রে পুনর্বিবেচনা আধিকারিকের জরিমানা ধার্য করার ক্ষমতা আছে। পুনর্বিবেচনা আধিকারিক যদি দেখেন যে দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক যথেষ্ট এবং যুক্তিসঙ্গত কারণ ছাড়াই পরিষেবা দিতে ব্যর্থ হয়েছেন, তবে তিনি দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিকের বিরুদ্ধে জরিমানার আদেশ দিতে পারেন। জরিমানার পরিমাণ ২৫০ টাকার কম বা ১০০০ টাকার বেশি হবে না ।
(খ) যদি পুনর্বিবেচনা আধিকারিক দেখেন দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক পরিষেবা দিতে দেরি করেছেন, তবে তিনি দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিকের ঐ দেরীর জন্য প্রতিদিন ২৫০ টাকা হিসাবে, কিন্তু ১০০০ টাকার বেশি নয়, এই পরিমাণ জরিমানা ধার্য করতে পারেন।
(গ) পুনর্বিবেচনা আধিকারিক যদি দেখেন যথেষ্ট ও যুক্তিসঙ্গত কারণ ছাড়াই আপীল আধিকারিক বিধিবদ্ধ সময়ের মধ্যে আপীলের নিষ্পত্তি করতে ব্যর্থ হয়েছেন, তবে তিনি আপীল আধিকারিকের উপর জরিমানা ধার্য করতে পারেন। এই জরিমানার পরিমাণ ২৫০ টাকার কম বা ১০০০ টাকার বেশি নয় ।
(ঘ) আইনানুযায়ী পুনর্বিবেচনাকারী আধিকারিক যদি এ বিষয়ে সন্তুষ্ট হন যে দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক বা আপীল
আধিকারিককে যে কাজ দেওয়া হয়েছিল বা যে কাজ তাঁর করার কথা, যথেষ্ট এবং যুক্তিসঙ্গত কারণ ছাড়াই তিনি তা করতে পারেননি, তবে চাকুরীর বিধি মোতাবেক তাঁর বিরুদ্ধে শাস্তির সুপারিশ করতে পারেন।
(ঙ) তবে দয়িত্বিপ্রাপ্ত আধিকারিক এবং আপীল আধিকারিকের উপর জরিমানা ধার্য করার আগে তাঁকে স্বপক্ষের বক্তব্য জানানোর সুযোগ দিতে হবে।
কিভাবে জরিমানা ধার্য করা হবে ?
যখন পুনর্বিবেচনা আধিকারিক জরিমানা ধার্য করবেন তখন তিনি তাঁর আদেশের একটা নকল সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের
কাছে পাঠিয়ে দোষী আধিকারিকের বেতন/সাম্মানিক/পারিশ্রমিক থেকে ধার্য জরিমানার টাকা কাটার নির্দেশ দেবেন।
দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক বা আপীল আধিকারিকের বিরুদ্ধে চাকুরীর বিধি অনুযায়ী শাস্তির সুপারিশের ক্ষেত্রে পুনর্বিবেচনা আধিকারিক তাঁর আদেশের একটি নকল সংশ্লিষ্ট নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠিয়ে দেবেন ।
আপীল আধিকারিক বা পুনর্বিবেচনা আধিকারিকের আদালতের কী কী ক্ষমতা ?
কোনো আপীল মামলা বিচার করার সময় নিম্নলিখিত ক্ষেত্রে আপীল আধিকারিক ও পুনর্বিবেচনা আধিকারিক
১৯০৮-এর কোড অফ সিভিল প্রসিডিওর অনুযায়ী দেওয়ানী আদালত যে ক্ষমতা ভোগ করে তার সমান ক্ষমতা ভোগ করবেন :
(ক) প্রয়োজনীয় তথ্য প্রমাণ দাখিল ও পরীক্ষা করার ক্ষেত্রে;
(খ) দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক ও আপীলকারীর উপর সমন জারি করতে পারেন;এবং
(গ) অন্য কোনো বিষয় ।
দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক বা আপীল আধিকারিকদের উপর পুনর্বিবেচনা আধিকারিকের ধার্য করা জরিমানার আদেশের বিরুদ্ধে কি কোনো আবেদন করার সুযোগ থাকছে ?
দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক বা আপীল আধিকারীকের উপর পুনর্বিবেচনা আধিকারিক কর্তৃক ধার্য করা জরিমানার
আদেশের বিরুদ্ধে রাজ্য সরকারের মনোনীত কোনো আধিকারিকদের কাছে আবেদন করার সুযোগ আছে। মনোনীত আধিকারিককে অন্ততঃ যুগ্ম সচিব বা সমপর্যায়ের হতে হবে। আদেশের তারিখ থেকে ৬০ দিনের মধ্যে এই আবেদন জানাতে হবে।
নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে যে আধিকারিক জনগণকে পরিষেবা দেবেন তাঁকে পুরস্কৃত করার কি কোনো ব্যবস্থা থাকছে ?
হ্যাঁ, যে সমস্ত সরকারী কর্মীর বিরুদ্ধে একটি অর্থবর্ষে এই সম্পর্কিত কোনো গাফিলতি পাওয়া যাবে না, যথাযথ আধিকারিক তাঁর জন্য অনধিক ১০০০ টাকা পুরস্কারের সুপারিশ করতে পারবেন। এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট দপ্তর বা স্বশাসিত সংস্থা ঐ সুপারিশ অনুযায়ী অর্থ ঐ কর্মীকে দিতে পারবে। ঐ অর্থের সঙ্গে প্রশংসাপত্র প্রদান করা হবে, যা তাঁর সারভিস বইয়ে নথিভুক্ত করা হবে। রাজ্য সরকার আদেশ জারি করে এই পুরস্কার প্রদানের নিয়মকানুন ঠিক করবেন।
পশ্চিমবঙ্গ জন পরিষেবা অধিকার আইন, ২০১৩-এর উল্লেখযোগ্য অংশ
রাজ্য সরকারের সমস্ত দপ্তর, স্থানীয় স্ব-শাসিত সংস্থা যেমন ত্রিস্তর পঞ্চায়েত, পৌরসভা, পৌর নিগম এবং রাজ্য সরকারের মালিকানাধীন, রাজ্য সরকার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত, রাজ্য সরকারের আর্থিক সাহায্যপ্রাপ্ত সংস্থা এবং রাজ্য সরকারের দ্বারা যথেষ্ট পরিমাণে আর্থিক সহায়তাপ্রাপ্ত অসরকারী সংস্থার ক্ষেত্রে এই আইনটি প্রযোজ্য ।
রাজ্য সরকারী দপ্তর বা উপরোক্ত সংস্থাসমূহের কাছ থেকে নাগরিক যে যে পরিষেবা পাবেন এবং ঐগুলি কোন সময়সীমার মধ্যে পাবেন তা প্রজ্ঞাপিত করা হবে।
প্রজ্ঞাপিত পরিষেবাগুলো দেবার জন্য একজন দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক থাকবেন। তাঁর কাছে নাগরিককে আবেদন করতে হবে। দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক ঐ পরিষেবা নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে আবেদনকারীকে দেবেন।
নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে পরিষেবাটি না পেলে নাগরিক আপীল আধিকারিকের কাছে আবেদন জানাতে পারবেন। আপীল আধিকারিক বিষয়টি বিবেচনা করে প্রয়োজনীয় আদেশ দেবেন ।
আপীল আধিকারিকের আদেশে সন্তুষ্ট না হলে বা সময়মতো পরিষেবাটি না পেলে নাগরিক পুনর্বিবেচনা আধিকারিকের কাছে আবার আবেদন করতে পারবেন।
পুনর্বিবেচনা আধিকারিক যদি দেখেন দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক যথেষ্ট এবং যুক্তিসংঙ্গত কারণ ছাড়াই পরিষেবাটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে দিতে পারেন নি, তবে তিনি দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিকের উপর জরিমানা ধার্য করতে পারবেন। জরিমানার পরিমাণ ২৫০ টাকার কম বা মোট ১০০০ টাকার বেশি হবে না ।
যদি পুনর্বিবেচনাকারী আধিকারিক দেখেন যে দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক পরিষেবা প্রদানে দেরী করেছেন, তবে তিনি তাঁর উপর জরিমানা ধার্য করতে পারেন। জরিমানার পরিমাণ দিন প্রতি ২৫০ টাকার কম বা মোট ১০০০ টাকার
বেশি হবে না ।
পুনর্বিবেচনাকারী আধিকারিক যদি দেখেন আপীল আধিকারিক যথেষ্ট এবং যুক্তিসঙ্গত কারণ ছাড়াই নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পরিষেবাটি দিতে পারেন নি, তবে তিনি আপীল আধিকারিকের উপর জরিমানা ধার্য করতে পারেন। জরিমানার পরিমাণ ২৫০ টাকার কম বা মোট ১০০০ টাকার বেশি হবে না ।
জরিমানা ধার্য করার আগে দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক বা আপীল আধিকারিক তাঁদের নিজ নিজ বক্তব্য জানানোর সুযোগ পাবেন।
পুনর্বিবেচনাকারী আধিকারিক যদি দেখেন যে দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক বা আপীল আধিকারিক যথেষ্ট এবং যুক্তিসঙ্গত কারণ ছাড়াই কাজটি করেন নি, তবে তিনি চাকুরীর বিধি অনুযায়ী তাঁর বিরুদ্ধে শাস্তির সুপারিশ করতে পারেন।
যে সমস্ত সরকারী কর্মীর বিরুদ্ধে একটি অর্থবর্ষে এই সম্পর্কিত কোন গাফিলতি পাওয়া যাবে না, যথাযথ আধিকারিক তাঁর জন্য অনধিক ১০০০ টাকা পুরস্কারের সুপারিশ করতে পারবেন। এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট দপ্তর বা স্বশাসিত সংস্থা ঐ সুপারিশ অনুযায়ী অর্থ ঐ কর্মীকে দিতে পারবে। ঐ অর্থের সঙ্গে প্রশংসাপত্র প্রদান করা হবে, যা তাঁর কৃত্যক বইয়ে নথিভুক্ত করা হবে। রাজ্য সরকার আদেশ জারি করে এই পুরস্কার প্রদানের নিয়মকানুন ঠিক করবেন।
To check our latest Posts - Click Here