General Knowledge Notes in BengaliHistory Notes

বক্সারের যুদ্ধ ও বক্সারের যুদ্ধের গুরুত্ব

Battle of Buxar - Significance, Causes and Aftermath

বক্সারের যুদ্ধ ও বক্সারের যুদ্ধের গুরুত্ব : প্রিয় পাঠকেরা, আজকে আমরা আলোচনা করবো ভারতের ইতিহাসের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ টপিক বক্সারের যুদ্ধ এবং সেই যুদ্ধের গুরুত্ব সম্পর্কে।

বক্সারের যুদ্ধের প্রেক্ষাপট

  • পলাশীর যুদ্ধের পর ব্রিটিশরা মীর জাফরকে বাংলার মসনদে বসায়। কিন্তু মীরজাফর ব্রিটিশদের সীমাহীন চাহিদা মেটাতে ব্যর্থ হন।
  • অন্যদিকে রাজকার্যে রবার্ট ক্লাইভের ঘন ঘন হস্তক্ষেপ মীরজাফরের পছন্দ হয়নি। মীরজাফর পেছনে পেছনে ওলন্দাজদের সাথে যোগাযোগ রাখেন।
  • এর ফলে ব্রিটিশ প্রশাসনের তরফ থেকে ভ্যান্সিটার্ট ১৭৬০ খ্রিস্টাব্দে মীরজাফরকে ক্ষমতাচ্যুত করে শর্ত সাপেক্ষে মীর কাশিমকে সিংহাসনে বসান।
  • এদিকে মীর কাশিম ছিলেন স্বাধীনচেতা। তার গৃহীত কিছু পদক্ষেপ ক্রমান্বয়ে বক্সারের যুদ্ধের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

দেখে নাও : গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক যুদ্ধ ও সাল তালিকা – PDF | Important Wars

বক্সারের যুদ্ধের কারণ

  • মীর কাশিম ইংরেজদের রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বন্ধ এবং প্রশাসনকে ব্রিটিশ প্রভাবমুক্ত করার উদ্দেশ্যে তার রাজধানী মুর্শিদাবাদ থেকে মুঙ্গেরে স্থানান্তরিত করেন।
  • তিনি নিরাপত্তার জন্য মুঙ্গেরে এবং রাজধানীর চারিদিকে পরিখা খনন করেন।
  • ইংরেজরা ছিল সামরিক পদ্ধতিতে পটু। তাই তাদের মোকাবেলা করার জন্য তিনি ইউরোপীয় সৈনিকদের প্রশিক্ষক হিসেবে রাখেন।
  • কামান, বন্দুক ইত্যাদি তৈরী করতে থাকেন এবং সামরিক ক্ষমতা বাড়াতে থাকেন।
  • বিহারের শাসনকর্তা রাম নারায়ণ ইংরেজদের প্রতি আনুগত্য দেখতে মীর কাশিম তাকে পদচ্যুত করেন ও তার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করেন।
  • ১৭১৭ সালে মুঘল সম্রাটের ফরমান বলে ইংরেজরা বিনা শুল্কে ব্যবসা করতে থাকে। এর ফলে দেশীয় বণিক ও ব্যবসাদাররা ক্ষতির মুখে পরে। মীর কাশিম দেশীয় বণিকদের ওপর থেকেও সব শুল্ক উঠিয়ে দেন। এর ফলে ইংরেজ কর্মচারীদের একচেটিয়া লাভজনক ব্যবসায় অসুবিধার সৃষ্টি হয়।
  • নবাব মীর কাশিমের এই পদক্ষেপগুলি ছিল দেশ ও জনগণের স্বার্থে কিন্তু ইংরেজদের স্বার্থবিরোধী। এর ফলে ইংরেজরা মীর কাশিমের ওপর ক্ষুব্ধ হয় এবং বক্সারের যুদ্ধ অনিবার্য হয়ে পরে।

দেখে নাও : ভারতের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিদ্রোহ / আন্দোলন / বৈপ্লবিক ঘটনাসমূহ ও নেতৃবৃন্দ

বক্সারের যুদ্ধ

  • মীর কাশেমের ইংরেজ স্বার্থবিরোধী কার্যকলাপে ক্ষুব্ধ হয়ে পাটনা কুঠিরের অধ্যক্ষ এলিস ১৭৬৩ খ্রিস্টাব্দে পাটনা দখল করে নেন।
  • মীর কাশিম ফলস্বরূপ এলিসকে পাটনা থেকে বিতাড়িত করেন।
  • ১৭৬৩ খ্রিস্টাব্দে কলকাতা কাউন্সিল নবাবের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। মেজর এডামসের নেতৃত্বে ইংরেজ বাহিনী গিরিয়া, কাটোয়া ও উদয়নালার যুদ্ধে মীর কাশিম পরাজিত হন।
  • ইংরেজরা পুনরায় মীর জাফরকে বাংলার নবাব বানান।
  • অন্যদিকে মীর কাশিম পরাজিত হয়েও হতাশ হননি। তিনি অযোধ্যার নবাব সুজাউদ্দৌলা এবং মুঘল সম্রাট শাহ আলমের সঙ্গে একত্রিত হয়ে ১৭৬৪ খ্রিস্টাব্দে বিহারের বক্সার নামক স্থানে ইংরেজদের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হন। এটি বক্সারের যুদ্ধ নামে পরিচিত।
  • মীর কাশিমের সম্মিলিত বাহিনী মেজর মুনরোর কাছে চরমভাবে পরাজিত হয়।

দেখে নাও : ১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গ আন্দোলন ও বঙ্গভঙ্গ রদ

বক্সারের যুদ্ধের ফলাফল

বক্সারের যুদ্ধে মীর কাশিমের পরাজয়ের সাথে সাথে বাংলার সার্বভৌমত্ব উদ্ধারের শেষ চেষ্টা ব্যর্থ হয়ে যায়। ইংরেজ শক্তি অপ্রতিরোধ্য গতিতে সারা ভারতে ছড়িয়ে পরে এবং ক্ষমতা বিস্তার করতে থাকে। এই কারণে ভারতের ইতিহাসে পলাশীর যুদ্ধের চেয়ে বক্সারের যুদ্ধের গুরুত্ব অনেক বেশি। বক্সারে যুদ্ধের ফলাফলগুলি নিম্নে উল্লেখ করা হল।

  • উপমহাদেশে ইংরেজদের প্রভাব-প্রতিপত্তি বৃদ্ধি পায়। বিনা বাধায় উপমহাদেশে আধিপত্য বিস্তারের সুযোগ লাভ করে।
  • ইংরেজরা অযোধ্যার নবাবের কাছ থেকে এলাহাবাদ ছিনিয়ে নেয় । অযোধ্যার নবাব সুজাউদ্দৌলা রোহিলাখন্ডে পালিয়ে যান।
  • মিরকাশিম পরাজিত হয়ে আত্মগোপন করেন, অপর দিকে দিল্লির সম্রাট শাহ আলম ইংরেজদের পক্ষে যোগ দেন।
  • মীর কাশিম ও তার মিত্র শক্তির পরাজয়ের ফলে ইংরেজদের মর্যাদা ও শক্তি বৃদ্ধি পায়।
  • এই যুদ্ধের পরে রবার্ট ক্লাইভ দিল্লির সম্রাটের কাছ থেকে আনুষ্ঠানিক ভাবে বিহার ও ওড়িশার দেওয়ানি লাভ করেন। ফলে বাংলায় ইংরেজ অধিকার আইন স্বীকৃত হয় এবং তারা অসীম ক্ষমতাশালী হয়ে উঠতে থাকে।

To check our latest Posts - Click Here

Telegram

Related Articles

Back to top button