International Court of Justice – আন্তর্জাতিক বিচারালয়
International Court of Justice
International Court of Justice – আন্তর্জাতিক বিচারালয়
প্রিয় পাঠকেরা, আজকে আমরা আলোচনা করবো International Court of Justice বা আন্তর্জাতিক বিচারালয় বা আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার আদালত নিয়ে।
সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ এই আন্তর্জাতিক বিচারালয় বা আন্তর্জাতিক আদালত। ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা ও আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে বিরোধের বিচার করার উদ্দেশ্যেই এই আদালত প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সনদের ৯২ থেকে ৯৬ নম্বর ধারায় আন্তর্জাতিক বিচারালয়ের গঠন, কার্যাবলি, এক্তিয়ার আলোচনা
করা হয়েছে। এই আদালত হচ্ছে জাতিপুঞ্জের একমাত্র বিচার বিভাগীয় সংস্থা।
Also Check : বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার সদর দপ্তর ও প্রতিষ্ঠা সাল
একনজরে আন্তর্জাতিক বিচারালয়
প্রতিষ্ঠাকাল | ১৯৪৫ সাল |
সদর দপ্তর | হেগ, নেদারল্যান্ডস |
সদস্য দেশ | ১৯৩টি |
মোট বিচারক সংখ্যা | ১৫ টি |
বিচারকদের মেয়াদকাল | ৯ বছর |
অনুমোদন কর্তা | জাতিসংঘ |
Also Check : কোন সংস্থা কোন রিপোর্ট প্রকাশ করে তার তালিকা – PDF
আন্তর্জাতিক বিচারালয়ের গঠন
জাতিপুঞ্জের মূল সনদে আলোচ্য সংস্থার গঠন বিষয়ে কিছু আলোচনা করা হয়নি। সনদের সঙ্গে সংযুক্ত আন্তর্জাতিক বিচারালয়ের স্ট্যাটিউটে এর গঠন সম্পর্কে বলা হয়েছে।
- এই স্ট্যাটিউটের (Statute) ৩নং ধারা অনুসারে ১৫ জন বিচারপতি নিয়ে এই বিচারালয় গঠিত হয়।
- বিচারকদের কার্যকালের মেয়াদ ৯ বছর।
- তিন বছর অন্তর এক-তৃতীয়াংশ বিচারক অবসর গ্রহণ করেন, সেখানে সমসংখ্যক বিচারক নির্বাচিত হন।
- এক জটিল সমান্তরাল পদ্ধতির মাধ্যমে সাধারণ সভা ও নিরাপত্তা পরিষদ কর্তৃক স্বতন্ত্রভাবে বিচারপতিরা নির্বাচিত হন।
- তবে একটি দেশ থেকে একজনের বেশি বিচারপতি নির্বাচিত হতে পারেন না।
- সাধারণত ১৫ জন বিচারপতিই আলোচনার সময় উপস্থিত থাকেন। তবে কমপক্ষে ৯ জন বিচারক উপস্থিত থাকলে বিচারকার্য চলতে পারে। উপস্থিত বিচারপতিদের সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। ভোট সমান সমান হলে সভাপতি নির্ণায়ক ভোট দিতে পারেন।
- মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার আগে বিচারকদের পদচ্যুত করা যায় না।
- বিচারকদের বেতন, ভাতা ও কাজের শর্তাদি সাধারণ সভা স্থির করে।
- রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক কাজ করা বিচারকদের ক্ষেত্রে অবৈধ।
Also Check : বিশ্বের কিছু গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক সংস্থা
আন্তর্জাতিক বিচারালয়ের ক্ষমতা ও কার্যাবলী
আন্তর্জাতিক বিচারালয়ের সংবিধান অনুসারে এই আদালতের এক্তিয়ার বা ক্ষমতাকে তিনভাগে ভাগ করা যায়, যেমন— (1) স্বেচ্ছাধীন এক্তিয়ার, (2) আবশ্যিক এক্তিয়ার ও (3) পরামর্শমূলক এক্তিয়ার।
স্বেচ্ছাধীন এক্তিয়ার: বিবদমান রাষ্ট্রগুলির সম্মতিক্রমে আন্তর্জাতিক বিচারালয়ের কাছে আনীত সকল মামলাই স্বেচ্ছাধীন এক্তিয়ারভুক্ত। এই সকল মামলা বিচারালয়ে উত্থানের পূর্বে বিবদমান রাষ্ট্রগুলিকে চুক্তি করে স্বীকার করতে হয় যে, তারা বিচারালয়ের সিদ্ধান্তকে মেনে নেবে।
আবশ্যিক এক্তিয়ার : সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের সদস্য রাষ্ট্রগুলি স্বেচ্ছায় কতকগুলি বিরোধের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক বিচারালয়ের এক্তিয়ারকে আবশ্যিক বলে স্বীকার করতে পারে। কোনো সন্ধি বা চুক্তির ব্যাখ্যা আন্তর্জাতিক আইন, আন্তর্জাতিক বাধ্যবাধকতা ভঙ্গ ও সেই সংক্রান্ত ক্ষতিপূরণ ইত্যাদি ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক আদালতের রায় বিবদমান রাষ্ট্রগুলিকে বাধ্যতামূলকভাবে মেনে নিতে হয়।
পরামর্শমূলক এক্তিয়ার : আইনগত সমস্যা সমাধানের উদ্দেশ্যে সাধারণ সভা, নিরাপত্তা পরিষদ এবং জাতিপুঞ্জের অন্যান্য সংস্থাগুলি আন্তর্জাতিক বিচারালয়ের পরামর্শ গ্রহণ করতে পারে। তবে এই পরামর্শ গ্রহণ করা বাধ্যতামূলক নয়। নেদারল্যান্ডের হেগ শহরে আন্তর্জাতিক বিচারালয়ের প্রধান দপ্তর অবস্থিত। তবে প্রয়োজন হলে যে-কোনো দেশে বিচারকরা সমবেত হয়ে বিচারকার্য করতে পারেন।
আন্তর্জাতিক আদালতের বিরুদ্ধে অভিযোগ
সাধারণত প্রচলিত ও গৃহীত নিয়মকানুনের মধ্যে থেকেই বিচারালয় বিরোধের মীমাংসা করে এবং এর সিদ্ধান্ত জাতিপুঞ্জের সভ্যরাষ্ট্রের ওপর বাধ্যতামূলক নয়। আন্তর্জাতিক বিচারালয়ের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ আছে; সেগুলি হল –
- (১) আদালতের আবশ্যিক এলাকা খুব স্পষ্ট নয়। আদালতের সিদ্ধান্ত সদস্যরাষ্ট্রগুলির ওপরে বাধ্যতামূলক নয়।
- (২) অনেক ক্ষেত্রেই আদালতের রায় বিবদমান দেশগুলি মানেনি এরকম দৃষ্টান্ত আছে। যেমন কর্ফু প্রণালীতে বিস্ফোরক দ্রব্যাদি রাখার ফলে ব্রিটিশ সমাজের ক্ষতি হয়। আন্তর্জাতিক আদালতে ব্রিটেন আলবেনিয়ার বিরুদ্ধে আপিল করে। আন্তর্জাতিক বিচারালয় আলবেনিয়াকে দোষী সাব্যস্ত করলে আলবেনিয়া আদালতের রায় মানতে অস্বীকার করে।
- (৩) বিচারালয়ের রায় অনেকক্ষেত্রে পুরোমাত্রায় নিরপেক্ষ হয়নি।
মূল্যায়ন
সমালোচকদের মতে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার সহযোগী রাষ্ট্রগুলি বিভিন্ন সময়ে আন্তর্জাতিক বিচারালয়ের কর্ম প্রক্রিয়াকে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করতে উদ্যত হয়েছে। তা সত্ত্বেও বিভিন্ন বিরোধের সুষ্ঠু মীমাংসার ক্ষেত্রে বিচারালয়ের ভূমিকাকে অস্বীকার করা যায় না।
To check our latest Posts - Click Here