পরমাণুর মৌলিক কণিকাসমূহ – ইলেক্ট্রন প্রোটন নিউট্রন
Fundamental Particles of Atoms
পরমাণুর মৌলিক কণিকাসমূহ – ইলেক্ট্রন প্রোটন নিউট্রন
প্রিয় ছাত্রেরা, আজকে আমরা আলোচনা করবো পরমাণুর মৌলিক কণিকাসমূহ নিয়ে।
মৌলিক পদার্থের ক্ষুদ্রতম কণা হল পরমাণু। এদের কোন স্বাধীন অস্তিত্ব না থাকলেও পদার্থের ক্ষুদ্রতম একক হিসেবে পরমাণুকেই ধরা হয় এবং এরা রাসায়নিক বিক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করতে পারে।
উনিশ শতকের শেষ দশকে কতগুলি উল্লেখযোগ্য আবিষ্কারের ফলে পরমাণু অবিভাজ্য এ ধারণাটির বিলুপ্তি ঘটে এবং পরমাণু কতগুলো অতিসূক্ষ্ম কণিকার সমষ্টি বলে প্রমাণিত হয়। এ সব অতিসূক্ষ্ম কণিকাকে আর বিভাজন করা যায় না এবং এরা মূল উপাদান হিসেবে সব পরমাণুতেই থাকে। এদেরকে পরমাণুর মূল কণিকা বলা হয়।
দেখে নাও : ডালটনের পরমাণুবাদ – মূল বক্তব্য, ব্যাখ্যা, গুরুত্ব ও ত্রুটি
মূলত তিন ধরণের মূল কণিকা নিয়ে পরমাণু গঠিত হয় – স্থায়ী মূল কণিকা, অস্থায়ী মূল কণিকা এবং কম্পোজিট কণিকা।
স্থায়ী মূল কণিকা : ইলেকট্রন, প্রোটন ও নিউট্রন এই তিনটি মূল কণিকা হাইড্রোজেন পরামাণু ছাড়া সব মৌলের পরমাণুতে থাকে বলে এগুলোকে স্থায়ী মূল কণিকা বলা হয়।
অস্থায়ী মূল কণিকা : কিছু কিছু মূল কণিকা কোন কোন মৌলের পরমাণুতে অস্থায়ীভাবে খুব স্বল্প সময়ের জন্য বিরাজ করে। এগুলোকে অস্থায়ী মূল কণিকা বলা হয়। অস্থায়ী মূলকনিকার সংখ্যা প্রায় ১০০। নিউট্রিনো, অ্যান্টি নিউট্রিনো, পজিট্রন, মেসন প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য অস্থায়ী মূলকণিকা।
কম্পোজিট কণিকা : স্থায়ী ও অস্থায়ী মূলকণিকা ছাড়াও আরও এক প্রকার কণিকা পরমাণুতে থাকে, যাদেরকে কম্পোজিট কণিকা (Composite particles) বলা হয়। আল্ফা কণিকা ও ডিউটেরন কণিকা ইত্যাদি কম্পোজিট কণিকার উদাহরণ।
আজকে আমরা এই পোস্টে মূলত পরমাণুর স্থায়ী কণিকা নিয়ে আলোচনা করব।
দেখে নাও : রাদারফোর্ডের পরমাণু মডেল – পরীক্ষা -প্রস্তাব – সীমাবদ্ধতা
ইলেকট্রন (Electron)
পরমাণুর স্থায়ী কণিকাগুলির মধ্যে সর্বপ্রথম আবিষ্কৃত হয় ইলেক্ট্রন। ১৮৯৭ সালে কেম্ব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জে জে থমসন একটি পরীক্ষা (ক্যাথোড রশ্মি পরীক্ষা) এর সাহায্যে ইলেকট্রনের অস্তিত্ব ও ধর্ম সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আবিষ্কার করেন।
ক্যাথোড রশ্মি পরীক্ষা (Cathode ray experiment)
গ্যাস বিদ্যুতের কুপরিবাহী হলেও কোন গ্যাসকে একটি একটি ক্ষরণ নলে নিয়ে ধীরে ধীরে গ্যাসের চাপ কমিয়ে দুই প্রান্তে উচ্চ বিভব পার্থক্য প্রয়োগ করলে ক্ষরণ নলের ক্যাথোড থেকে এক প্রকার রশ্মি নির্গত হয়। এই রশ্মিকে ক্যাথোড রশ্মি বলা হয়।
বিজ্ঞানী থমসন দেখান যে ক্যাথোড রশ্মি সরল পথে চলে তবে বিদ্যুৎ-ক্ষেত্রের প্রভাবে ক্যাথোডরশ্মি পজিটিভ বা ধনাত্নক প্রান্তের দিকে বেঁকে যায় অর্থাৎ এই রশ্মি ঋনাত্নক বা নেগেটিভ চার্জ যুক্ত। ক্যাথোড রশ্মি ধাতুর পাতলা পাতের মধ্য দিয়ে চলাচল করতে পারে। এই রশ্মি অতিশয় ক্ষুদ্র এক ধরনের কণার প্রবাহ। এই কণিকাগুলিকেই
ইলেকট্রন বলা হয়।
দেখে নাও : গ্যাসের সূত্র সমূহ – বয়েলের সূত্র, চার্লসের সূত্র ও অন্যান্য সূত্র
প্রোটন (Proton )
প্রোটনও ইলেকট্রনের মতই সব ধরনের মৌলের পরমাণুর একটি সাধারণ মূল কণিকা। প্রোটন পরমাণুর কেন্দ্র বা
নিউক্লিয়াসে থাকে। প্রোটন আবিষ্কার করেছিলেন বিজ্ঞানী গোল্ডস্টেইন ।
ক্যানাল রশ্মি পরীক্ষার সাহায্যে প্রতিটি মোলের পরমাণুতে প্রোটনের উপস্থিতি প্রমান পাওয়া যায়।
ক্যানাল রশ্মি পরীক্ষা (Canal ray experiment )
১৮৮৬ সালে বিজ্ঞানী গোল্ডস্টেইন ক্যানাল রশ্মি বা ধনাত্নক রশ্মি আবিষ্কার করেন। ক্যাথোড রশ্মি পরীক্ষা যন্ত্রে একটি সচ্ছিদ্র ক্যাথোড ব্যবহার করে গোল্ডস্টেইন লক্ষ্য করেন যে ক্যাথোডের ভিতর দিয়ে ধনাত্নক চার্জযুক্ত কণা ক্যাথোড রশ্মির বিপরীত দিকে প্রবাহিত হয়। ইলেকট্রন একক ঋণাত্নক চার্জযুক্ত হলে, এগুলো একক ধনাত্নক চার্জযুক্ত। এ কণাগুলোকেই প্রোটন বলা হয়। ক্যাথোড রশ্মির মত ক্যানাল রশ্মি ও সরল পথে প্রবাহিত হয় এবং বিদ্যুৎ ক্ষেত্রের প্রভাবে ঋণাত্মক প্রান্তের দিকে বেঁকে যায়। অর্থাৎ ক্যানাল রশ্মির আধান ধনাত্নক।
নিউট্রন (Neutron)
১৯৩২ সনে বিজ্ঞানী চ্যাডউইক একটি নিউক্লিয়ার বিক্রিয়া (বেরিলিয়াম নিউক্লিয়াসকে আলফা–কণার দ্বারা আঘাত
করে) এর সাহায্যে প্রতি মৌলের নিউক্লিয়াসে এক প্রকার তড়িৎ নিরপেক্ষ কণার উপস্থিতি আবিষ্কার করেন। এদের ভর প্রোটনের ভরের প্রায় সমান। এই তড়িৎ-নিরপেক্ষ কণাগুলিকেই নিউট্রন বলা হয়। দেখা গেছে যে নিউট্রন হাইড্রোজেন ছাড়া সকল মৌলের পরমাণুরই একটি সাধারণ মূল কণিকা।
ইলেক্ট্রন প্রোটন ও নিউট্রন সম্পর্কিত তথ্য
ইলেকট্রন প্রোটন নিউট্রন এর বৈশিষ্ট্য গুলি নিচে দেওয়া রইলো ।
বিষয় | ইলেক্ট্রন | প্রোটন | নিউট্রন |
---|---|---|---|
প্রতীক | e | p | n |
চার্জ | -1 | +1 | 0 |
ভর | 9.11 × 10-28 g | 1.672 × 10-24 g | 1.675 × 10-24 g |
প্রকৃত চার্জ | – 1.6 × 10-19 কুলম্ব | 1.6 × 10-19 কুলম্ব | 0 |
আপেক্ষিক ভর | 0.00055 | 1.00759 | 1.00897 |
অবস্থান | নিউক্লিয়াসের বাইরে | নিউক্লিয়াসে | নিউক্লিয়াসে |
আবিষ্কারক | জে জে থমসন | গোল্ডস্টেইন | চ্যাডউইক |
কিছু প্রশ্ন ও উত্তর :
ইলেকট্রন কে আবিষ্কার করেন ?
জে জে থমসন
প্রোটন আবিষ্কার করেন কে ?
ইউগেন গোল্ডস্টেইন প্রোটন আবিষ্কার করেন।
নিউট্রন আবিষ্কার করেন কে ?
নিউট্রন আবিষ্কার করেন বিজ্ঞানী চ্যাডউইক।
পরমাণুর কোন কোন অংশে ইলেকট্রন প্রোটন ও নিউট্রন থাকে?
পরমাণুর নিউক্লিয়াসের মধ্যে প্রোটন এবং নিউট্রন কণাগুলি থাকে।
একটি নিউট্রন ও একটি প্রোটন একটি ইলেকট্রনের তুলনায় কত গুণ ভারী?
একটি নিউট্রন একটি ইলেকট্রনের তুলনায় 1839 গুণ ভারী এবং একটি প্রোটন একটি ইলেকট্রনের তুলনায় 1837 গুণ ভারী।
নিউট্রনের চার্জের আধানের পরিমাণ কত ?
নিউট্রন তড়িৎ নিরপেক্ষ কণিকা। অর্থাৎ নিউট্রনের আধানের পরিমাণ ( 0 ) জিরো।
To check our latest Posts - Click Here