রাদারফোর্ডের পরমাণু মডেল – পরীক্ষা -প্রস্তাব – সীমাবদ্ধতা
Rutherford's atomic model
রাদারফোর্ডের পরমাণু মডেল – পরীক্ষা -প্রস্তাব – সীমাবদ্ধতা
প্রিয় পাঠকেরা, আজকে আমরা আলোচনা করবো রাদারফোর্ডের পরমাণু মডেল – পরীক্ষা -প্রস্তাব – সীমাবদ্ধতা নিয়ে। এর আগে আমরা ডালটনের পরমাণু মডেল নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আজকে দেখে নেবো রাদারফোর্ডের পারমাণবিক মডেল সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য।
দেখে নাও : ১১৮টি মৌলের পারমাণবিক সংখ্যা ও প্রতীক তালিকা
রাদারফোর্ডের পরীক্ষা
১৯১১ খ্রিস্টাব্দে বিজ্ঞানী রাদারফোর্ড একটি পরীক্ষা করেন (Rutherford’s Experiment) ।
তিনি একখণ্ড পাতলা সোনার পাতের ওপরে উচ্চ বেগসম্পন্ন আলফা রশ্মি বিচ্ছুরিত করেন এবং একটি অদ্ভুত ঘটনা লক্ষ্য করেন। সোনার পাতটির মধ্য দিয়ে প্রায় সব কণিকায় সোজা চলে গেলেও জমানায় কিছু কণা বেঁকে যায় এবং প্রায় ২০ হাজার কণিকার মধ্যে একটি আলফা কণিকা প্রতিহত হয়ে বিপরীত দিকে চলে আসে। এর পরীক্ষার পর রাদারফোর্ড কতগুলি সিদ্ধান্তে আসেন। এগুলি হল –
- পরমাণুর একটি গুরুভার ধনাত্নক কেন্দ্র আছে। এর আয়তন সমস্ত পরমাণুর আয়তনের তুলনায় খুবই ছোট। এই গুরুভার ধনাত্নক কেন্দ্রকেই নিউক্লিয়াস বলে।
- প্রতিটি পরমাণুতে কেবলমাত্র একটিই নিউক্লিয়াস থাকে এবং এই নিউক্লিয়াসে ইলেকট্রনের সংখ্যার সমান সংখ্যক ধনাত্নক চার্জের কণা (প্রোটন) কেন্দ্রীভূত থাকে ।
- পরমাণুর আয়তনের তুলনায় এই নিউক্লিয়াসের আয়তন অনেক ছোট।
দেখে নাও : পর্যায় সারণির মৌলের পর্যায়বৃত্ত ধর্মসমূহ
রাদারফোর্ডের পরমাণু মডেলের প্রস্তাব
রাদারফোর্ড ১৯১১ সালে তার পরীক্ষার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী একটি মডেল প্রস্তাব করেন। এটি রাদারফোর্ডের ‘সৌর পরমাণু মডেল’ বা ‘সোলার সিস্টেম অ্যাটম মডেল‘ নামে পরিচিত।
এই মডেলের প্রস্তাবগুলো হল –
- প্রত্যেক পরমাণুর কেন্দ্রে একটি নিউক্লিয়াস রয়েছে। এই নিউক্লিয়াস নিউট্রন ও প্রোটন সহযোগে গঠিত (কেবল হাইড্রোজেনের নিউক্লিয়াসে কোনো নিউট্রন নেই )। প্রোটন ধনাত্মক চার্জের বাহক এবং নিউট্রনের কোনো চার্জ নেই।
- প্রতিটি পরমাণুতে প্রোটনের সমান সংখ্যক ইলেক্ট্রন থাকে। ইলেক্ট্রনগুলি ঋণাত্মক চার্জের বাহক। পরমাণুগুলিতে প্রোটনের সমান সংখ্যক ইলেক্ট্রন থাকে। ইলেক্ট্রনের চার্জ প্রোটনের চার্জের সমান ও বিপরীত হওয়ার জন্য পরমাণুগুলি তড়িৎ নিরপেক্ষ।
- পরমাণুর অধিকাংশ ভর নিউক্লিয়াসে কেন্দ্রীভূত। অর্থাৎ পরমাণুর ভর প্রধানত নিউট্রন ও প্রোটনের ভোরের যোগফল।
- পরমাণুর দু’টি অংশ- একটি নিউক্লিয়াস বা কেন্দ্র এবং অন্যটি কেন্দ্র বহির্ভূত অঞ্চল ।
- নিউক্লিয়াসের চারিদিকে বিভিন্ন কক্ষপথে ইলেক্ট্রনগুলি প্রচন্ড গতিতে আবর্তিত হয়।
- সূর্যের চারদিকে বিভিন্ন গ্রহ যেমন ভিন্ন ভিন্ন কক্ষপথে আবর্তিত হয় তেমনি নিউক্লিয়াসের চারদিকে
- কেন্দ্রাভিমুখী ও কেন্দ্রাতিগ শক্তির মধ্যে সামঞ্জস্য রেখে ইলেকট্রনসমূহ আবর্তিত হয়।
দেখে নাও : গ্যাসের সূত্র সমূহ – বয়েলের সূত্র, চার্লসের সূত্র ও অন্যান্য সূত্র
রাদারফোর্ড মডেলের সীমাবদ্ধতা
রাদারফোর্ডের পরমাণু মডেলের কতগুলি সীমাবদ্ধতা রয়েছে। এগুলি হল –
- সৌর জগতের তড়িৎ নিরপেক্ষ গ্রহগুলি মহাকর্ষীয় শক্তির জন্য সূর্যের চতুর্দিকে ঘোরে কিন্তু পরমাণুর বিভিন্ন কক্ষপথে আবর্তনকারী ইলেকট্রনসমূহ ঋণাত্নক চার্জ বিশিষ্ট এবং এরা পরস্পরকে বিকর্ষণ করে
- যখন কোন আধানযুক্ত কণার ত্বরণ থাকে তখন উহা শক্তি বিকিরণ করে। নিউক্লিয়াসের চারদিকে ঘূর্ণনরত ইলেকট্রন সমূহের কেন্দ্রমুখী ত্বরণ থাকে। সুতরাং কক্ষপথে আবর্তনকারী ইলেকট্রনসমূহের অবিচ্ছিন্নভাবে শক্তি বিকিরণ করার কথা। এভাবে ক্রমাগত শক্তি বিকিরণ করে ধনাত্নক নিউক্লিয়াসের আকর্ষণে ইলেকট্রনের কক্ষপথ সর্পিল আকারে কমতে কমতে অবশেষে নিউক্লিয়াসে এসে ইলেকট্রন পতিত হয়ে পরমাণু ধ্বংশ হওয়ার কথা। অথচ তা হয় না।
- রাদারফোর্ড মডেলে আবর্তনরত ইলেকট্রনের কক্ষ পথের কোন আকার ও আকৃতির ধারনা দেয়া হয়নি।
To check our latest Posts - Click Here