গ্যাসের সূত্র সমূহ – বয়েলের সূত্র, চার্লসের সূত্র ও অন্যান্য সূত্র
The Gas Laws - Statements, Formulae
গ্যাসের সূত্র সমূহ – বয়েলের সূত্র, চার্লসের সূত্র ও অন্যান্য সূত্র
প্রিয় পাঠকেরা, আজকে আমরা আলোচনা করবো গ্যাসের সূত্র সমূহ এবং বিভিন্ন অবস্থায় বাস্তব গ্যাসের আচরণ সংক্রান্ত্র বিভিন্ন তথ্য নিয়ে। বয়েলের সূত্র, চার্লসের সূত্র ও অন্যান্য সূত্র ।
গ্যাসীয় পদার্থের আয়তন, তাপমাত্রা, চাপ ও মোলসংখ্যা পরস্পরের সংগে সম্পর্কযুক্ত। এর যেকোনো একটির পরিবর্তনের সাথে সাথে অন্যটিরও উল্লেখযোগ্য পরিমানে পরিবর্তিত হয়। সপ্তদশ, অষ্টাদশ ও ঊনবিংশ শতাব্দীতে
বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক গ্যাসের তাপমাত্রা, চাপ, আয়তন ও মোলসংখ্যার উপর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে কতকগুলো সূত্র
আবিষ্কার করেছেন। এ সূত্রগুলিকে গ্যাসের সূত্র বলা হয়। আজকের এই পোস্টে আমরা সেগুলি নিয়েই আলোচনা করবো।
আরও পড়ুন : বিভিন্ন গ্যাসের ব্যবহার – Uses of Different Gases – PDF
১. বয়েলের সূত্র
বিজ্ঞানী রবার্ট বয়েল বিভিন্ন গ্যাসের উপর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখেন যে গ্যাসের আয়তনের সঙ্গে প্রযুক্ত চাপের
একটি পরস্পর বিপরীত (Inverse) সম্পর্ক আছে। এ সম্পর্ক তিনি নিম্নরূপ সূত্রের সাহায্যে প্রকাশ করেন।
বয়েলের সূত্র : স্থির তাপমাত্রায় কোন নির্দিষ্ট ভরের গ্যাসের আয়তন ঐ গ্যাসের উপর প্রযুক্ত চাপের ব্যস্তানুপাতিক।
অর্থাৎ, স্থির তাপমাত্রায় কোন নির্দিষ্ট ভরের গ্যাসের আয়তন V এবং তার উপর প্রযুক্ত চাপ P হলে বয়েলের
সূত্রানুসারে,
এখানে K একটি সমানুপাতিক ধ্রুবক ।
স্থির তাপমাত্রায় কোন নির্দিষ্ট ভরের গ্যাসের চাপ ও আয়তন যথাক্রমে P1, V1; P2, V2; P3, V3 ……. Pn, Vn হলে বয়েলের সূত্রানুসারে ,
P1 V1 = P2 V2 = P3 V3 = …………..= Pn Vn = K (ধ্রুবক )
এটি বয়েলের সূত্রের গাণিতিক প্রকাশ।
আরও পড়ুন : নিউটনের গতিসূত্রসমূহ ও ব্যাখ্যা – PDF । Newtons Laws of Motion
২. চার্লসের সূত্র
স্থির চাপে তাপ প্রয়োগ করলে গ্যাসের আয়তন বেড়ে যায়। এই ঘটনা প্রত্যক্ষ করে ১৭৮৭ খ্রিষ্টাব্দে বিজ্ঞানী চার্লস তাপমাত্রার সাথে গ্যাসের আয়তনের পরিবর্তন সম্পর্কিত একটি সূত্র উপস্থাপন করেন। এই সূত্রটি চার্লসের সূত্র নামে পরিচিত।
চার্লসের সূত্র : স্থির চাপে নির্দিষ্ট ভরের যে কোন গ্যাসের আয়তন প্রতি ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রা বৃদ্ধি বা হ্রাসের ফলে 0° সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় ওই গ্যাসের আয়তনের যথাক্রমে 1/273 ভাগ বৃদ্ধি বা হ্রাস পায়।
অর্থাৎ 0° সেন্ট্রিগেড তাপমাত্রায় কোনো গ্যাসের আয়তন V0 এবং t° সেন্ট্রিগ্রেড তাপমাত্রায় গ্যাসটির আয়তন Vt হলে, বয়েলের সূত্রানুসারে স্থির তাপমাত্রায় –
$V_t\:=\:V_0 + V_0\frac{t}{273} = V_0\left(1+\frac{t}{273}\right)$
স্থির চাপে, কোনো গ্যাসের আয়তন V এবং তাপমাত্রা T কেলভিন হলে, চার্লসের সূত্রানুসারে
$\frac{V}{T}=Constant$
চার্লসের সূত্রকে কেলভিন স্কেলের ক্ষেত্রে নিম্নলিখিত ভাবেও প্রকাশ করা যায়।
স্থির চাপে নির্দিষ্ট ভরের গ্যাসের আয়তন এর কেলভিন তাপমাত্রার সমানুপাতিক।
চার্লসের সূত্রানুসারে -273° C উষ্ণতায় সকল গ্যাসের আয়তন তাত্ত্বিকভাবে শুন্য হয়ে যায়। এর জন্য এই উষ্ণতাকে পরম শুন্য উষ্ণতা বলা হয়ে থাকে।
৩. গ্যাসের চাপ, তাপ ও তাপমাত্রার সম্পর্ক
বয়েলের সূত্র থেকে আমরা পাই, স্থির তাপমাত্রায় –
P1 V1 = P2 V2
বা, $\frac{P_1}{P_2}=\frac{V_2}{V_1}$
আবার, চার্লসের সূত্রানুসারে, স্থির চাপে –
বা, $\frac{V_1}{V_2}=\frac{T_1}{T_2}$
বা, $\frac{V_1}{T_1}=\frac{V_2}{T_2}$
সুতরাং বয়েল ও চার্লসের সূত্র সমন্বয় করে আমরা লিখতে পারি –
$\frac{P_1V_1}{T_1}=\frac{P_2V_2}{T_2}$ ….. $=\frac{P_nV_n}{T_n}$
অর্থাৎ, $\frac{PV}{T}=Constant $
বা, PV = KT ………. (1)
যেকানে K একটি সমানুপাতিক ধ্রুবক।
(1) নং সমীকরণ থেকে বলা যেতে পারে, স্থির আয়তনে, P ∝ T ।
অর্থাৎ,
একটি নির্দিষ্ট ভরের গ্যাসের আয়তন স্থির রাখলে গ্যাসটির চাপ তার কেলভিন তাপমাত্রার সমানুপাতিক।
৪. অ্যাভোগাড্রোর সূত্র
1811 খ্রীষ্টাব্দে ইটালির বিজ্ঞানী অ্যাভোগাড্রো গ্যাসের আয়তন ও অণুর সংখ্যার মধ্যে সম্পর্ক বিষয়ক একটি সূত্রের অবতারনা করেন। তাঁর নামানুসারে এটাকে বলা হয় অ্যাভোগাড্রোর সূত্র।
তাত্ত্বিক ব্যাখ্যার ভিত্তিতে প্রস্তাবিত বলে এটাকে হাইপথেসিস বলা হত। কিন্তু বহুকাল ধরে ব্যবহারের সফলতা থাকায় এই হাইপথেসিসকে অ্যাভোগাড্রোর সূত্র (Avogadro’s law) বলা হয়। সূত্রটি নিম্নরূপ –
একই তাপমাত্রা ও চাপে সমান আয়তনের সকল গ্যাসে সমান সংখ্যক অণু বিদ্যমান থাকে।
এই সূত্র অনুসারে স্থির চাপ ও তাপমাত্রায় V ∝ n ,
এখানে n হলো গ্যাসের মোল সংখ্যা এবং V হলো n মোল বিশিষ্ট গ্যাসের আয়তন।
এই সূত্র থেকে আরও জানা যায় যে আদর্শ তাপমাত্রা ও চাপে সকল গ্যাসের মোলার আয়তন হলো 22.4 লিটার এবং এই পরিমাণ গ্যাসে 6.023× 1023 টি অণু থাকে।
মৌলিক পদার্থ হলে তার এক মোলে 6.023×1023 টি পরমাণু থাকবে।
অ্যাভোগাড্রো সংখ্যা কাকে বলে ?
কোন পদার্থের 1 মোল পরিমাণে যত সংখ্যক কণা (অণু বা পরমাণু) বিদ্যমান থাকে, তাকে অ্যাভোগাড্রো সংখ্যা বলে । একে N দ্বারা প্রকাশ করা হয়। উপরের আলোচনা থেকে আমরা বুঝতে পারি N= 6.023× 1023 ।
৫. গ্যাস সূত্রসমূহের সমন্বয় (Combination of gas laws)
P চাপে ও T তাপমাত্রায় যদি n মোল পরিমাণ কোন গ্যাসের আয়তন V হয় তাহলে,
- বয়েলের সূত্রানুসারে, V ∝ $\frac{1}{P}$ , যখন n ও T স্থির থাকে;
- চার্লসের সূত্রানুসারে, V ∝ T, যখন n ও P স্থির থাকে;
- অ্যাভোগাড্রোর সূত্রানুসারে, V ∝ n, যখন T ও P স্থির থাকে।
যখন n, V, T, P সব কয়টি রাশিই পরিবর্তনশীল হয়, তখন বীজগণিতের সূত্রানুসারে উপরের সূত্রসমূহ থেকে লেখা যায় –
V ∝ $\frac{nT}{P}$
বা V = $R\frac{nT}{P}$ , যেখানে R একটি ধ্রুবক।
আবার এই সমীকরণ টিকে লেখা যায়
PV =nRT ………….. (2)
এই R এর মান সকল গ্যাসের জন্য সমান। এজন্য একে সার্বজনীন গ্যাস ধ্রুবক(Universal gas constant) বা মোলার গ্যাস ধ্রুবক ধ্রুবক (molar gas constant) বা সংক্ষেপে গ্যাস ধ্রুবক বলে।
আদর্শ গ্যাস ও বাস্তব গ্যাস
PV=nRT সমীকরণটি তাত্ত্বিকভাবে সকল গ্যাসের জন্য প্রযোজ্য হলেও বাস্তব গ্যাসের ক্ষেত্রে বিচ্যুতি দেখা যায়।
আদর্শ গ্যাস কাকে বলে ?
যে সকল গ্যাস তাপমাত্রা ও চাপের সকল অবস্থায় বয়েলের ও চার্লসের সূত্র যথাযথভাবে মেনে চলে তাদেরকে আদর্শ গ্যাস (ideal gas) বলে।
বাস্তব গ্যাস কাকে বলে ?
যে সব গ্যাস PV=nRT সমীকরণটি যথাযথভাবে মেনে চলে না তারা হল বাস্তব বা প্রকৃত গ্যাস। বাস্তবে কোন গ্যাসই আদর্শ গ্যাস এই সমীকরণটি সম্পূর্ণরূপে মেনে চলে না। তাই বাস্তবে কোন গ্যাসই আদর্শ নয়। তবে অত্যন্ত নিম্নচাপ ও অতি উচ্চ তাপমাত্রায় বাস্তব গ্যাসগুলো আদর্শ গ্যাসের ন্যায় আচরণ করে।
To check our latest Posts - Click Here