বাপ্পি লাহিড়ী জীবনী – Bappi Lahiri
সুরের জগতে ছন্দপতন – প্রয়াত হলেন বিখ্যাত সঙ্গীত কম্পোজার ও গায়ক বাপ্পি লাহিড়ী। ( বাপ্পি লাহিড়ী জীবনী )
- সুরসম্রাজ্ঞী লতা মঙ্গেশকর, গীতশ্রী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের পর সমগ্র ভারতবাসীকে কাঁদিয়ে না-ফেরার জগতে চলে গেলেন বাংলা তথা ভারতীয় সঙ্গীতজগতের অন্যতম বিশিষ্ট সুরকার এবং গায়ক বাপ্পি লাহিড়ী। মুম্বইয়ের এক হাসপাতালে গতকাল গভীর রাত্রে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৯ বছর।
- গত শতকের আটের দশকে ভারতীয় চলচ্চিত্র জগতে পপ-ডিস্কো গানের যে জোয়ার এসেছিল তাঁর অন্যতম পুরোধা ছিলেন বাপ্পি লাহিড়ী। ১৯৮২ সালে তাঁর সুরারোপিত ডিস্কো ড্যান্সার সঙ্গীতপ্রেমীদের মনে থেকে যাবে চিরকাল। ২০১১ সালের ডার্টি পিকচার ছবিতে বিগত শতকের সাতের এবং আটের দশককে সঙ্গীতের মাধ্যমে তিনি উপস্থাপনা করেন দর্শকের সামনে। তিনি বুঝিয়ে দিয়েছিলেন ভারতীয় সঙ্গীত জগতের তিনি একজন কালজয়ী শিল্পী। ২০২০ সালের ‘বাগী ৩‘ ছবি তাঁর সুরারোপিত শেষ চলচ্চিত্র।
- মাত্র তিন বছর বয়সে তবলা প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বাপ্পি লাহিড়ীর যাত্রা শুরু। কালের নিয়মে সেই যাত্রা শেষ হল আজ।
প্রাথমিক জীবন :
- জন্ম : বাপ্পি লাহিড়ী ১৯৫২ সালের ২৭শে নভেম্বর পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়ির এক শাস্ত্রীয় সঙ্গীতে সমৃদ্ধ ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার আসল নাম ছিল আলোকেশ লাহিড়ী।
- পিতা ও মাতা : তার পিতা অপরেশ লাহিড়ী এবং মাতা বাঁশুরি লাহিড়ী উভয়েই শাস্ত্রীয় সঙ্গীত ও শ্যামা সঙ্গীতের শিল্পী ছিলেন। বিখ্যাত গায়ক কিশোর কুমার তার আত্মীয় ছিলেন।
- শিক্ষা : প্রাথমিকভাবে, তিনি তার পিতামাতার কাছ থেকে সঙ্গীতের প্রশিক্ষণ পেয়েছিলেন। মাত্র ৩ বছর বয়সে তিনি সঙ্গীত জগতে প্রবেশ করেন তবলার মাধ্যমে ।
কর্মজীবন
- বাপ্পি লাহিড়ী বিখ্যাত ছিলেন ডিস্কো-স্টাইলের গানের জন্য।
- ডিস্কো গানের সাথেই তার সঙ্গীত জগতে পথ চলা শুরু হয়। যদিও পরে অনেক সুরেলা গান রচনা করেছেন এবং গেয়েওছেন।
- মাত্র ১৯ বছর বয়সে তিনি পারি দেন মুম্বাইয়ে। ১৯৭৩ সালে প্রথম সঙ্গীত রচনা করেন হিন্দী ছবি “ননহা শিকারী“-র জন্য। গানটি ছিল মুকেশের গাওয়া ‘তু হি মেরা চান্দা‘। প্রচুর গান রচনা করেছেন তিনি, গান গাওয়ার পাশাপাশি গানের পরিচালক হিসাবেও তিনি প্রচুর খ্যাতি লাভ করেছেন।
- নয়া কদম, আঙ্গন কি কালি, ওয়ারদাত, ডিসকো ড্যান্সার, হাতকড়ি, নমক হালাল, মাস্টারজি, ডান্স ড্যান্স, হিম্মতওয়ালা, জাস্টিস প্রভৃতি চলচ্চিত্রে গান কম্পোজ ও গাওয়ার মাধ্যমে বাপ্পি লাহিড়ী ১৯৭০-এর দশকের শেষের দিকে, ১৯৮০-এর দশকের শেষের দিকে এবং ১৯৯০-এর দশকের শুরুতে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিলেন।
- তিনি পশ্চিমবঙ্গের একটি সিনেমা, দাদু (১৯৭৪) তে গান রচনার প্রথম সুযোগ পেয়েছিলেন যেখানে তিনি লতা মঙ্গেশকরকে তাঁর রচিত গান গাইতে বাধ্য করেন।
- তার ক্যারিয়ারের টার্নিং পয়েন্ট ছিল তাহির হোসেনের হিন্দি ছবি, জখমি (১৯৭৫), যার জন্য তিনি সঙ্গীত রচনা করেছিলেন এবং নেপথ্য (প্লেব্যাক) গায়কও হয়েছিলেন।
- তিনি কিশোর কুমার এবং মহম্মদ রফির সাথে অনেক দ্বৈত গান রচনা করেন ।
- কিশোর লতার গাওয়া ডুয়েট ফির জনম লেঙ্গে হাম ফিল্ম ফির জনম লেঙ্গে হাম গানটি রচনার জন্য তিনি প্রচন্ড খ্যাতি অর্জন করেছিলেন।
- চলতে চলতে (১৯৭৬) ছবির সমস্ত গান হিট হয়ে যায়, এইভাবে তিনি জাতীয় পর্যায়ের সঙ্গীত পরিচালক হয়ে ওঠেন।
- তিনি সুলক্ষণা পণ্ডিতের সাথে ‘জানা কাহান হ্যায়‘ দ্বৈত গান গেয়েছিলেন এর মাধ্যমে তিনি গায়ক হিসাবেও খ্যাতি লাভ করেন।
- মিঠুন চক্রবর্তী’র ডিস্কো নাচের চলচ্চিত্রগুলিতে তিনি সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে কাজ করেন।
- তার বিখ্যাত “I am a disco dancer” গানটি এক যুগ পরেও আজ লোকজনের মুখে মুখে উচ্চারিত হয়।
- ক্রমেই ভারতে “ডিস্কো কিং” হিসাবে পরিচিতি লাভ করেন তিনি।
রাজনৈতিক জীবন :
- বাপ্পি লাহিড়ী ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য ভারতীয় জনতা পার্টির (BJP) তৎকালীন জাতীয় সভাপতি রাজনাথ সিং-এর উপস্থিতিতে ৩১শে জানুয়ারী ২০১৪-এ ভারতীয় জনতা পার্টিতে যোগদান করেন।
- তাকে ২০১৪ সালে শ্রীরামপুর (লোকসভা কেন্দ্র) থেকে বিজেপি-র প্রার্থী করা হয়েছিল, কিন্তু তিনি এই ভোটে হেরে যান।
মৃত্যু :
- বাপ্পি লাহিড়ী ১৫ই ফেব্রুয়ারি ২০২২ এ ৬৯ বছর বয়সে মুম্বাইতে মারা যান।
- তাকে জুহুর ক্রিটিকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়, যেখানে তিনি রাত ১১:৪৫ মিনিটে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
- মৃত্যুর কারণ ছিল ফুসফুসের সংক্রমণ ‘অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া’।
To check our latest Posts - Click Here