NotesGeneral Knowledge Notes in Bengali

গুরুত্বপূর্ণ জৈব যৌগের প্রকৃতি ব্যবহার ও রাসায়নিক সংকেত

Important Organic Compounds : Nature, Uses & Chemical Formual

গুরুত্বপূর্ণ জৈব যৌগের প্রকৃতি ব্যবহার ও রাসায়নিক সংকেত

আজকে আমরা আলোচনা করবো গুরুত্বপূর্ণ জৈব যৌগের প্রকৃতি ও ব্যবহার নিয়ে। বিভিন্ন জৈব যৌগের সংকেত, জৈব যৌগের প্রকৃতি জৈব যৌগের ব্যবহার সম্পর্কে একটি সুস্পষ্ট ধারণা আজকের পোস্টে পেয়ে যাবে।

দেখে নাও : বিভিন্ন যৌগের সাধারণ নাম – রাসায়নিক নাম ও রাসায়নিক সংকেত

মিথেন

১৭৭৬ খ্রিস্টাব্দে মিথেন গ্যাস আবিষ্কার করেন আলেসান্দ্রো ভোল্টা। প্রাকৃতিক গ্যাসের প্রধান উপাদান হল মিথেন। মিথেনের সংকেত, প্রকৃতি ও ব্যবহার সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য নিচে দেওয়া রইলো।

সংকেত : CH4

মিথেন : রাসায়নিক গঠন

প্রকৃতি :

  • মিথেন এলকেন শ্রেণীর সরলতম যৌগ।
  • মিথেন একটু শক্তিশালী গ্রীন হাউস গ্যাস।
  • স্বাভাবিক তাপমাত্রা ও চাপে মিথেন একটি বর্ণহীন ও গন্ধহীন গ্যাস।
  • এক বায়ুমন্ডলীয় চাপে মিথেনের স্ফুটনাঙ্ক হচ্ছে -১৬১° সেলসিয়াস।
  • বায়ুর চেয়ে হালকা এই গ্যাস ।
  • মিথেন মার্স গ্যাস নামে সুপরিচিত।
  • জলাভূমিতে বিভিন্ন জৈব পদার্থ পচে মিথেন গ্যাস উৎপন্ন হয়।

ব্যবহার :

  • মিথেন গ্যাস জ্বালানিরূপে ব্যবহৃত হয়।
  • কার্বন ব্ল্যাক, গ্রামোফোনের রেকর্ড, জুতোর কালি, রবার, ছাপার কালি, পেন্ট প্রভৃতি তৈরী করতে মিথেন ব্যবহৃত হয়।
  • জৈব সার প্রস্তুতিতে মিথেন ব্যবহার করা হয়।
  •  CH4 থেকে অ্যাসিটিলিন গ্যাস উৎপাদন করা হয়।

দেখে নাও : কাঁচকে রঙিন করতে প্রয়োজনীয় রাসায়নিক তালিকা

ইথিলিন

ইথিলিন ইথিন নামেও পরিচিত। এটি একটি এলিফ্যাটিক হাইড্রোকার্বনইথিলিন -এর সংকেত, প্রকৃতি ও ব্যবহার সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য নিচে দেওয়া রইলো।

সংকেত : C2H4 ( CH2=CH2 )

ইথিলিন
ইথিলিন – রাসায়নিক গঠন

প্রকৃতি :

  • স্বাভাবিক তাপমাত্রায় গ্যাসীয়।
  • ইথিন ইথেনের ন্যায় অপোলার জৈব দ্রাবকে দ্রবনীয় কিন্তু পোলার দ্রাবক যেমন জলে অদ্রবনীয়।
  • ইথিলিন একটি বর্ণহীন গ্যাস।
  • মৃদু মিষ্টি গন্ধযুক্ত গ্যাস।
  • ইথিলিন একটি অ্যালিফ্যাটিক হাইড্রোকার্বন।
  • এই গ্যাসটি প্রায় বায়ুর সমান ভারী এবং জলে সামান্য দ্রাব্য। 

ব্যবহার :

  • ইথিলিন গ্যাসের প্রধান ব্যবহার হলো ফল ব্যবসায়ে। কৃত্রিমভাবে ফলের সংরক্ষণ অর্থাৎ পচন থেকে রক্ষা করার জন্য এবং কাঁচা ফল পাকাতে এই গ্যাস ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
  •  ইথাইল অ্যালকোহল, ডাই অক্সেন, ইথিলিন ডাই ক্লোরাইড, ইথিলিন গ্লাইকল প্রভৃতি প্রস্তুতিতে ইথিলিনের ব্যবহার হয়।
  • পলিথিন বা পলিইথিলিন প্লাস্টিক প্রস্তুতিতে ব্যবহার করা হয়।
  • বিশ্ব যুদ্ধের সময় মাস্টার্ড গ্যাস নামক এক বিষাক্ত গ্যাস প্রস্তুতিতে ইথিলিন ব্যবহার করা হয়েছিল।
  • শল্য চিকিৎসায় চেতনানাশক হিসেবে ইথিলিন ব্যবহার করা হয়।
  • কৃত্রিম রাবার প্রস্তুতিতে ইথিলিন ব্যবহার করা হয়।

দেখে নাও : বিভিন্ন মৌল সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য – PDF

অ্যাসিটিলিন

অ্যাসিটিলিন হলো আসলে ইথাইন। এটি একটি অসম্পৃক্ত হাইড্রোকার্বন।

অ্যাসিটিলিন -এর সংকেত, প্রকৃতি ও ব্যবহার সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য নিচে দেওয়া রইলো।

সংকেত : C2H2

অ্যাসিটিলিন
অ্যাসিটিলিন : রাসায়নিক গঠন

প্রকৃতি :

  • ইথাইন বা অ্যাসিটিলিন একটি অসম্পৃক্ত হাইড্রোকার্বন।
  • এটি বর্ণহীন ও মিষ্টি গন্ধযুক্ত গ্যাস।
  • এই গ্যাসটি বাতাসের চেয়ে সামান্য হালকা এবং জলে অল্প দ্রাব্য।

ব্যবহার :

  • ইস্পাত বা অন্যান্য ধাতু ঝালাই ওয়েল্ডিং এর কাজ এবং কাটার কাজে ব্যবহৃত অক্সি এসিটিলিন শিখা প্রস্তুতিতে ব্যবহৃত হয়।
  • ইথাইনকে বিভিন্ন ধরনের পলিমার উৎপাদনে কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
  • কৃত্রিম রাবার, রং, প্লাস্টিক তৈরিতে অ্যাসিটিলিন বা ইথাইন গ্যাস ব্যবহৃত হয়।
  • চেতনানাশক পদার্থ হিসেবে এসিটিলিন ব্যবহৃত হয়।
  • অ্যাসিটালডিহাইড, অ্যাসিটিক অ্যাসিড, অ্যাসিটোন ইত্যাদি ও দ্রাবক রূপে ব্যবহৃত ওয়েস্টর্ন, ওয়েস্ট সল প্রভৃতি প্রস্তুতিতে ইথাইন ব্যবহৃত হয়।
  • উজ্জ্বল আলো উৎপাদনের জন্য কার্বাইড বাতিতে ব্যবহৃত হয়।

ক্লোরোফর্ম

ক্লোরোফর্ম একটি জৈব যৌগ যেটি বহুল পরিচিত চেতনানাশক হিসেবে।

ক্লোরোফর্মের -এর সংকেত, প্রকৃতি ও ব্যবহার সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য নিচে দেওয়া রইলো।

সংকেত : CHCl3

ক্লোরোফর্ম
ক্লোরোফর্ম : রাসায়নিক গঠন

প্রকৃতি :

  • এটি বর্ণহীন, মিষ্টি গন্ধযুক্ত, ঘন তরল।
  • এটি একটি বিষাক্ত পদার্থ।
  • জলের তুলনায় ভারী ক্লোরোফর্ম।

ব্যবহার :

  • বর্তমানে ক্লোরোফর্মের প্রধান ব্যবহার হল ক্লোরোডাইফ্লুরোমিথেন উৎপাদনে যা টেট্রাফ্লুরোইথিলিন এর কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
  • শল্য চিকিৎসায় চেতনানাশক হিসাবে ক্লোরোফর্ম ব্যবহৃত হয়। 
  • হিমায়ক রূপে ক্লোরোফর্ম ব্যবহার করা হয়।
  • রবার, চর্বি, মোম, তেল প্রভৃতির দ্রাবকরূপে ক্লোরোফর্ম ব্যবহৃত হয়। 
  • পরীক্ষাগারে বিকারক রূপে ব্যবহার করা হয়।
  • পচনশীল উদ্ভিদ ও প্রাণী সংরক্ষণে ব্যবহার করা হয়।

ইথাইল অ্যালকোহল

ইথানল, যা ইথাইল অ্যালকোহল নামেও পরিচিত, এক প্রকারের জৈব যৌগ।

ইথাইল অ্যালকোহল -এর সংকেত, প্রকৃতি ও ব্যবহার সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য নিচে দেওয়া রইলো।

সংকেত : CH3-CH2-OH, বা C2H5OH বা C2H6O।

ইথাইল অ্যালকোহল
ইথাইল অ্যালকোহল : রাসায়নিক গঠন

প্রকৃতি :

  • ইথাইল অ্যালকোহল মিষ্টি গন্ধ যুক্ত একটি বর্ণহীন উদ্বায়ী তরল।
  • এটি স্বাধী ও সামান্য বিষাক্ত।

ব্যবহার :

  • জৈব সংশ্লেষণে ব্যবহৃত হয়
  • অধিকাংশ মদ এর প্রধান উপাদান।
  • গালা, রজন, রবার, সুগন্ধী দ্রব্য প্রভৃতি জৈব যৌগের দ্রাবক রূপে।
  • বিভিন্ন রকম রং এবং বার্নিশ শিল্পে ব্যবহার হয়।
  • জীবাণুনাশক হিসাবে ব্যবহার করা হয়।

ভিনিগার

ভিনিগার অ্যাসিটিক অ্যাসিডের (CH3COOH) ৬-১০% (৪-১০% স্বল্প পরিমান বিজ্ঞানীর মতে) জলের মিশ্রণে তৈরি ।

ভিনিগার-এর সংকেত, প্রকৃতি ও ব্যবহার সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য নিচে দেওয়া রইলো।

অ্যাসিটিক অ্যাসিড
অ্যাসিটিক অ্যাসিড : রাসায়নিক গঠন

প্রকৃতি :

  • ভিনিগার গন্ধযুক্ত বর্ণহীন তরল।
  • অম্লিক প্রকৃতির।
  • জলে দ্রাব্য।

ব্যবহার :

  • রান্নার বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভিনিগার ব্যবহৃত হয়।
  • মাছ মাংস সংরক্ষণে ব্যবহৃত হয়।
  • সিটেট লবণ, অ্যাসপিরিন, সেলুলোজ অ্যাসিটেট জাতীয় প্লাস্টিক প্রভৃতি তৈরি করতে ব্যবহার হয়।
  • গৃহস্থালী পরিষ্কার, পুড়ে যাওয়া, চিকিৎসায় পথ্য ইত্যাদি বহুবিধ ক্ষেত্রে ভিনিগার ব্যবহৃত হয়।

ন্যাপথালিন

ন্যাপথালিন সরলতম পলিসাইক্লিক অ্যারোমেটিক হাইড্রোকার্বন।

ন্যাপথালিন-এর সংকেত, প্রকৃতি ও ব্যবহার সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য নিচে দেওয়া রইলো।

সংকেত : C10H8

প্রকৃতি :

  • ন্যাপথালিন সাদা দানাদার স্ফটিক এবং উগ্র গন্ধযুক্ত।
  • জলে অদ্রাব্য হলেও বেঞ্জিন, ইথার প্রভৃতি জৈব দ্রাবকে দ্রবীভূত হয়।
  • ন্যাপথালিন একটি উদ্বায়ী পদার্থ।

ব্যবহার :

  • ন্যাপথালিন জীবাণু নাশক ও পতঙ্গ নাশক হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
  • এটি একটি উর্ধ্বপাতিত পদার্থ ।
  • এটা সরলতম পলিসাইক্লিক অ্যারোমেটিক হাইড্রোকার্বন।
  • কাপড় ,সিল্ক কাগজ প্রভৃতির রং প্রস্তুতিতে ন্যাপথালিন ব্যবহার করা হয়। 

ফেনল

ফেনল কার্বলিক অ্যাসিড হিসেবেও পরিচিত।

ফেনল -এর সংকেত, প্রকৃতি ও ব্যবহার সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য নিচে দেওয়া রইলো।

সংকেত : C6H5OH

ফেনল
ফেনল : রাসায়নিক সংকেত

প্রকৃতি :

  • এটি সাদা দানাদার কঠিন পদার্থ এবং সহজে উদ্বায়ী।
  • ফেনলে হাইড্রোক্সিল মূলক একটি অসম্পৃক্ত অ্যারোমেটিক হাইড্রোকার্বন।
  • ফেনল জলে দ্রবণীয়।
  • ফেনল দুর্বল অ্যাসিড এবং উচ্চ pH এ ফেনোলেট অ্যানায়ন প্রদান করে।

ব্যবহার :

  • মোট উৎপাদিত ফেনলের দুই তৃতীয়াংশ প্লাস্টিকের কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
  • অ্যান্টিসেপটিক ডেটল প্রস্তুতিতে ও জীবানু নাশক হিসেবে পায়খানা,প্রস্রাবখানায় ।
  • ছত্রাকনাশক হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

ইউরিয়া

ইউরিয়া কার্বামাইড নামেও পরিচিত। পরীক্ষাগারে প্রস্তুত প্রথম জৈব যৌগ হচ্ছে ইউরিয়া। ১৮২৮ সালে জার্মান রসায়নবিদ ফ্রিডরিশ ভোলার প্রথম ইউরিয়া প্রস্তুত করেন।

ইউরিয়ার সংকেত, প্রকৃতি ও ব্যবহার সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য নিচে দেওয়া রইলো।

সংকেত : CO(NH2)2

ইউরিয়া
ইউরিয়া : রাসায়নিক গঠন

প্রকৃতি :

  • ইউরিয়া কঠিন, বর্ণহীন, গন্ধহীন জৈব যৌগ।
  • ইউরিয়া জলে দ্রাব্য।

ব্যবহার :

  • ইউরিয়া একটি বহুল ব্যবহৃত সার। জমিতে নাইট্রোজেন এর পরিমাণ বারানোর কাজে সাহায্য করে।
  • প্লাস্টিক,আঠা জাতীয় পদার্থ প্রস্তুতিতে।
  • শিল্প-কারখানায় ইউরিয়া থেকে ফরমালডিহাইড প্লাস্টিক, ঔষধপত্র ও সার প্রস্তত করা হয়ে থাকে।
  • কালাজ্বরের ওষুধ, ঘুমের ওষুধ প্রস্তুত করতে ইউরিয়া ব্যবহার করা হয়।

To check our latest Posts - Click Here

Telegram

Related Articles

Back to top button