প্রোক্যারিওটিক ও ইউক্যারিওটিক কোশের পার্থক্য
Difference between Prokaryotic and Eukaryotic Cells
প্রোক্যারিওটিক ও ইউক্যারিওটিক কোশের পার্থক্য :
এই পোস্টে আজ আমরা আলোচনা করবো দুই ধরণের কোশ অর্থাৎ প্রোক্যারিওটিক কোশ (আদিকোশ) ও ইউক্যারিওটিক কোশ (আদর্শ কোশ) সম্পর্কে কিছু তথ্য ও তাদের মধ্যে পার্থক্য। প্রোক্যারিওটিক ও ইউক্যারিওটিক কোশের পার্থক্য ।
প্রোক্যারিওটিক ও ইউক্যারিওটিক কোষের পার্থক্য
Also Check : উদ্ভিদ ও প্রাণীকোষের পার্থক্য
কোশ কি?
- কোশ হল জীবদেহের ক্ষুদ্রতম জীবিত একক। একটি কোশ বিভিন্ন জৈবিক ক্রিয়াকলাপের মাধ্যমে একক ভাবে জীবিত থাকতে পারে, তাই কোশকে জীবের একক বলা হয়।
- মানুষ এবং বেশিরভাগ জীব বহুকোশী হলেও বিভিন্ন এককোশী জীবও রয়েছে যেমন ব্যাক্টেরিয়া, বিভিন্ন শৈবাল ইত্যাদি। এর থেকে স্পষ্ট বোঝা যায় একটি কোশ একক ভাবে জীবিত।
Also Check : উদ্ভিদ রাজ্যের শ্রেণীবিন্যাস- Classification of Plant Kingdom
প্রোক্যারিওটিক ও ইউক্যারিওটিক কোশ :
তাহলে আমরা জানলাম কোশ কি; কিন্তু কোশ তো কেবল এক রকমের হয়না, যেমন মানুষের একটি কোশ এবং এককোশী ব্যাকটেরিয়ার কোশ এক নয়।
এই কথা মাথায় রেখে বিজ্ঞানী ডগহার্টি কোশ ও কোশের নিউক্লিয়াসের গঠনগত বৈশিষ্টের ওপর ভিত্তি করে কোশকে ২ টি ভাগে ভাগ করেন। যথা –
- প্রোক্যারিওটিক কোশ বা আদি কোশ।
- ইউক্যারিওটিক কোশ বা আদর্শ কোশ।
প্রোক্যারিওটিক কোশ :
যে সমস্ত কোশের আদর্শ ও সংগঠিত নিউক্লিয়াস থাকেনা (অর্থাৎ নিউক্লিয়াসে নিউক্লিয় পর্দা, নিউক্লিওপ্লাজম, নিউক্লিওলাস এবং নিউক্লিয় জালক অনুপস্থিত), ক্রোমোজোম গঠিত হয়না, কোশপর্দা ঘেরা কোনো কোশ অঙ্গাণু থাকেনা তাদের আদি কোশ বা প্রোক্যারিওটিক কোশ বলে।
উদাহরণ : নীলাভ সবুজ শৈবাল ও ব্যাকটেরিয়ার কোশ।
Also Check : হৃৎপিণ্ডের গঠন ও কার্যপ্রণালী । Heart : Anatomy and Function
ইউক্যারিওটিক কোশ :
যে সমস্ত কোশের আদর্শ ও সংগঠিত নিউক্লিয়াস থাকে (অর্থাৎ নিউক্লিয়াসে নিউক্লিয় পর্দা, নিউক্লিওপ্লাজম, নিউক্লিওলাস এবং নিউক্লিয় জালক উপস্থিত), ক্রোমোজোম ক্ষারীয় প্রোটিনযুক্ত এবং কোশপর্দা ঘেরা একাধিক কোশ-অঙ্গাণু বর্তমান তাদের আদর্শ কোশ বা ইউক্যারিওটিক কোশ বলে।
উদাহরণ : সমস্ত উন্নত উদ্ভিদ ও প্রাণীকোশই ইউক্যারিওটিক কোশ।
প্রোক্যারিওটিক কোশ ও ইউক্যারিওটিক কোশের পার্থক্য :
প্রোক্যারিওটিক ও ইউক্যারিওটিক কোশের পাথর্ক্য গুলি দেওয়া রইলো ।
বিষয় | প্রোক্যারিওটিক কোশ | ইউক্যারিওটিক কোশ |
---|---|---|
ক্রোমোজোমের উপস্থিতি | প্রোক্যারিওটিক কোশে সাধারণত ক্রোমোজোম থাকে না। অর্থাৎ ক্রোমোজোম গঠিত হয়না। | ইউক্যারিওটিক কোশে ক্রোমোজোম থাকে। অর্থাৎ কোশ বিভাজনের সময় ক্রোমোজোম গঠিত হয়। |
পর্দা ঘেরা কোশ-অঙ্গাণু | কোনো রকমের পর্দা ঘেরা কোশ-অঙ্গাণু থাকেনা। | কোশপর্দা বেষ্টিত কোশ-অঙ্গাণু (যেমন – মাইটোকন্ড্রিয়া, লাইসোজোম, গলগিবডি ইত্যাদি ) |
নিউক্লিয়াসের প্রকৃতি | প্রোক্যারিওটিক কোশের নিউক্লিয়াসে নিউক্লিওলাস, নিউক্লিওজালক ও নিউক্লিওপর্দা থাকেনা। নিউক্লিয়াসটি কেবল DNA দিয়ে তৈরী। এক কথায় এর নিউক্লিয়াস আদি প্রকৃতির। | ইউক্যারিওটিক কোশের নিউক্লিয়াস আদর্শ প্রকৃতির অর্থাৎ, এর নিউক্লিয়াসে নিউক্লিওলাস, নিউক্লিওজালক, নিউক্লিওপর্দা বর্তমান। |
কোশ বিভাজন | এই কোশে অ্যামাইটোসিস পদ্ধতিতে কোশ বিভাজন ঘটে। | এক্ষেত্রে মাইটোসিস ও মিয়োসিস (প্রজননের ক্ষেত্রে) পদ্ধতিতে কোষ বিভাজন ঘটে। |
কোশ প্রাচীরের উপস্থিতি | প্রোক্যারিওটিক কোশে কোশপ্রাচীর থাকে এবং ইহার মুখ্য উপাদান পেপটাইডোগ্লাইক্যান বা মিউকোপেপটাইড। | এক্ষেত্রে সাধারণত উদ্ভিদ কোশে কোশপ্রাচীর থাকে, প্রাণী কোশে থাকেনা। এবং এই কোশপ্রাচীরের মুখ্য উপাদান হল সেলুলোজ। |
রাইবোজোমের প্রকৃতি | এই কোশে 70S (50S+30S) প্রকৃতির রাইবোজোম থাকে। | এই কোশের ক্ষেত্রে 80S (40S+60S) প্রকৃতির ক্রোমোজোম বর্তমান। |
ভ্যাকুওলের উপস্থিতি | এই কোশে ভ্যাকুওল (কোশগহ্বর) থাকেনা। | এক্ষেত্রে উদ্ভিদ কোশে ভ্যাকুওল থাকলেও প্রাণী কোশে সাধারণত থাকেনা বা অতি ক্ষুদ্র পরিমাপের থাকে। |
কোশের আকার | প্রোক্যারিওটিক কোশের আকার তুলনামূলকভাবে ছোট (০.১ থেকে ৫ মাইক্রোমিটার)। | ইউক্যারিওটিক কোশের আকার তুলনামূলকভাবে প্রোক্যারিওটিকের চেয়ে বড় (১০ থেকে ১০০ মাইক্রোমিটার)। |
DNA-এর গঠন | এই কোশে চক্রাকার DNA দেখা যায়। | এক্ষেত্রে রৈখিক DNA দেখা যায়। |
Also Check – কোষ বিভাজন কাকে বলে? প্রকারভেদ – Cell Division
প্রোক্যারিওটিক কোশের বৈশিষ্ট্য
- ক্রোমোজোম সাধারণত থাকে না।
- রাইবোজোম 70S প্রকৃতির এবং ক্ষুদ্র।
- কোষ বিভাজন অ্যামাইটোসিস পদ্ধতিতে ঘটে
- DNA প্রোটিনের সঙ্গে সংযুক্ত ভাবে থাকে না অর্থাৎ নগ্ন প্রকৃতির
- আদি কোষে পর্দাঘেরা কোন কোষ অঙ্গাণু থাকে না
ইউক্যারিওটিক কোশের বৈশিষ্ট্য
- ক্রোমোজোম সাধারণত থাকে।
- রাইবোজোম 80S প্রকৃতির এবং বড়।
- কোষ বিভাজন মাইটোসিস এবং মিয়োসিস পদ্ধতিতে ঘটে।
- কোষের পর্দাঘেরা কোষ অঙ্গাণু থাকে।
- DNA প্রোটিনের সঙ্গে সংযুক্ত ভাবে থাকে।
To check our latest Posts - Click Here