উদ্ভিদ রাজ্যের শ্রেণীবিন্যাস- Classification of Plant Kingdom
Classification of Plant Kingdom
উদ্ভিদ রাজ্যের শ্রেণীবিন্যাস – Classification of Plant Kingdom
উদ্ভিদ আমাদের বেঁচে থাকার মূল রসদ “খাদ্য” এবং “প্রাণবায়ু”-এর যোগান দেয়। সেই পরম বন্ধু উদ্ভিদই আমাদের আজকের আলোচনার বিষয়। অর্থাৎ আজকের পোস্টে উদ্ভিদ রাজ্যের শ্রেণীবিন্যাসের বিষয়ে কিছু তথ্য জেনে নেবো আমরা। ( উদ্ভিদ রাজ্যের শ্রেণীবিন্যাস । Classification of Plant Kingdom, udbhid rajyer srenibinyash, udbhid rajyer bhag । )
রবার্ট হার্ডিং হুইটেকারের ৫ রাজ্যের জীবেদের শ্রেণীবিভাগ :
R.H. হুইটেকার জীবিত প্রাণীর জন্য পাঁচ রাজ্যের শ্রেণীবিভাগ করেছিলেন। সেলুলার গঠন, পুষ্টির পদ্ধতি, দেহের গঠন, প্রজনন, ফাইলোজেনেটিক সম্পর্ক ইত্যাদির মতো একাধিক বৈশিষ্ট্যের উপর ভিত্তি করে তিনি জীবন্ত প্রাণীদের শ্রেণীবদ্ধ করেছিলেন। এই পাঁচটি রাজ্য ছিল মোনেরা, প্রোটিস্টা, ছত্রাক, প্লান্টি এবং অ্যানিমেলিয়া।
আমাদের আলোচনার বিষয় প্লান্টি কিংডম অর্থাৎ উদ্ভিদ রাজ্য।
আরও দেখে নাও : উদ্ভিদ ও প্রাণীকোষের পার্থক্য
উদ্ভিদ রাজ্য (Plantae Kingdom) :
- উদ্ভিদ রাজ্যে সমস্ত রকমের উদ্ভিদগুলি অন্তর্ভুক্ত।
- তারা ইউক্যারিওটিক, বহুকোষী এবং অটোট্রফিক জীব (নিজেদের খাদ্য নিজেরাই তৈরী করে)।
- উদ্ভিদ কোষে একটি শক্ত কোষ প্রাচীর থাকে।
- উদ্ভিদে ক্লোরোপ্লাস্ট এবং ক্লোরোফিল রঞ্জক রয়েছে, যা সালোকসংশ্লেষণের জন্য প্রয়োজন।
উদ্ভিদ রাজ্যের বৈশিষ্ট্য :
উদ্ভিদ রাজ্যের নিম্নলিখিত বৈশিষ্ট্যগুলি রয়েছে:
- উদ্ভিদ রাজ্যের জীব গুলি (অর্থাৎ উদ্ভিদ) গমনে অক্ষম (ব্যতিক্রম রয়েছে)।
- এরা এদের নিজেদের খাদ্য নিজেরাই তৈরি করে তাই এদের অটোট্রফ বলা হয়।
- এরা অযৌন জনন বা অঙ্গজ জনন পদ্ধতিতে বংশবিস্তার করে।
- এরা বহুকোশী ইউক্যারিওটিক প্রকৃতির।
- উদ্ভিদ কোশে প্লাস্টিডে উপস্থিত ক্লোরোফিল নামক সালোকসংশ্লেষিত রঞ্জক থাকে।
- এক স্থানে আঁটকে থাকা, প্রজনন, অবলম্বন এবং সালোকসংশ্লেষণের জন্য তাদের দেহ ও কোশের বিশেষ কাঠামো বা গঠন বা অঙ্গ (organelle) রয়েছে।
আরও দেখে নাও : প্রাণী ও উদ্ভিদের শ্বাসযন্ত্র তালিকা – List of Respiratory Organs
উদ্ভিদ রাজ্যের শ্রেণীবিভাগ :
একটি উদ্ভিদ রাজ্যকে আরও কতগুলি উপবিভাগে অর্থাৎ পর্বে (Phylum) শ্রেণীবদ্ধ করা হয়। নিম্নলিখিত বৈশিষ্টের উপর ভিত্তি করে এই শ্রেণীবিভাগ করা হয় :
- উদ্ভিদের দেহ: উদ্ভিদের দৈহিক গঠনের ভিত্তিতে উদ্ভিদের শ্রেণীবিভাগ করা যায়। মূল, কান্ড, পাতা ইত্যাদির গঠনের ভিত্তিতে এই শ্রেণীবিভাগ হয়।
- সংবহনতন্ত্র : জল এবং অন্যান্য পদার্থ পরিবহনের জন্য সংবহন তন্ত্রের উপস্থিতি বা অনুপস্থিতির ওপর ভিত্তি করে। যেমন – ফ্লোয়েম এবং জাইলেম।
- বীজের গঠন : ফুল ও বীজের উপস্থিতি বা অনুপস্থিতি এবং বীজ নগ্ন বা ফলের মধ্যে আবদ্ধ থাকা ইত্যাদি বিষয়ের উপর ভিত্তি করেও শ্রেণীবিভাগ করা হয়।
উপরে উল্লিখিত বৈশিষ্টের ভিত্তিতে উদ্ভিদ রাজ্যকে পাঁচটি উপবিভাগে বা পর্বে শ্রেণীবদ্ধ করা হয়। এগুলি হল :
- থ্যালোফাইটা (শৈবাল)
- ব্রায়োফাইটা (মস)
- টেরিডোফাইটা (ফার্ন)
- জিমনোস্পার্ম (ব্যক্তবীজী)
- অ্যানজিওস্পার্ম (গুপ্তবীজী)
থ্যালোফাইটা :
- এদের দেহ থ্যালাস আকৃতির (অর্থাৎ পত্রাকার) হয় তাই এদের থ্যালোফাইটা বলা হয়।
- এরা আদিম প্রকৃতির উদ্ভিদ এবং এদের দেহ থেকে কান্ড, শিকড় এবং পাতা আলাদা করা যায়না।
- এরা উদ্ভিদের আদীমতম রূপ।
- এরা মূলত জলে জন্মায়।
উদাহরণ : ইউলোথ্রিক্স, ক্লাডোফোরা , স্পাইরোগাইরা, ডায়াটম ইত্যাদি। .
ব্রায়োফাইটা :
- ব্রায়োফাইট হল স্থলজ উদ্ভিদ কিন্তু এরা “উদ্ভিদ রাজ্যের উভচর” হিসাবে পরিচিত কারণ এদের প্রজননের জন্য জলের প্রয়োজন হয়। আর্দ্র স্থলজ পরিবেশে এরা জন্মায়।
- এরা মূলত বহুকোষী অপুষ্পক উদ্ভিদ।
- এদেরও মূল-কান্ড-পাতা আলাদা করা যায়না তবে এই জাতীয় উদ্ভিদে নরম কান্ড ও পাতার মত অংশ লক্ষ্য করা যায়। মূলের পরিবর্তে এদের দেহে এককোশী রাইজয়েড পরিলক্ষিত হয়।
- মসজাতীয় উদ্ভিদের (ব্রায়োফাইটা) জাইলেম-ফ্লোয়েম সংবহন কলাতন্ত্র দেখা যায়না পরিবর্তে এদের দেহ প্যারেনকাইমা কলা দ্বারা গঠিত।
- এদের জীবনচক্রে গ্যামেটোফাইট ও স্পোরোফাইট দশা পরিলক্ষিত হয়।
উদাহরণ : মার্চেন্টিয়া, ফিউনারিয়া, স্প্যাগনাম, জাভা মস ইত্যাদি।
টেরিডোফাইটা :
- টেরিডোফাইটার মূল-কান্ড-পাতা সহ এক আদর্শ উদ্ভিদ সদৃশ গঠন রয়েছে।
- জল এবং অন্যান্য পদার্থ সঞ্চালনের জন্য এদের দেহে একটি জাইলেম-ফ্লোয়েম সংবহণতন্ত্র রয়েছে।
- তবে এরা অপুষ্পক প্রকৃতির হয় অর্থাৎ এদের ফুল-ফল কিছু হয়না।
- এই জাতীয় উদ্ভিদের সুস্পষ্ট জনুক্রম পরিলক্ষিত হয়। স্পোরোফাইটিক (2n) ও গ্যামেটোফাইটিক (n) জনুর মাধ্যমে এদের জীবন চক্র সম্পন্ন হয়।
উদাহরণ : সেলাগিনেলা, ইকুইজিটাম, টেরিস ইত্যাদি।
জিমনোস্পার্ম :
- জিমনোস্পার্ম অর্থাৎ ব্যক্তবীজী উদ্ভিদেরও মূল-কান্ড-পাতা, জাইলেম-ফ্লোয়েম সংবহনতন্ত্র সবই রয়েছে।
- এরা সপুষ্পক প্রকৃতির হয়। তবে এজাতীয় উদ্ভিদের ফুলের গর্ভাশয় না থাকায় ফল উৎপন্ন হয়না এবং বীজ নগ্ন অবস্থাতেই থাকে। তাই এদের আবার নগ্নবীজী উদ্ভিদও বলা হয়।
- এরা বৃক্ষ্যজাতীয়, চিরসবুজ ও বহুবর্ষজীবী প্রকৃতির হয়।
- এদের জীবনচক্রে হেটেরোমরফিক জনুক্রম বিদ্যমান।
- এদের ডিম্বকে দ্বিনিষেক হয়না তাই এদের শস্য n প্রকৃতির (হ্যাপ্লয়েড)।
- মাইক্রোস্পোর (পুংরেণু) ও মেগাস্পোর (স্ত্রীরেণু) তৈরির মাধ্যমে এরা প্রজনন সম্পন্ন করে।
উদাহরণ : পাইন গাছ, সাইকাস, এফিড্রা ইত্যাদি।
অ্যানজিওস্পার্ম :
- অ্যানজিওস্পার্ম অর্থাৎ গুপ্তবীজী উদ্ভিদের আদর্শ মূল-কান্ড-পাতা ও জাইলেম-ফ্লোয়েম সংবহনতন্ত্র বর্তমান।
- এদের ফুল, ফল, বীজ সবই দেখা যায়। ব্যক্তবীজী উদ্ভিদের ফুলে ডিম্বাশয় না থাকলেও গুপ্তবীজী উদ্ভিদের ফুলে তা থাকে, তাই এজাতীয় উদ্ভিদের ফল সৃষ্টি হয় যার মধ্যে বীজটি লুক্কায়িত থাকে। তাই এদের গুপ্তবীজী উদ্ভিদ বলে।
- এরা মূলত বীরুৎ জাতীয় উদ্ভিদ এবং একবর্ষজীবি, দ্বিবর্ষজীবি বা বহুবর্ষজীবী প্রকৃতির হতে পারে।
- এই উদ্ভিদের ফ্লোয়েম সঙ্গীকোশ দেখা যায়।
- এজাতীয় উদ্ভিদের ডিম্বকে দ্বিনিষেক সম্পন্ন হয় ফলে এজাতীয় উদ্ভিদের শস্য 3n (ট্রিপ্লয়েড) প্রকৃতির হয়।
উদাহরণ : আমি, জাম, লিচু, লেবু, কাঁঠাল ইত্যাদি।
To check our latest Posts - Click Here