সাইমন কমিশন ( ১৯২৭ – ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দ ) – Simon Commission
Simon Commission
সাইমন কমিশন ( ১৯২৭ – ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দ )
প্রিয় পাঠকেরা, আজকে আমরা আলোচনা করবো সাইমন কমিশন ( ১৯২৭ – ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দ ) নিয়ে। সাইমন কমিশনকে সাইমন কমিশন বা ইন্ডিয়ান স্ট্যাটু্যটরি কমিশন রিপোর্ট বা ভারতীয় সংবিধানিক কমিশন ও বলা হয়ে থাকে। Simon Commission ।
সাইমন কমিশন গঠনের কারণ
- ১৯১৯ সালে ভারত শাসন আইন (যেটি মন্টেগু-চেমস ফোর্ড আইন নামেও পরিচিত ) প্রণয়ন করা হয়। এই আইন অনুসারে ভারতের রাজনৈতিক পরিস্থিতি পর্যালােচনা করার জন্য দশ বছর পর ১৯২৯ সালে একটি বিধিবদ্ধ কমিশন গঠনের কথা বলা হয়।
- কিন্তু ভারতের ক্রমাগত ভারতে বাড়তে থাকা রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং সংবিধানের আশু সংস্কারের জন্য ভারতীয়দের দাবি বাড়তে থাকে ।
- এর ফলস্বরূপ তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার দু’বছর আগেই ১৯২৭ সালে একটি বিধিবদ্ধ পার্লামেন্টারী কমিশন গঠন করে। এটিই সাইমন কমিশন নাম পরিচিত ।
আরও দেখে নাও : পরাধীন ভারতে গঠিত বিভিন্ন কমিটি ও কমিশন
সাইমন কমিশনের সদস্য
- ব্রিটিশ পার্লামেন্টের ৭ জন সদস্য নিয়ে সাইমন কমিশন গঠিত হয়।
- এই কমিশনের চেয়ারম্যান ছিলেন স্যার জন সাইমন। তাঁর নামানুসারেই এই কমিশনের নামরণ করা হয়।
- বাকি ৬ জন সদস্যের মধ্যে ২ জন ছিলেন ব্রিটিশ লর্ড সভার এবং ৪ জন ছিলেন কমন্সসভার সদস্য।
- ১৯১৯ সালের আইনের কার্যকারিতা সম্পর্কে অনুসন্ধান এবং ব্রিটিশ ভারতে আরও শাসনতান্ত্রিক সুযােগ-সুবিধা দেওয়া না দেওয়ার সম্ভাবনা যাচাই করার ভার কমিশনের উপর অর্পিত হয়।
আরও দেখে নাও : ভারত ছাড়ো আন্দোলন – Quit India Movement
সাইমন কমিশনের সাতজন সদস্য ছিলেন –
নং | সদস্য |
---|---|
১ | স্যার জন সাইমন (চেয়ারম্যান ) |
২ | লর্ড স্ট্র্যাথকোনা |
৩ | ভাইকাউন্ট বার্নহ্যাম |
৪ | কর্নেল স্টিফেন ওয়েলিস |
৫ | লেনফক্স |
৬ | মেজর এটলি |
৭ | এডওয়ার্ড ক্যারোগান |
Note : সাইমন কমিশন গঠন ও কমিশনের ভারতে আসার সময় ভারতের বড়লাট ছিলেন লর্ড আরউইন।
ভারতীয়দের সাইমন কমিশন বয়কট
- সাইমন কমিশন গঠনের মূল উদ্দেশ্য ছিল ভারতের শাসনতান্ত্রিক সংস্কার। কিন্তু এই কমিশনে কোনো ভারতীয় সদস্য ছিল না।
- সাইমন কমিশনে কোন ভারতীয় সদস্য না থাকায় ভারতীয় প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দল ও নেতৃবৃন্দ এর বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।
- একে পুরােপুরি “শ্বেতাঙ্গদের কমিশন” বা “All White Commission” বলে আখ্যা দেওয়া হয়।
- ভারতীয় কংগ্রেস, জিন্নাহর নেতৃত্বে মুসলিম লীগের একাংশ এবং ন্যাশনাল লিবারেল ফেডারেশন দল এ কমিশন প্রত্যাখ্যান করে একে বয়কটের সিদ্ধান্ত নেয়।
- ১৯২৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে কমিশন ভারতে এলে কালাে পতাকা প্রদর্শন এবং “সাইমন ফিরে যাও” ( “Simon Go Back” ) শ্লোগান দিয়ে কমিশনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ প্রদর্শন করা হয়।
- “Simon Go Back” স্লোগানটি প্রথম দিয়েছিলেন লালা লাজপত রায়।
আরও দেখে নাও : আইন অমান্য আন্দোলন – Civil Disobedience Movement
Note : সাইমন কমিশন গঠন করা হয় ১৯২৭ খ্রিস্টাব্দে কিন্তু সাইমন কমিশন ভারতে আসে ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে ।
লালা লাজপত রায়ের মৃত্যু
- ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দের ৩০শে অক্টোবর লালা লাজপত রায় সাইমন কমিশনের বিরুদ্ধে অনুষ্ঠিত প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণ করেন।
- সেখানে তিনি সক্রিয় ভাবে এই কমিশনের বিরোধিতা করেন।
- যদিও শান্তিপূর্ণ এই বিরোধে পুলিশ লাঠিচার্জ করে এবং লালা লাজপত রায় সেই লাঠিচার্জে গুরুতর ভাবে আহত হন।
- পরে তিনি ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দের ১৭ই নভেম্বর মারা যান।
‘’আমার শরীরে করা ব্রিটিশের প্রহার, ব্রিটিশের ধংসের কারণ হয়ে উঠবে’’
– লালা লাজপত রায়
সাইমন কমিশনের রিপোর্ট
- ভারতীয়দের প্রচন্ড বিরোধিতা ও তৎকালীন ভারতের অস্থির ও উত্তপ্ত রাজনৈতিক পরিস্থিতির মধ্যেই সাইমন কমিশন কাজ শেষ করে এবং ১৯৩০ সালে দুই খণ্ডে রিপাের্ট প্রকাশ করে।
- এই রিপোর্ট ভারতের জন্য ফেডারেল বা যুক্তরাষ্ট্রীয় সংবিধানের সুপারিশ করে। প্রাদেশিক দ্বৈত শাসন বাতিল করে প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব করে এবং মুসলমানদের জন্য আইন সভায় আসন সংরক্ষণ ও পৃথক নির্বাচকমণ্ডলীর মাধ্যমে নির্বাচনের সুপারিশ করে।
- এই রিপাের্ট ছিল ভারতের রাজনৈতিক সমস্যার এক আকর্ষণীয় এবং ব্যাপক পর্যালােচনার দলিল।
রিপাের্টের প্রতিক্রিয়া ও প্রভাব
সাইমন কমিশনের রিপোর্ট ভারতীয়দের সন্তুষ্ট করতে পারেনি। তবুও ব্রিটিশ সরকার এই কমিশনের রিপোর্টের ভিত্তিতেই পরবর্তীতে ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইন প্রণয়ন করে।
To check our latest Posts - Click Here