সন্ধি-বিচ্ছেদ – স্বরসন্ধি – Sandhi Viched in Bengali
সন্ধি-বিচ্ছেদ PDF - বাংলা ব্যাকরণ/Bengali Grammar Book PDF
সন্ধি-বিচ্ছেদ – স্বরসন্ধি
আজ আমরা আলোচনা করব সন্ধি বিচ্ছেদের বিষয়ে। আজকের পোস্টে সন্ধি-বিচ্ছেদ – স্বরসন্ধি নিয়ে আলোচনা করা হবে। Sandhi Viched in Bengali। সন্ধি বিচ্ছেদ । Sandhi Bichched |
সন্ধি-বিচ্ছেদ আমরা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহার করে থাকি, কিন্তু এর কিছু জটিল অথচ কৌতূহলোদ্দীপক বিষয় আমরা অনেক সময় ভুল ভাবে প্রয়োগ করে থাকি। তাই আমাদের সঠিকভাবে সন্ধি-বিচ্ছেদ জানা ও বোঝা খুব গুরুত্বপূর্ণ।
সন্ধি-বিচ্ছেদ ভালোভাবে জানলে আমরা বানানগত ত্রুটি অনেকাংশে রোধ করতে পারি।
সন্ধি-বিচ্ছেদকে আমরা তিনভাগে ভাগ করে আলোচনা করব। যথা
- স্বরসন্ধি
- ব্যঞ্জনসন্ধি
- বিসর্গসন্ধি
সন্ধি কাকে বলে?
উত্তরঃ এককথায়, পাশাপাশি অবস্থিত দুটি ধ্বনির মিলনকে সন্ধি বলে।
বাংলা ব্যাকরণমতে, দুটি শব্দের প্রথমটির শেষ ধ্বনি এবং দ্বিতীয়টির শেষ ধ্বনির উচ্চারণ যদি এক বা কাছাকাছি হয় তাহলে ধ্বনিদ্বয় পরস্পর সংযুক্ত হওয়ার মাধ্যমে একটি শব্দে পরিণত হওয়াই হল সন্ধি।
তৎসম সন্ধি কাকে বলে?
বাংলা ভাষায় যে সমস্ত সংস্কৃত শব্দ রয়েছে তাদের তৎসম সন্ধি বলে।
বাংলা শব্দের সন্ধি কাকে বলে?
খাঁটি বাংলা শব্দ তথা তদ্ভব শব্দের সন্ধিকে বাংলা শব্দের সন্ধি বলে।
স্বরসন্ধি
আজ আমরা কেবল স্বরসন্ধি বিষয়ে আলোচনা করব।
যখন একটি স্বরধ্বনির সাথে অন্য একটি স্বরধ্বনির মিলন হয় তাকে স্বরসন্ধি বলে। বাংলায় স্বরসন্ধির ক্ষেত্রে দুটি স্বরধ্বনির একটি লোপ পায়। স্বরসন্ধির নিয়মগুলি আলোচনা করা হল।
১। ‘অ’ বা ‘আ’ এর পরে ‘অ’ বা ‘আ’ থাকলে উভয়ে মিলে ‘আ’ হয়।
- নর + অধম = নরাধম (অ + অ = আ)
- যথা + অর্থ = যথার্থ (আ + অ = আ)
- জল + আতঙ্ক = জলাতঙ্ক (অ + আ = আ)
- মহা + আশয় = মহাশয় (আ + আ = আ)
২। ‘অ’ বা ‘আ’ এর পরে ‘ই’ বা ‘ঈ’ থাকলে উভয়ে মিলে ‘এ’ হয়।
- নর + ইন্দ্র = নরেন্দ্র (অ + ই = এ)
- মহা + ইন্দ্র = মহেন্দ্র (আ + ই = এ)
- নর + ঈশ = নরেশ (অ + ঈ = এ)
- মহা + ঈশ = মহেশ (আ + ঈ = এ)
৩। ‘অ’ না ‘আ’ এর পরে ‘উ’ বা ‘ঊ’ থাকলে উভয়ে মিলে ‘ও’ হয়।
- নর + উত্তম = নরোত্তম (অ + উ = ও)
- যথা + উক্তি = যথোক্তি (আ + উ = ও)
- মনুষ্য + ঊর্ধ্ব = মনুষ্যোর্ধ্ব (অ + ঊ = ও)
- মহা + ঊর্মি = মহোর্মি (আ + ঊ = ও)
৪। ‘অ’ বা ‘আ’ এর পরে ‘ঋ’ থাকলে উভয়ে মিলে রেফ হয়।
- দেব + ঋষি = দেবর্ষি (অ + ঋ = রেফ)
- মহা + ঋষি = মহর্ষি (আ+ঋ = রেফ)
৫। ‘অ’ বা ‘আ’ এর পরে ‘এ’ বা ‘ঐ’ থাকলে উভয়ে মিলে ‘ঐ’ হয়।
- জন + এক = জনৈক (অ + এ = ঐ)
- সদা + এব = সদৈব (আ + এ = ঐ)
- মত + ঐক্য = মতৈক্য (অ + ঐ = ঐ)
- মহা + ঐশ্বর্য = মহৈশ্বর্য (আ + ঐ = ঐ)
৬। ‘অ’ বা ‘আ’ এর পরে ‘ও’ বা ‘ঔ’ থাকলে উভয়ে মিলে ‘ঔ’ হয়।
- বন + ওষধি = বনৌষধি (অ + ও = ঔ)
- মহা + ওষধি = মহৌষধি (আ + ও = ঔ)
- জল + ঔকা = জলৌকা (অ + ঔ = ঔ)
- মহা + ঔষধ = মহৌষোধ (আ + ঔ = ঔ)
৭। ‘ই’ না ‘ঈ’ এর পরে ‘ই’ বা ‘ঈ’ থাকলে উভয়ে মিলে ‘ঈ’ হয়।
- রবি + ইন্দ্র = রবীন্দ্র (ই + ই = ঈ)
- পরি + ঈক্ষা = পরীক্ষা (ই + ঈ = ঈ)
- সতী + ইন্দ্র = সতীন্দ্র (ঈ + ই = ঈ)
- সতী + ঈশ = সতীশ (ঈ + ঈ = ঈ)
৮। ‘ই’ না ‘ঈ’ এর পরে ‘ই’ বা ‘ঈ’ ব্যতীত অন্য কিছু থাকলে পূর্ববর্ণের ‘ই’ বা ‘ঈ’ বিলুপ্ত হয়ে য-ফলা যুক্ত হয়, এবং পরবর্তী বর্ণের স্বরধ্বনি অপরিবর্তিত থাকে।
- ইতি + অবসর = ইত্যবসর (ই + অ = য)
- ইতি + আদি = ইত্যাদি (ই + আ = য)
- অতি + উক্তি = অত্যুক্তি (ই + উ = য)
- অতি + ঊর্ধ্ব = অত্যূর্ধ্ব (ই + ঊ = য)
- অতি + এক = অত্যেক (ই + এ = য)
- অতি + ঐশ্বর্য = অতৈশ্বর্য (ই + ঐ =য)
- নদী + অম্বু = নদ্যম্বু (ঈ + অ = য)
- নদী + আদি = নদ্যাদি (ঈ + আ = য)
৯। ‘উ’ বা ‘ঊ’ এর পরে ‘উ’ বা ‘ঊ’ থাকলে উভয়ে মিলে ‘ঊ’ হয়।
- মরু + উদ্যান = মরূদ্যান (উ + উ = ঊ)
- বহু + ঊর্ধ্ব = বহূর্ধ্ব (উ + ঊ = ঊ)
- বধূ + উৎসব = বধূৎসব (ঊ + উ = ঊ)
- ভূ + ঊর্ধ্ব = ভূর্ধ্ব (ঊ + ঊ = ঊ)
১০। ‘উ’ বা ‘ঊ’ এর পরে ‘উ’ বা ‘ঊ’ ব্যতীত অন্য কিছু থাকলে পূর্ববর্ণের ‘উ’ বা ‘ঊ’ বিলুপ্ত হয়ে ব-ফলা যুক্ত হয়, এবং পরবর্তী বর্ণের স্বরধ্বনি অপরিবর্তিত থাকে।
- সু + অল্প = স্বল্প (উ + অ = ব)
- সু + আগতম = স্বাগতম (উ + আ = ব)
- অনু + ইত = অন্বিত (উ + ই = ব)
- তনু + ঈ = তন্বী (উ + ঈ = ব)
- অনু + এষণ = অন্বেষণ (উ + এ = ব)
১১। ‘ঋ’ এর পরে ‘ঋ’ ব্যতীত অন্য কিছু থাকলে ‘ঋ’ বিলুপ্ত হয়ে র-ফলা পূর্ববর্ণের সাথে যুক্ত হয়।
- পিতৃ + আলয় = পিত্রালয় ( ঋ + আ = র-ফলা)
১২। ‘এ’ বা ‘ঐ’ এর পরে ‘এ’ বা ‘ঐ’ ব্যতীত অন্য কিছু থাকলে ‘এ’ এর জায়গায় ‘অয়’ এবং ‘ঐ’ এর জায়গায় ‘আয়’ হয়।
- নে + অয়ন = নয়ন (এ + অ = অয়)
- গৈ + অক = গায়ক (ঐ + অ = আয়)
১৩। ‘ও’ বা ‘ঔ’ এর পরে ‘ও’ বা ‘ঔ’ ব্যতীত অন্য কিছু থাকলে ‘ও’ এর জায়গায় ‘অব’ এবং ‘ঔ’ এর জায়গায় ‘আব’ হবে।
- লো + অণ = লবণ (ও + অ = অব)
- পো + ইত্র = পবিত্র (ও + ই = অব)
- গো + এষণা = গবেষণা (ও + এ = অব)
- ভৌ + উক = ভাবুক (ঔ + উ = আব)
১৪। নিপাতনে সিদ্ধ সন্ধি।
এই সমস্ত সন্ধি উপরিউক্ত কোনো নিয়ম মানে না, তাই এদের নিপাতনে সিদ্ধ সন্ধি বলে। উদাহরণ
- কুল + অটা = কুলটা
- মার্ত + অণ্ড = মার্তণ্ড
- বিম্ব + ওষ্ঠ = বিম্বৌষ্ঠ
- শত + এক = শতেক
নিপাতনে সিদ্ধ সন্ধির সম্পূর্ণ তালিকা আলাদা ভাবে প্রকাশ করা হবে।
এরকম আরও কিছু পোস্ট :
সমার্থক শব্দ বা একার্থক শব্দ – বাংলা ব্যাকরণ – Samarthak Shobdo – PDF
To check our latest Posts - Click Here