NotesGeneral Knowledge Notes in Bengali

কোষ বিভাজন কাকে বলে? প্রকারভেদ – Cell Division

Cell division - Definition, Types, Phases and FAQ

কোষ বিভাজন – Cell Division

কোষ বিভাজন : প্রায় সমস্ত সজীব কোষের ক্ষেত্রেই কোষ বিভাজন দেখা যায়। এটি কোষের একটি অত্যাবশ্যকীয় প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে কোষ একটি থেকে দুটি বা চারটি কোষে বিভাজিত হয়। অনেক এককোষী প্রাণীর ক্ষেত্রে কোষ বিভাজন বংশ বিস্তারের মাধ্যমও বটে। 

প্রথমেই কয়েকটি সাধারণ বিষয় দেখে নেওয়া যাক, প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে।

কোষ বিভাজন কাকে বলে ?

যে প্রক্রিয়ায় মাতৃ কোষ বিভাজিত হয়ে অপত্য কোষ সৃষ্টি করে তাকে কোষ বিভাজন বলে ।

কোষ বিভাজন কত রকমের হয়?

প্রোক্যারিওটিক কোষে কেবলমাত্র অ্যামাইটোসিস বা প্রত্যক্ষ কোষ বিভাজন হয়ে থাকে। যেমন ব্যাকটেরিয়া বা শৈবাল।
অন্যদিকে, ইউক্যারিওটিক কোষে তিন রকমের কোষ বিভাজন দেখা যায়, যথাঃ 
ক) অ্যামাইটোসিস – এটি কেবল প্রোস্টিটা নামক এককোষী জীবে দেখা যায়।
খ) মাইটোসিস – এটি প্রায় সমস্ত ইউক্যারিওটিক কোষে দেখা যায় 
গ) মায়োসিস – এটি কেবল জনন-মাতৃকোষে দেখা যায় 

মানবদেহের কোন কোন ইউক্যারিওটিক কোষ বিভাজিত হয় না?

উত্তরঃ এরকম দুটি উদাহরণ হল 
ক) লোহিত রক্তকণিকা – কারণ এতে নিউক্লিয়াস থাকে না 
খ) স্নায়ুকোষ – কারণ এর সেন্ট্রোমিয়ার কাজ করে না 

মাতৃ- এবং অপত্য কোষ কাকে বলে?

যে কোষটি বিভাজিত হয় তাকে মাতৃকোষ বলে। বিভাজিত হওয়ার পরে যে নতুন কোষগুলি সৃষ্টি হয় তাদের অপত্য কোষ বলে।

Also Check : বিভিন্ন অঙ্গাণুর বিশেষ নাম – কোন অঙ্গানুকে কি বলে ডাকা হয় – PDF

অ্যামাইটোসিস বা প্রত্যক্ষ কোষ বিভাজন

অ্যামাইটোসিস প্রক্রিয়ায় কোন ধরনের জটিলতা ছাড়াই তথা কোনো বিশেষ ধাপ ছাড়াই কোষ বিভাজিত হয়ে দুটি অপত্য কোষ গঠন করে।  

প্রত্যক্ষ বিভাজনের ক্ষেত্রে নিউক্লিয়াসটি সরাসরি দু-ভাগে ভাগ হয়। 

নিউক্লিয়াসটি প্রথমে লম্বা হয় ও মাঋখানে একটি খাঁজ তৈরী হয়ে একটি ডাম্বেল আকৃতির নিউক্লিয়াসে পরিণত হয়, এবং দুইভাগে বিভক্ত হয়।

একইসাথে কোষটির মধ্যভাগেও একটি খাঁজ তৈরী হয়, এবং তা ক্রমশঃ ভেতরের দিকে ঢুকে গিয়ে পরিশেষে নিউক্লিয়াস সমেত কোষটিকেও দুইভাগে ভাগ করে ফেলে – এবং প্রতিটি ভাগে একটি করে অপত্য নিউক্লিয়াস থাক। 

অ্যামাইটোসিস পদ্ধতির ধাপগুলি হল – 

ক) ডিএনএ আনকয়েলিং – এই ধাপে কোষের কুণ্ডলীকৃত ডিএনএ সরলাকার ডিএনএ-তে পরিণত হয়

খ) ডিএনএ রেপ্লিকেশন – এই ধাপে কোষের ডিএনএ-র তথা অন্যান্য অঙ্গাণুর প্রতিলিপি (কপি) তৈরী হয় 

গ) ডিএনএ বিভাজন – এই ধাপে ডিএনএ বিভাজনশীল কোষের দুই প্রান্তে অবস্থান করে 

ঘ) কোষ পর্দা তথা কোষ প্রাচীর কোষকে দুই ভাগে বিভক্ত করতে শুরু করে 

ঙ) বিভাজন সম্পূর্ণ হয় – বিভাজন শেষে অপত্য কোষে নিজস্ব নিউক্লিয়াস, রাইবোজম, এবং প্লাসমিড থাকে 

সমস্ত চিত্র উইকিপিডিয়া থেকে সংগৃহীত।

Also Check : মানবদেহের বিভিন্ন অঙ্গের আবরণীর নাম

মাইটোসিস

যে বিভাজনে মাতৃকোষের নিউক্লিয়াস এবং ক্রোমোজম উভয়ই একবার করে বিভাজিত হয়ে সমআকৃতির, সমগুণসম্পন্ন, এবং সমানসংখ্যক ক্রোমোজোম বিশিষ্ট দুটি অপত্য কোষের সৃষ্টি করে তাকে মাইটোসিস বলে।

এই বিভাজনে অপত্য কোষগুলি ক্রোমোজমীয় ধর্মে হুবহু মাতৃ কোষের মত হয়ে থাকে। 

উদ্ভিদ তথা প্রাণীর দেহকোষে (সোমাটিক সেল) মাইটোসিস কোষ বিভাজন হয়। এছাড়াও উদ্ভিদের বর্ধিষ্ণু অঞ্চল ও পুষ্পমুকুলে এ বিভাজন দেখা যায়। 

এছাড়া মায়োসিস বিভাজনের দ্বিতীয় পর্যায়ের বিভাজনও মাইটোসিস পদ্ধতিতেই হয়ে থাকে

মাইটোসিস কোষ বিভাজন দুই ধাপে বিভক্ত, যথাঃ 

ক) ক্যারিওকাইনেসিস বা নিউক্লিয়াসের বিভাজন 

খ) সাইটোকাইনেসিস বা সাইটোপ্লাজমের বিভাজন 

মাইটোসিস বিভাজন দুটি ধাপে হয়। যথাঃ

  • ক্যারিওকাইনেসিস – নিউক্লিয়াসের বিভাজন
    • প্রোফেজ
    • মেটাফেজ
    • অ্যানাফেজ
    • টেলোফেজ
  • সাইটোকাইনেসিস – সাইটোপ্লাজমের বিভাজন

যে অবস্থায় কোষ বিভাজিত হয় না, অর্থাৎ দুটি বিভাজনের মধ্যবর্তী সময়, তাকে ইন্টারফেজ বলে। এটি কোষ বিভাজনের ধাপ নয়, বরং এটি আরও বৃহত্তর কোষ চক্রের প্রথম ধাপ।

কোষ চক্র এই অধ্যায়ের আলোচ্য বিষয় নয়।

মাইটোসিস বিভাজনের ধাপগুলি সংক্ষেপে আলোচনা করা হল –

Also Check : মানব কর্ণের বিভিন্ন অংশ, তার কাজ ও অবস্থান

প্রোফেজ

এই পর্যায়ে 

  • কোষের ক্রোমোজমের ‘জল-বিয়োজন’ হয় এবং অণুবীক্ষণে দৃশ্যমান হয়।
  • ক্রোমোজমের দুটি তন্ত্র (ক্রোমাটিড) বিভক্ত হয়, এবং কেবল সেন্ট্রোমিয়ারের মাধ্যমে সংযুক্ত থাকে।
  • নিউক্লিওলাস এবং নিউক্লিয়াসের আবরণী পর্দা বিলুপ্ত হওয়া শুরু হয়, এবং
  • এটি কোষ বিভাজনের দীর্ঘতম পর্যায়।

মেটাফেজ

এই পর্যায়ে 

  • নিউক্লিওলাস এবং নিউক্লিয়াসের আবরণী পর্দা বিলুপ্ত হয়।
  • বেম তন্তু সৃষ্টি হয়।
    • বেম তন্তু প্রোটিন নির্মিত হয়।
    • বেম তন্তুগুলি কোষের দুই মেরুতে সংযুক্ত থাকে। 
    • কিছু বেম তন্তুর সাথে ক্রোমোজমের সেন্ট্রোমিয়ার সংযুক্ত হয়, এদের ক্রোমোজমীয় বেম তন্তু বলে।
    • প্রাণীকোষে বেম তন্তুর মেরু অঞ্চলে একটি করে সেন্ট্রিওল থাকে।
    • উদ্ভিদকোষে সেন্ট্রোজোম বা সেন্ট্রিওল থাকে না।
  • ক্রোমোজমের সেন্ট্রোমিয়ার ‘মেটাফেজ প্লেট’ বরাবর সারিবদ্ধভাবে অবস্থান করে। একে ‘মেটাকাইনেসিস’ বলা হয়।
  • অণুবীক্ষণ যন্ত্রে, এই পর্যায়ে ক্রোমোজমগুলি বেঁটে এবং মোটা দেখায়, এবং
  • সেন্ট্রোমিয়ারের বিভাজন ঘটে, ফলতঃ অপত্য ক্রোমজমের সৃষ্টি হয়।

অ্যানাফেজ

এই পর্যায়ে

  • অপত্য ক্রোমোজমগুলি মেটাফেজ প্লেট (বিষুবীয় অঞ্চল) থেকে মেরু অঞ্চলের দিকে যাতে শুরু করে।
  • অপত্য ক্রোমোজমগুলি সেন্ট্রোমিয়ারের অবস্থান হিসাবে বিভিন্ন আকার ধারণ করে, যথা –
    • I – টেলোসেন্ট্রিক
    • J – অ্যাক্রোসেন্ট্রিক
    • L – সাব-মেটাসেন্ট্রিক
    • V – মেটাসেন্ট্রিক

টেলোফেজ

এই পর্যায়ে

  • অপত্য ক্রোমোজমগুলি মেরুতে অবস্থান করে।
  • ক্রোমোজমগুলিতে ‘জল-যোজন’ হয় এবং ক্রমশঃ সরু ও লম্বা আকার ধারণ করতে থাকে।
  • নিউক্লিওলাস এবং নিউক্লিও পর্দার পুনরাবির্ভাব হয়, এবং
  • বেম তন্তু অদৃশ্য হয়।

সাইটোকাইনোসিস

  • টেলোফেজ পর্যায়ের শেষধাপে এটি শুরু হয়। 
  • মাতৃকোষের কেন্দ্রীয় অঞ্চলে এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলাম জমা হয়ে ধীরে ধীরে কোষ পর্দা তৈরী করে, এবং
  • কোষ অঙ্গাণুগুলি প্রায় সমভাবে দুটি অপত্য কোষের মধ্যে বন্টিত হয়। 

মিওসিস

যে বিভাজনে মাতৃকোষের নিউক্লিয়াস এবং ক্রোমোজম উভয়ই দুইবার করে বিভাজিত হয়ে বিষমআকৃতির, এবং অর্ধেকসংখ্যক ক্রোমোজোম বিশিষ্ট চারটি অপত্য কোষের সৃষ্টি করে তাকে মিওসিস বলে।

এই বিভাজনে অপত্য কোষগুলি ক্রোমোজমীয় ধর্মে হুবহু মাতৃ কোষের মত হয় না। 

উদ্ভিদ তথা প্রাণীর জনন-মাতৃকোষে মিওসিস কোষ বিভাজন হয়। প্রাণীর ক্ষেত্রে শুক্রাশয় এবং ডিম্বাশয়, এবং উদ্ভিদের ক্ষেত্রে পরাগধানীতে মিওসিস হয়। এছাড়া হ্যাপ্লয়েড জীবের জাইগোটে (যেমন, মৌমাছি, বোলতা, পিঁপড়ে ইত্যাদি) মিওসিস হয়ে থাকে।

মিওসিস বিভাজনের দ্বিতীয় পর্যায়ের বিভাজনও মাইটোসিস পদ্ধতিতেই হয়ে থাকে

যেহেতু মাইটোসিস পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে, এখানে কেবল মিওসিসের প্রথম ধাপ উল্লেখ করা হল।

মিওসিসের প্রথম ধাপের নিউক্লিও বিভাজন (ক্যারিওকাইনেসিস) চারটি ধাপে বিভক্ত। এগুলি নিম্নে বর্ণিত হল –

প্রোফেজ – ১

  • এটি মিওসিসের দীর্ঘতম এবং জটিলতম ধাপ। 
  • এই কারণে, একে পাঁচটি উপদশায় ভাগ করা হয়। এগুলি হল –
  • লেপ্টোটিন
    • এই পর্যায়কে ‘পোলারাইসড বিন্যাস’ বলা হয়ে থাকে।
    • নিউক্লিয়াসের আকার বৃদ্ধি পায়।
    • ক্রোমোজমের ‘জল-বিয়োজন’ হয়, এবং ক্রোমোজমের দুইটি ক্রোমাটিড বিভক্ত হয়।
    • দ্বিতন্ত্রী ডিএনএ একতন্ত্রী ডিএনএ-তে বিভক্ত হয়।
  • জাইগোটিন
    • এই দশায় সমসংস্থ ক্রোমোজমগুলি পারস্পরিক আকর্ষণের ফলে কাছাকাছি আসে।
    • এর পরে, সমসংস্থ ক্রোমোজমগুলি জোড় বাঁধে – একে ‘সাইন্যাপসিস’ বলা হয়।
    • এইভাবে জোড়বদ্ধ ক্রোমোজমগুলিকে ‘বাইভ্যালেন্ট’ বলা হয়।
  • প্যাকিটিন
    • জোড়বদ্ধ ক্রোমোজমগুলির ক্রোমাটিড সেন্ট্রোমিয়ার বরাবর বিভক্ত হয়। এর ফলে একটি বাইভ্যালেন্টে চারটি করে ক্রোমাটিড থাকে। এই কারণে একে ‘টেট্রাড ক্রোমোজম’ও বলা হয়ে থাকে।
    • চারটি ক্রোমাটিডের যে দুটি একই ক্রোমোজম থেকে আসে তাদের সিস্টার ক্রোমাটিড বলে। অপরপক্ষে, যে দুটি ভিন্ন (সমসংস্থ) ক্রোমোজম থেকে আসে তাদের নন-সিস্টার ক্রোমাটিড বলা হয়। 
    • নন-সিস্টার ক্রোমাটিডগুলি এক বা একাধিক স্থানে পরস্পরের সাথে যুক্ত হয়। এই সংযুক্তিস্থানকে ‘কায়াজমা’ বলে। একটি কায়াজমা থাকলে ক্রোমাটিডগুলি X আকার ধারণ করে। একাধিক থাকলে ক্রোমাটিডগুলি ‘লুপ’ গঠন করে।
    • কায়াজমা বরাবর ক্রোমাটিডগুলি বিচ্ছিন্ন এবং সংযুক্ত হতে থাকে – যার ফলে একটি ক্রোমাটিডের মধ্যে অন্য ক্রোমাটিডের জিন-গুলি এসে যায়। এই পদ্ধতিকে ক্রসিং-ওভার বলে।
    • ক্রসিং ওভারের কারণেই মিওসিসকে অসম-বিভাজন বলা হয় – কারণ মাতৃ-ক্রোমোজম এবং অপত্য-ক্রোমোজম হুবহু এক হয় না। 
    • প্রসঙ্গতঃ, ক্রসিং ওভার প্যাকিটিন দশায় শুরু হলেও সমাপ্ত হয় ডিপ্লোটিন দশায়।
  • ডিপ্লোটিন
    • সমসংস্থ ক্রোমোজমগুলি এই পর্যায়ে একে অপরের থেকে আলাদা হতে শুরু করে।
    • ক্রসিং-ওভার সম্পূর্ণ হয়।
    • সমসংস্থ ক্রোমোজমগুলি কোষের মেরুর দিকে যেতে থাকে।
  • ডায়াকাইনেসিস
    • সমসংস্থ ক্রোমোজমগুলির মেরুবর্তী চলন সম্পূর্ণ হয়।
    • নিউক্লিওলাস এবং নিউক্লিয় পর্দা অদৃশ্য হয়।
    • বেম তন্তু গঠন শুরু হয়।

মেটাফেজ-১ থেকে সমস্ত পর্যায়গুলি মাইটোসিসের অনুরূপ।

মেটাফেজ – ১, অ্যানাফেজ – ১, টেলোফেজ – ১

এই পর্যায়ে একটি ডিপ্লয়েড কোষ থেকে দুটি অসম হ্যাপ্লয়েড কোষ তৈরী হয়।

প্রফেজ – ২, মেটাফেজ – ২, অ্যানাফেজ – ২, টেলোফেজ – ২

এই পর্যায়ে দুটি অসম হ্যাপ্লয়েড কোষের প্রতিটি থেকে দুটি করে সমগুনসম্পন্ন হ্যাপ্লয়েড কোষ তৈরী হয়।

অর্থাৎ, সমগ্র মিওসিসের শেষে চারটি হ্যাপ্লয়েড কোষ তৈরী হয়।

To check our latest Posts - Click Here

Telegram

কুদ্দুস ভাই

World History, Content Writer @ www.banglaquiz.in

Related Articles

Back to top button