কম্পিউটারের শ্রেণীবিভাগ – Classification of Computer
অনেকতো ব্যবহার করছি কম্পিউটার, অনেক গান শুনছি, সিনেমা দেখছি, গেমস খেলছি, অফিসের কাজ করছি, আমরা কি জানি কম্পিউটার কত ধরণের হয়? চলো আজ একটু জেনেই নিই কম্পিউটার এর শ্রেণীবিভাগ সম্পর্কে। কম্পিউটারের শ্রেণীবিভাগ – Classification of Computers । বিভিন্ন ধরণের কম্পিউটার ।
Also Check : কম্পিউটারের কীবোর্ড শর্টকাট তালিকা – Important Keyboard Shortcuts
আকারের ভিত্তিতে শ্রেণীবিভাগ :
আকারের ভিত্তিতে কম্পিউটারকে ৪ ভাগে ভাগ করা যায়, যথা –
- সুপার কম্পিউটার
- মেইনফ্রেম কম্পিউটার
- মিনি কম্পিউটার
- মাইক্রো কম্পিউটার
সুপার কম্পিউটার :
- সুপারকম্পিউটার হল দ্রুততম এবং শক্তিশালী কম্পিউটার, এবং খুব ব্যায়বহুল। ডেটা প্রসেসিং-এর ধরনের কম্পিউটার খুব উপযুক্ত।
- সুপারকম্পিউটারগুলির আকার এবং স্টোরেজ ক্ষমতাও বিশাল (বিশাল জায়গা দখল করে)।
- উচ্চ উৎপাদনশীলতার সাথে অল্প সময়ের মধ্যে বিপুল পরিমাণ ডেটা প্রক্রিয়া করার জন্য এই ধরণের কম্পিউটার ডিজাইন করা হয়েছে।
বিজয় পান্ডুরঙ ভাটকর ভারতীয় সুপার কম্পিউটারের জনক নামে সুপরিচিত।
ব্যবহার :
- পারমাণবিক শক্তি ও অস্ত্রের গবেষণা এবং অধ্যয়ন, বিমান এবং ফ্লাইট সিমুলেটর ডিজাইন করতে ব্যবহৃত হয়।
- জলবায়ু গবেষণা এবং আবহাওয়ার পূর্বাভাস এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের পূর্বাভাস দেওয়া।
- স্পেসশিপ এবং স্যাটেলাইট লঞ্চিং-এর ক্ষেত্রে।
- উন্নতমানের বৈজ্ঞানিক গবেষণা ল্যাবরেটরিতে ব্যবহৃত হয়।
- রাসায়নিক এবং জৈবিক গবেষণায় অত্যন্ত জটিল গণনার কাজে ব্যবহৃত হয়।
উদাহরণ : কয়েকটি সুপারকম্পিউটারের নাম হল- Intel ASCI Red, PARAM-1000, CRAY-XMP-14, IBM Roadburner, IBM Blue Gene ।
ভারতের প্রথম সুপার কম্পিউটার ‘পরম ৮০০০’ ।
মেইনফ্রেম কম্পিউটার :
- মেইনফ্রেম কম্পিউটারগুলি হল মাল্টি-প্রোগ্রামিং, হাই-পারফরম্যান্স কম্পিউটার এবং এই কম্পিউটার একসঙ্গে বহু-ব্যবহারকারী অর্থাৎ ১০০ জনের বেশি ব্যবহারকারীর কাজের চাপ সামলাতে পারে।
- মেইনফ্রেমের স্টোরেজ ক্ষমতা বিশাল (সুপার কম্পিউটারের থেকে কম), এর ডাটা প্রসেসিং স্পিড ও অনেক। এর পাশাপাশি একই সময়ে শত শত ইনপুট এবং আউটপুট ডিভাইস পরিচালনা করতে পারে মেইনফ্রেম কম্পিউটার।
ব্যবহার :
- মেনফ্রেম কম্পিউটারগুলি প্রধানত ব্যাঙ্ক, কোম্পানি, বৈজ্ঞানিক গবেষণা কেন্দ্র এবং রেলওয়ের মতো সরকারি বিভাগগুলির মতো বিভিন্ন ডিপার্টমেন্টাল এবং বাণিজ্যিক সংস্থাগুলি দ্বারা ব্যবহৃত হয়। এই কম্পিউটারগুলি দিনে ২৪ ঘন্টা কাজ করতে পারে।
- মেইনফ্রেম কম্পিউটার গবেষণাকেন্দ্র ও বিভিন্ন পেমেন্টের বিবরণ রাখা, বিল এবং নোটিশ পাঠানো, কর্মচারীদের মাইনে প্রদান, টিকিট বুকিং, ইত্যাদি বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়।
উদাহরণ : IBM Es000 সিরিজ, ICL39 সিরিজ, এবং CDC 6600 ।
মিনি কম্পিউটার :
- মিনিকম্পিউটার হল একাধিক CPU এর সংযোগ সহ একটি ডিজিটাল এবং মাল্টি-ইউসার কম্পিউটার সিস্টেম।
- সুতরাং, এই কম্পিউটারগুলিতে একসাথে অনেকে কাজ করতে পারে। এছাড়াও, এটি অন্যান্য আনুষাঙ্গিক যেমন প্রিন্টার, প্লটার ইত্যাদি ডিভাইস এর সাথে প্রসেস করতে পারে।
- মিনিকম্পিউটার হল মাঝারি ধরনের কম্পিউটার যেগুলির কার্যকারিতা শক্তি এবং দাম মাইক্রোকম্পিউটারের চেয়ে বেশি।
- মিনিকম্পিউটারগুলি একক সময়ে একাধিক কম্পিউটিং কাজ সম্পাদনের জন্য তৈরি করা হয়, তাই এসব ক্ষেত্রে অনেকগুলি মাইক্রোকম্পিউটার বরাদ্দ করার পরিবর্তে একটি মিনি কম্পিউটার নেওয়াই কম ব্যয়বহুল ও সময়সাপেক্ষ।
ব্যবহার :
- মিনিকম্পিউটারগুলি শিল্পকেন্দ্র, বুকিং সেন্টার এবং গবেষণাকেন্দ্রগুলিতে রিয়েল-টাইম অ্যাপ্লিকেশন হিসাবে ব্যবহৃত হয়।
- ব্যাঙ্কগুলি বিভিন্ন কর্মচারীদের বেতন, রেকর্ড, ইত্যাদির জন্য বিভিন্ন চার্ট প্রস্তুত করার জন্য মিনিকম্পিউটার ব্যবহার করে।
উদাহরণ : PDP 11 এবং IBM (8000 সিরিজ)।
মাইক্রো কম্পিউটার :
- আজকাল আমরা ঘরে বসে সাধারণ কাজের জন্য যে সমস্ত কম্পিউটার ব্যবহার করছি তাই হলো সবচেয়ে সাধারণ প্রকারের কম্পিউটার অর্থাৎ মাইক্রো কম্পিউটার।
- ১৯৭০ সালে মাইক্রোপ্রসেসরের আবিষ্কারের পর, ‘ডিজিটাল পার্সোনাল কম্পিউটার’ নামে পরিচিত ব্যক্তিগতভাবে ব্যবহারের জন্য এই ধরণের কম ব্যয়বহুল কম্পিউটার আবিষ্কার সম্ভব হয়।
- মাইক্রোকম্পিউটারগুলির আকার এবং স্টোরেজ ক্ষমতা খুব কম।
- এই কম্পিউটারগুলিতে অনেকগুলি অংশ রয়েছে যেমন ইনপুট এবং আউটপুট ডিভাইস, সফ্টওয়্যার, অপারেটিং সিস্টেম, নেটওয়ার্ক এবং সার্ভার ইত্যাদি।
- এই সমস্ত অংশগুলি নিয়েই ,মাইক্রোকম্পিউটার গঠিত হয়।
ব্যবহার :
- বাড়ি, অফিস, ব্যবসা, শিক্ষা, বিনোদন, প্রকাশনা ইত্যাদি অনেক ক্ষেত্রে PC (Personal Computer বা মাইক্রোকম্পিউটার) ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়।
- কিছু প্রধান PC নির্মাতা হল IBM, Lenovo, Apple, HCL, HP, ইত্যাদি।
উদাহরণ : ডেস্কটপ, ট্যাবলেট, স্মার্টফোন, ল্যাপটপ ইত্যাদি।
ব্যবহারিক উদ্দেশ্যের ভিত্তিতে শ্রেণীবিভাগ :
ব্যবহারিক উদ্দেশ্যের ভিত্তিতে কম্পিউটারকে ২ ভাগে ভাগ করা যায়, যথা –
- সাধারণ কম্পিউটার (General Purpose Computer)
- বিশেষ কম্পিউটার (Special Purpose Computer)
সাধারণ কম্পিউটার :
- সাধারণ কম্পিউটার বিভিন্ন দৈনন্দিন কাজ করতে পারে যেমন ওয়ার্ড প্রসেসিং, লেটার লেখা, নথি তৈরি, রেকর্ডিং, আর্থিক বিশ্লেষণ, নথি মুদ্রণ, ডেটাবেস তৈরি এবং নির্ভুলতা এবং ধারাবাহিকতার সাথে গণনা করা ইত্যাদি।
- এই ধরনের কম্পিউটারের আকার, স্টোরেজ ক্ষমতা এবং খরচ মূলত কম।
- এই কম্পিউটারগুলির ক্ষমতা বিশেষ কার্য সম্পাদনে সীমিত। তবুও, এটির বহুমুখী ব্যবহার রয়েছে এবং বাড়িতে বা কর্মক্ষেত্রে মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণের জন্য এই কম্পিউটার দরকারী।
উদাহরণ : ডেস্কটপ, ল্যাপটপ, স্মার্টফোন এবং ট্যাবলেটগুলি প্রতিদিন সাধারণ কাজের জন্য ব্যবহার করা হয়।
বিশেষ কম্পিউটার :
- এই কম্পিউটারগুলি একটি নির্দিষ্ট বা বিশেষ কাজ সম্পাদন করার জন্য ডিজাইন করা হয়।
- এই ধরনের কম্পিউটারের আকার, স্টোরেজ ক্ষমতা এবং খরচ মূলত কাজের প্রকৃতি এবং আকারের উপর নির্ভর করে।
- এই কম্পিউটারগুলির কার্যকারিতা যে কোনও নির্দিষ্ট কাজের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
- বিশেষ কম্পিউটারে দক্ষতার সাথে কাজ পরিচালনা করার জন্য নির্দিষ্ট ইনপুট এবং আউটপুট ডিভাইসের পাশাপাশি প্রসেসরের সাথে একটি সামঞ্জস্যপূর্ণ মাদারবোর্ড প্রয়োজন হয়।
উদাহরণ : অটোমেটিক টেলার মেশিন (ATM), ওয়াশিং মেশিন, ওয়েদার-ফোরকাস্টিং সিমুলেটর, ট্রাফিক কন্ট্রোল কম্পিউটার, প্রতিরক্ষা-ভিত্তিক অ্যাপ্লিকেশন, অয়েল-এক্সপ্লোরেশন সিস্টেম ইত্যাদি হলো বিশেষ কম্পিউটারের উদাহরণ।
হার্ডওয়্যার ডিজাইন এবং ডেটা হ্যান্ডলিং এর ভিত্তিতে :
হার্ডওয়্যার ডিজাইন ও ডেটা হ্যান্ডলিং-এর ভিত্তিতে কম্পিউটারকে ৩ ভাগে ভাগ করা যায়, যথা –
- অ্যানালগ কম্পিউটার (Analog Computer)
- ডিজিটাল কম্পিউটার (Digital Computer)
- হাইব্রিড কম্পিউটার (Hybrid Computer)
অ্যানালগ কম্পিউটার :
- একটি অ্যানালগ কম্পিউটার ক্রমাগত ডেটা (Continuous Data) ব্যবহার করে কার্য সম্পাদন করে (ক্রমাগত ডেটা বলতে ভৌত পরিমাপ যা ক্রমাগত পরিবর্তিত হয়)।
- অ্যানালগ কম্পিউটারগুলি প্রাথমিকভাবে ভোল্টেজ, চাপ, বৈদ্যুতিক প্রবাহ, তাপমাত্রার মতো ভৌত একক পরিমাপ করতে এবং সেগুলিকে সংখ্যায় রূপান্তরিত করতে ব্যবহৃত হয়।
- এটি সংখ্যার পাটিগণিত গণনা, একটি বস্তুর দৈর্ঘ্য, বা বৈদ্যুতিক সার্কিটের একটি বিন্দুর মধ্য দিয়ে যাওয়া ভোল্টেজের পরিমাণ পরিমাপ করতেও ব্যবহৃত হয়।
- অ্যানালগ কম্পিউটারগুলি পরিমাপের মাধ্যমে তাদের সমস্ত ডেটা পায়।
- অ্যানালগ কম্পিউটার পরিসংখ্যান সংরক্ষণ করতে পারে না।
উদাহরণ : অ্যানালগ থার্মোমিটার, অ্যানালগ ঘড়ি, ভোল্ট মিটার ইত্যাদি।
ডিজিটাল কম্পিউটার :
- এই জাতীয় কম্পিউটার মূলত সিগনালের মাধ্যমে পরিচালিত হয়।
- ডিজিটাল কম্পিউটার মূলত বাইনারি ডিজিটের মাধ্যমে তথ্যবিশ্লেষণ ও অন্যান্য কাজ সম্পাদন করে।
- বাইনারি ডিজিটের অর্থ এমন এক পরিসংখ্যান পদ্ধতি যেখানে কেবল ২টি ডিজিট আছে যথা – 1 ও 0 । অর্থাৎ ডিজিটাল কম্পিউটারের কাছে সমস্ত তথ্যাদি কেবল ২টি ডিজিট (1 ও 0)-এর সমন্বয়।
- সিগনালিং -এর ক্ষেত্রে 1 বলতে বোঝায় ON ও বলতে 0 বোঝায় OFF ।
- বিভিন্ন ধরণের জটিল তথ্য প্রক্রিয়াকরণ ও লজিকাল অপারেশনের ক্ষেত্রে ডিজিটাল কম্পিউটার ব্যবহৃত হয়।
- প্রসঙ্গত আগে উল্লেখিত সুপার কম্পিউটার, মেইনফ্রেম কম্পিউটার, মিনি কম্পিউটার ও মাইক্রো কম্পিউটার-কে ডিজিটাল কম্পিউটারের অন্তর্ভুক্ত করা যায়।
উদাহরণ : ব্যক্তিগত ডেস্কটপ কম্পিউটার, ক্যালকুলেটর, ল্যাপটপ, স্মার্টফোন এবং ট্যাবলেট, Chromebooks, ডিজিটাল ঘড়ি, অ্যাকাউন্টিং মেশিন, ওয়ার্কস্টেশন, ইত্যাদি।
হাইব্রিড কম্পিউটার :
- অ্যানালগ কম্পিউটার ও ডিজিটাল কম্পিউটারের সমন্বয়ে গঠিত বিশেষ ধরণের জটীল কম্পিউটারকে হাইব্রিড কম্পিউটার বলা হয়।
- গবেষণার কাজে, আবহাওয়া পূর্বাভাসকেন্দ্রে অ্যানালগ পদ্ধতিতে তাপমাত্রা, বায়ুরচাপ ইত্যাদি গ্রহণ করে তা ডিজিটাল পদ্ধতিতে গণনার ক্ষেত্রে সুবিধাজনক এই হাইব্রিড কম্পিউটার ব্যবহৃত হয়।
- হাইব্রিড কম্পিউটারে উভয় (অ্যানালগ এবং ডিজিটাল) কম্পিউটারের বৈশিষ্ট্যগুলি অন্তর্ভুক্ত থাকার ফলে আরও বিভিন্ন ধরণের কঠিন সমীকরণগুলি অবিলম্বে সমাধান করা সম্ভব হয়।
উদাহরণ : অটো গ্যাসোলিন পাম্প মেশিন, চিকিৎসা ক্ষেত্রে ব্যবহৃত ইলেক্ট্রো কার্ডিওগ্রাম (ECG) মেশিন ইত্যাদি।
আরও দেখে নাও :
Also Check : কম্পিউটার ও তথ্য প্রযুক্তি সম্পর্কিত শব্দের পূর্ণরূপ – Computer Related Full Form
Also Check : কম্পিউটার MCQ – সেট ১০ । কম্পিউটারের MCQ প্রশ্ন ও উত্তর
To check our latest Posts - Click Here