পর্বতের শ্রেণীবিভাগ – বিভিন্ন ধরণের পর্বত
Classification of Mountains
পর্বতের শ্রেণীবিভাগ – বিভিন্ন ধরণের পর্বত
বন্ধুরা, চলো আজ জেনে নেওয়া যাক বিভিন্ন শ্রেণীর পর্বতের বিষয়ে কিছু তথ্য। এখানে মূলত উৎপত্তিগত বৈশিষ্ঠের ভিত্তিতে পর্বতের শ্রেণী বিভাগ জেনে নেবো আমরা। ভূগোলের গুরুত্বপূর্ণ এই বিষয়টি অত্যন্ত সাবলীল ও কিছু অত্যাধিক তথ্য সহকারে তুলে ধরা হল তোমাদের কাছে। পর্বতের শ্রেণীবিভাগ – বিভিন্ন ধরণের পর্বত ।
দেখে নাও : ভারতের মৃত্তিকার শ্রেণীবিভাগ – বিভিন্ন ধরণের মৃত্তিকা
পর্বতের সংজ্ঞা
পর্বত কাকে বলে ?
- পর্বত বলতে আমরা সাধারণত খাড়া ঢালযুক্ত উচ্চভূমিকে বুঝি। পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের তুলনায় আংশিক খাড়া ঢাল যুক্ত এবং কমপক্ষে ২০০০ফুট (৬০০মিটার ) বা তার বেশি উচ্চতাবিশিষ্ট উচ্চ ভূমিরূপকে পর্বত বলা হয়।
- পর্বত সাধারণত ১০০০মিটারের বেশি উঁচু হয়।
- পর্বতের থেকে কম উঁচু (সাধারণত ১০০০মিটারের কম) ও স্বল্পবিস্তৃত ভূমিরূপকে মূলত পাহাড় বলা হয়। পর্বতের সংজ্ঞানুযায়ী ৬০০ মিটার এর বেশি উঁচু হলেও অনেক ক্ষেত্রে ভূমিরূপকে পর্বত বলে গণ্য করা হয়না, স্বল্পবিস্তারের কারণে। সেক্ষেত্রে তখন তাকে পাহাড় বলা হয়।
দেখে নাও : কয়লা ও তার শ্রেণীবিভাগ – বিভিন্ন ধরণের কয়লা – PDF
শ্রেণিভিবাগ
কয় ধরণের পর্বত রয়েছে ? উৎপত্তিগত পার্থক্যের ভিত্তিতে পর্বতকে মূলত ৪টি ভাগে ভাগ করা হয় :
- ভঙ্গিল পর্বত
- আগ্নেয় পর্বত
- স্তূপ পর্বত
- ক্ষয়জাত পর্বত
ভঙ্গিল পর্বত :
সংজ্ঞা :
ভঙ্গিল শব্দটির উৎপত্তি হয়েছে “ভাঁজ” (Fold) শব্দ থেকে। অর্থাৎ, কোমল পাললিক শিলায় ক্রমে ভাঁজ পড়ে ও অন্তর্বর্তী বলের পার্শ্বচাপের ফলে যে বিস্তৃত পর্বতের সৃষ্টি হয় তাকে ভঙ্গিল পর্বত বলে।
উদাহরণ : এশিয়ার হিমালয়, উত্তর আমেরিকার রকি, দক্ষিণ আফ্রিকার কেপ, ভারতের আরাবল্লী ও মহাদেও ইত্যাদি।
বৈশিষ্ট :
- বিভিন্ন শ্রেণীর পর্বত গুলির মধ্যে ভঙ্গিল পর্বত নবীনতম।
- মহীখাত অঞ্চলে সঞ্চিত পাললিক শিলায় ভাঁজ পরে কাল ক্রমে এই জাতীয় পর্বত সৃষ্টি হয়েছে।
- এই শ্রেণীর পর্বতে জীবাশ্ম পরিলক্ষিত হয়।
- এই জাতীয় পর্বত গুলি নবীনতম হওয়ায় এর গঠন প্রক্রিয়া এখনো চলতে থাকে তাই এই জাতীয় পার্বত্য এলাকা ভূমিকম্পপ্রবন হয়।
- ভঙ্গিল পর্বতগুলি বহু শৃঙ্গবিশিষ্টি ও সূঁচালো প্রকৃতির হয়।
- এই জাতীয় পর্বতের বিস্তার ও উচ্চতা খুব বেশি হয়।
ভঙ্গিল পর্বতের শ্রেণীবিভাগ :
দীর্ঘকাল ধরে চলতে থাকা ভূ-আলোড়নের ফলে ভঙ্গিল পর্বতের সৃষ্টি। ভূ-আলোড়নের প্রকৃতি ও বয়সের ভিত্তিতে ভঙ্গিল পর্বতকে ২ ভাগে ভাগ করা হয় :
- প্রাচীন ভঙ্গিল পর্বত : ভারতের আরাবল্লী , ইউরোপের ক্যালিডোনিয়ান পর্বতশ্রেণী, আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের আপ্যালাচিয়ান ইত্যাদি। (উৎপত্তি প্রায় ১০ থেকে ২৫ মিলিয়ন বছর আগে)
- নবীন ভঙ্গিল পর্বত : ভারতের হিমালয়, দক্ষিণ আমেরিকার আন্দিজ, উত্তর আমেরিকার রকি, ইত্যাদি। (উৎপত্তি প্রায় ২০০ মিলিয়নেরও বেশি আগে)
দেখে নাও : বিভিন্ন প্রকার শিলা ও তার শ্রেণীবিভাগ – PDF
আগ্নেয় পর্বত :
সংজ্ঞা :
ভূগর্ভস্থ ম্যাগমা ভূপৃষ্ঠের দুর্বল ফাটল থেকে লাভা রূপে বেরিয়ে এসে ফাটল সংলগ্ন অঞ্চলে সঞ্চিত হতে হতে যে শঙ্কু আকৃতির শিলাস্তুপ বা পর্বতের সৃষ্টি করে তাকে তাকে আগ্নেয় পর্বত বলে।
উদাহরণ : জাপানের ফুজিয়ামা, ভারতের নারকোন্ডাম ও ব্যারেন, ইতালির ভিসুভিয়াস ইত্যাদি।
বৈশিষ্ট :
- ভূগর্ভস্থ বিভিন্ন পদার্থ (ম্যাগমা) সঞ্চিত হয়ে এই জাতীয় পর্বত সৃষ্টি হয় বলে একে অনেকসময় সঞ্চয়জাত পর্বতও বলা হয়।
- পর্বতগুলি শঙ্কু আকৃতির হয়।
- আগ্নেয় পর্বত থেকে লাভা রূপে ম্যাগমা নির্গমনের প্রক্রিয়াকে অগ্নুৎপাত বলে।
- আগ্নেয় পর্বতকে আগ্নেয়গিরিও বলা হয়।
- আগ্নেয় পর্বতে একটি মুখ্য জ্বালামুখ থাকে এবং এক বা একাধিক গৌণ জ্বালামুখ থাকতে পারে।
আগ্নেয় পর্বতের প্রকারভেদ :
- জীবন্ত বা সক্রিয় আগ্নেয়গিরি
- সুপ্ত আগ্নেয়গিরি
- মৃত আগ্নেয়গিরি
জীবন্ত আগ্নেয়গিরি :
যে সমস্ত আগ্নেয়গিরিতে বা পর্বতে সৃষ্টির পর থেকে আজ পর্যন্ত অগ্ন্যুৎপাত হয়ে চলেছে বা প্রায়ই ঘন ঘন অগ্ন্যুৎপাত হয় তাকে জীবন্ত আগ্নেয়গিরি বলে।
উদাহরণ : ইতালির ভিসুভিয়াস, ভারতের ব্যারেন, নারকোন্ডা, হাওয়াই দ্বীপের মৌনালোয়া ইত্যাদি।
সুপ্ত আগ্নেয়গিরি :
যে সমস্ত আগ্নেয়গিরি বা পর্বত অতীতে সক্রিয় ছিল, বর্তমানে অগ্ন্যুৎপাত বন্ধ আছে; কিন্তু অদূর ভবিষ্যতে আবার অগ্ন্যুৎপাত হওয়ার সম্ভাবনা আছে তাদের সুপ্ত আগ্নেয়গিরি বলে।
উদাহরণ : ইন্দোনেশিয়ার ক্রাকাতোয়া, জাপানের মাউন্ট ফুজি ইত্যাদি।
মৃত আগ্নেয়গিরি :
যে সমস্ত আগ্নেয়গিরি বা পর্বতে অগ্ন্যুৎপাত হয়না এবং ভবিষ্যতেও হওয়ার সম্ভবনা নেই তাদের মৃত আগ্নেয়গিরি বলে।
উদাহরণ : মায়ানমারের পোপো, মেক্সকোর কোটোপ্যাক্সি ইত্যাদি।
স্তূপ পর্বত
সংজ্ঞা :
পৃথিবীর অন্তর্জাত শক্তির ফলে সৃষ্ট সংকোচন-প্রসারণ, টান ও পারস্যচাপের ফলে ভূত্বকে ফাটল বা চ্যুতির সৃষ্টি হয়। এরকম দুটি সমান্তরাল ফাটলের মধ্যবর্তী অংশ চাপের কারণে উপরে উঠে গিয়ে বা ফাটলের পার্শ্ববর্তী অংশ দুটি নিচে নেমে গিয়ে মধ্যস্থ যে উঁচু পর্বত সৃষ্টি করে তাকে স্তূপ পর্বত বলে।
উদাহরণ : ভারতের পশ্চিমঘাট পার্বত্য অঞ্চল, আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের গ্রেট বেসিন অঞ্চল ইত্যাদি।
স্তূপ পর্বতগুলি হোর্স্ট পর্বত নামেও পরিচিত, আসলে স্তূপ পর্বতের এক বিশেষ ধরণ হল হোর্স্ট পর্বত। হোর্স্ট পর্বতের ক্ষেত্রে চ্যুতির মধ্যবর্তী অংশ উল্লম্ব ভাবে উত্থিত হয় কিন্তু স্তুপ পর্বতের ক্ষেত্রে মধ্যবর্তী অংশটি সামান্য তির্যক বা হেলানো ভাবে উত্থিত হয়।
বৈশিষ্ট :
- ভূত্বকের এক বিশাল অংশের উত্থান অবনমনের ফলে এই জাতীয় পর্বতের সৃষ্টি হয়।
- এই জাতীয় পর্বত ভঙ্গিল পর্বতের তুলনায় কম বিস্তৃত হয়।
- বেশির ভাগ ক্ষেত্রে স্তূপ পর্বতের একদিকের ঢাল খুব খাড়া ও অপর দিকের ঢাল মৃদু প্রকৃতির হয়।
- দুটি হোর্স্ট বা স্তূপ পর্বতের মাঝে যে নিচু অংশ পরিলক্ষিত হয় তাকে গ্র্যাবেন বা গ্রস্ত উপত্যকা বলা হয়। যেমন : জার্মানি রাইন নদীর গ্রস্ত উপত্যকা, ভারতের নর্মদা নদীর গ্রস্ত উপত্যকা ইত্যাদি।
ক্ষয়জাত পর্বত
সংজ্ঞা :
বহুকাল ধরে বিভিন্ন বহির্জাত প্রক্রিয়া যেমন- বৃষ্টি, বায়ু, হিমবাহ, জলপ্রবাহ ইত্যাদি বিভিন্ন প্রাকৃতিক শক্তির দ্বারা ভঙ্গিল পর্বত, স্তূপ পর্বত, আগ্নেয় পর্বত বা বিভিন্ন মালভুমি ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে যে অনুচ্চ বিচ্ছিন্ন পর্বতের সৃষ্টি করে তাকে ক্ষয়জাত পর্বত বলে।
উদাহরণ : পূর্বঘাট পর্বত, স্পেনের সিয়েরা নেভাদা, নীলগিরি, রাজমহল পর্বত ইত্যাদি।
বৈশিষ্ট :
- এ জাতীয় পর্বতের চারপাশের ঢাল খুব বেশি খাড়া হয়না, ও উচ্চতাও বেশি হয়না।
- বিভিন্ন উচ্চভূমি বা পর্বতের কোমল শিলাস্তর ক্ষয়প্রাপ্ত হয় ও অবশিষ্ট কঠিন শিলা নিয়ে এই পর্বত গঠিত তাই একে অবশিষ্ট পর্বতও বলা হয়।
- এই জাতীয় পর্বতের বিশেষ কোনো আকৃতি পরিলক্ষিত হয়না এবং এর শিখরদেশ তীক্ষ্ণ হয়না তাই পর্বত গুলির আকার প্রায় গম্বুজ আকৃতির হয়।
To check our latest Posts - Click Here