সাঁওতাল বিদ্রোহ – কারণ, নেতা, পতনের কারণ – Santhal rebellion – PDF Download
Santhal rebellion

সাঁওতাল বিদ্রোহ – কারণ, নেতা, পতনের কারণ – Santhal rebellion
আজ আমরা আলোচনা করবো ভারতের অন্যতম এক উপজাতি বিদ্রোহ- ‘সাঁওতাল বিদ্রোহ’ নিয়ে। এই সাঁওতালবিদ্রোহ, ‘সাঁওতাল হুল’ নামেও পরিচিত (‘হুল’ শব্দের অর্থ বিদ্রোহ)। ব্রিটিশদের অত্যাচার কেবল সাধারণ জনগণের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিলোনা, আদিবাসী সাঁওতালদের প্রতিও তারা শোষণ, অত্যাচার করতে বাকি রাখেনি; যার ফল স্বরূপই এই বিদ্রোহের ঘনঘটা।
সূচনাকাল :
সাঁওতাল বিদ্রোহ কবে হয়েছিল ?
এই বিদ্রোহের সূচনা হয় ১৮৫৫ সালে।
আরও দেখে নাও : নীল বিদ্রোহ – কারণ ফলাফল – Indigo Revolt
সূচনাস্থান :
সাঁওতাল বিদ্রোহ কোন অঞ্চলে হয়েছিল ?
পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ ও বিহারের ভাগলপুর।
বিদ্রোহের কারণ :
সাঁওতাল বিদ্রোহের বিভিন্ন কারণগুলি দেওয়া রইলো। সাঁওতাল বিদ্রোহ কেন হয়েছিল ?
অর্থনৈতিক কারণ :
- সাঁওতালরা সাধারণত বীজ বপনের জন্য এবং অন্যান্য উদ্দেশ্যে স্থানীয় সাহুকার ও মহাজনদের কাছ থেকে অত্যন্ত চড়া সুদে ঋণ গ্রহণ করতো।
- সাঁওতালরা ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হলে সাহুকার ও মহাজনরা সাওতাঁলদের জমি দখল করতে থাকে।
- এই ব্যাপারে, ব্রিটিশ অফিসার এবং পুলিশ সর্বদা সাহুকার, জমিদার এবং মহাজনদের সমর্থন করতো।
- কোম্পানি যে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত প্রবর্তন করে তাতে সাঁওতাল দের বসবাসের অঞ্চলও কোম্পানির রাজস্বের অধীনে পরে।
- সাঁওতালরা মহাজন ও কোম্পানির কর্মচারীদের অত্যাচার থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য তাদের পুরোনো বাঁকুড়া, মেদিনীপুর, বীরভূম, মানভূম, ছোটনাগপুর ও পালামৌ-এর গভীর বনভূমির অঞ্চল থেকে পালিয়ে এসে রাজমহল পাহাড়ের পাদদেশীয় ও সংলগ্ন অঞ্চলে বন পরিষ্কার করে বসবাস শুরু করে এবং এই অঞ্চলেরই নাম দেয় ‘দামিন-ই-কোহি’। কিন্তু এখানে এসেও রেহাই পাইনি তারা।
- মহাজন ও সাহুকাররা সাঁওতালদের ‘দামিন-ই-কোহি’ও দখল করতে থাকে।
- বনজ সম্পদ ব্যবহারের জন্য ব্রিটিশদের প্রনয়ণ করা নতুন বননীতি বনজ সম্পদের ওপর সাঁওতালদের অধিকারকে খর্ব করে, যা সাঁওতালদের মধ্যে চরম হতাশার সৃষ্টি করেছে।
- সাঁওতালরা যে প্রকৃতির উপর নির্ভর করে জীবনযাপন করতো, তাতেও ব্রিটিশরা বাঁধার সৃষ্টি করে।
- কোনো বেতন ছাড়াই ভাগলপুর এবং বর্ধমানের মধ্যে রেললাইন স্থাপনের জন্য সাঁওতালদের জোরপূর্বক বেগার খাটানো হয়েছিল।
আরও দেখে নাও : ভারতের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিদ্রোহ / আন্দোলন / বৈপ্লবিক ঘটনাসমূহ ও নেতৃবৃন্দ
ধর্মীয় কারণ :
- ১৮১৩ সালের চার্টার অ্যাক্ট খ্রিস্টান মিশনারিদের ভারতে খ্রিস্টান ধর্ম প্রচারের অনুমতি দেয়।
- খ্রিস্টান মিশনারিরা ভারতের উপজাতি সম্প্রদায়কে ধর্মপ্রচারের লক্ষ্যবস্তু করেতোলে এবং সাঁওতালদের ঐতিহ্যগত বিশ্বাস ও আচরণবিধির ভেঙ্গে তাদের ধর্মান্তরিত করা শুরু করে।
- সাঁওতালরা ছিল দরিদ্র অসহায়, সামান্য খাবারের ও অন্যান্য দ্রব্যাদির লোভ দেখিয়ে তাদের ধর্মান্তরিত করা সহজ ছিল মিশনারিদের কাছে, এই সুযোগতাই নিয়েছিল তারা।
সামাজিক ও রাজনৈতিক কারণ :
- সাঁওতালদের ঐতিহ্যবাহী মাঞ্জি ব্যবস্থা এবং পারহা পঞ্চায়েত ব্যবস্থায় গ্রাম পর্যায়ে গোষ্ঠীগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং বিচার বিবেচনা করা হতো।
- কিন্তু সাঁওতালদের এইসমস্ত গোষ্ঠীগত ব্যবস্থাপনাগুলি ব্রিটিশদের বিভিন্ন আইন প্রণয়নের জন্য শেষ হতে বসে।
প্রত্যক্ষ কারণ :
- ১৮৫৫ সালের জুন মাসে একটি চুরির ঘটনায় অনেক সাঁওতাল লোককে স্থানীয় পুলিশ গ্রেফতার করে এবং নির্মমভাবে মারধর করে।
- এই ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় ক্ষুব্ধ সাঁওতালদের হাতে থানার ইন্সপেক্টর নিহত হন, এবং এর মাধ্যমেই সাঁওতাল বিদ্রোহের সূত্রপাত হয়।
বিদ্রোহ :

- ৩০শে জুন, ১৮৫৫ সালে, সিধু এবং কানহুর নেতৃত্বে, ৬০০০ সাঁওতালদের একটি দল ভাগিনীডিহিতে একত্রিত হয়েছিল এবং তীর ধনুকের মতো ঐতিহ্যবাহী অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছিল এবং স্বরাজ স্থাপনের উদ্যেশ্যে শপথ গ্রহণ করেছিল।
- সিধু এবং কানহু তাদের ঐতিহ্যগত বিচার ব্যবস্থার উপর ভিত্তি করে নতুন রাজস্ব নীতি এবং প্রাকৃতিক ন্যায়বিচারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।
- বিদ্রোহকারীদের মধ্যে ধর্মীয় অনুভূতি জাগিয়ে তোলার জন্য তারা বলেছিলেন যে সাঁওতালদের ঈশ্বর (সিং বোঙ্গা) তাদের স্বপ্নে এসেছিলেন এবং দিকুদের (দিকু অর্থ শত্রু) বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার এবং দামিন-ই-কোহ অঞ্চলে স্বরাজ প্রতিষ্ঠা করার নির্দেশ দিয়েছিলেন।
- বিদ্রোহের সময়, সাঁওতালরা পুলিশ এবং ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষের উপর আক্রমণ করে।
- এর পাশাপাশি তারা মহাজন ও সাহুকারদেরও লুটপাট ও হত্যা করেছে।
- অল্প সময়ের মধ্যে বিদ্রোহ দামিন-ই-কোহ অঞ্চলের পাশাপাশি ধানবাদ, ভাগলপুর, সিংভূম/বীরভূম অঞ্চল জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। বিদ্রোহকারীদের সংখ্যা ৬০০০ থেকে ৬০০০০-এ প্রায় ১০ গুণ বেড়ে ওঠে।
বিদ্রোহের পতন :
- বিদ্রোহের মাত্রা দেখে ব্রিটিশ প্রশাসন অবিলম্বে দামিন-ই-কোহ অঞ্চলে মার্শাল আইন জারি করার নির্দেশ দেয়।
- মেজর বারোকে বিদ্রোহ দমনের জন্য সেনাবাহিনীর ১০টি ব্যাটালিয়ন সহ পাঠানো হয়েছিল কিন্তু তারা তাদের বিদ্রোহ দমনের প্রচেষ্টায় ব্যর্থ হয়েছিলেন।
- মেজর বারো এবং তার ব্যাটালিয়নের ব্যর্থতার পর, ব্রিটিশ প্রশাসন বিদ্রোহ দমনের জন্য ক্যাপ্টেন আলেকজান্ডার এবং লেফটেন্যান্ট থমসনের নেতৃত্বে সেনাবাহিনীর একটি বড় ইউনিট প্রেরণ করে।
- এবার তারা বিদ্রোহ দমনে সফল হয়। বিদ্রোহ দমনেই সময় সিধু এবং কানহু সহ ১৫০০০ এরও বেশি সাঁওতাল নিহত হয় এবং অনেককে গ্রেপ্তার করা হয়। তাই শেষ পর্যন্ত এই বিদ্রোহ থমকে যায়।
১৮৫৬ খ্রিষ্টাব্দের ফেব্রুয়ারি মাসে নিষ্ঠুর দমননীতির মাধ্যমে সরকার এই বিদ্রোহ দমন করে। সিধু-কানহু সহ অন্যান্য নেতাদের ফাঁসি হয়। বহু সাঁওতাল গ্রাম ধ্বংস করা হয়।
ঐতিহাসিকদের মতামত
- রণজিৎ গুহ তাঁর ‘প্রোস অফ কাউন্টার ইন্সার্জেন্সী’ প্রবন্ধে দেখিয়েছেন যে আধুনিক আর্থ-সামাজিক চেতনা নয়, সাঁওতালদের সনাতনী ধর্মীয় ভাবনাই ছিল বিদ্রোহের মূল চালিকাশক্তি।
- নরহরি কবিরাজ এই বিদ্রোহে নিম্নবর্গীয় মানুষের প্রভূত যোগদান দেখে এই বিদ্রোহকে “নিম্নশ্রেণীর গণবিদ্রোহ” বলেছেন।
- বিপাশা চন্দ্র, বরুণ দে ও অমলেশ ত্রিপাঠী প্রমুখেরা মনে করেন যে, অরণ্যে সাঁওতালদের অধিকারকে কেন্দ্র করে সাঁওতাল বিদ্রোহের সূত্রপাত হয়েছিল।
এই নোটটির পিডিএফ নিচের ডাউনলোড সেকশন থেকে ডাউনলোড করে নাও ।
Downoad Section
- File Name: সাঁওতাল বিদ্রোহ – কারণ, নেতা, পতনের কারণ – Santhal rebellion – বাংলা কুইজ
- File Size: 2.2 MB
- No. of Pages: 05
- Format: PDF
- Language: Bengali
- Subject: Indian History
To check our latest Posts - Click Here