Geography NotesGeneral Knowledge Notes in Bengali

হিমালয় পর্বতমালা – উৎপত্তি – উল্লেখযোগ্য শৃঙ্গ – বিভাগ – PDF

Himalayan Ranges: Shiwaliks, Middle Himalayas, Greater Himalayas, Trans-Himalayas

হিমালয় পর্বতমালা – উৎপত্তি – উল্লেখযোগ্য শৃঙ্গ – বিভাগ

আজকে আমরা আলোচনা করবো হিমালয় পর্বতমালা নিয়ে। দেখে নেবো হিমালয় পর্বতমালা – উৎপত্তি – উল্লেখযোগ্য শৃঙ্গ – বিভাগ ।হিমালয় পর্বতমালা (হিম+আলয় = বরফের ঘর) এশিয়ার একটি পর্বতমালা যা তিব্বতীয় মালভূমি থেকে ভারতীয় উপমহাদেশকে পৃথক করেছে। আফগানিস্তান, পাকিস্তান, ভারত, চীন, নেপাল ও ভুটান এশিয়ার এই ছয় দেশে বিস্তৃত হিমালয় পর্বতমালায় মাউন্ট এভারেস্ট, কেটু, কাঞ্চনজঙ্ঘা প্রভৃতি বিশ্বের উচ্চতম শৃঙ্গগুলি অবস্থান করছে। এই পর্বতমালা থেকে বিশ্বের তিনটি প্রধান নদী সিন্ধু, গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্র তাদের বিভিন্ন প্রধান ও অপ্রধান উপনদীসহ উৎপন্ন হয়েছে।

হিমালয় পর্বতমালা বিশ্বের সর্বোচ্চ ও সর্বাপেক্ষা নবীন পর্বতশ্রেণী। এটি কোন একক শ্রেণী বা মালা নয়, বরঞ্চ একটি ধারাবাহিক শ্রেণী, একে অন্যের প্রায় সমান্তরাল ধারায় লম্বা দূরত্ব স্থাপন করেছে।

পশ্চিমে সিন্ধু নদ থেকে এটি পূর্বে ব্রহ্মপুত্র পর্যন্ত বৃস্তিত। এটি প্রায় ৫০০০ কিলোমিটার দীর্ঘ। এটি কাশ্মীর অঞ্চলে প্রায় ৫০০ কিলোমিটার চওড়া এবং অরুণাচল প্রদেশে প্রায় ২০০ কিলোমিটার চওড়া। হিমালয়ের গড় উচ্চতা ২০০০ মিটার।

হিমালয় পর্বতমালার সৃষ্টির কারণ

মেসোজোয়িক যুগে ভারতের উত্তরাঞ্চলীয় সঞ্চার (drift), ক্রিটেসিয়াস-প্রাক টারশিয়ারি যুগে সিন্ধু-সাংপো (Tsangpo) সন্ধিবলয় এবং সেনোজোয়িক যুগে ভারতীয় প্লেট ও এশিয়ান প্লেটের মধ্যে সংঘর্ষ ও এর কারণে সৃষ্ট সংকোচন ও বিকৃতি হিমালয় পর্বতমালা সৃষ্টির জন্য দায়ী।

হিমালয়ের বিভাগ

প্রস্থ  বরাবর হিমালয়কে চারটি ভাগে ভাগ করা যায়।

প্রস্থ  বরাবর বিভাগ

হিমালয়ের বিভাগ
হিমালয়ের বিভাগ

উচ্চ হিমালয় বা হিমাদ্রি 


এটি The Great Himalaya, Inner Himalaya, Central Himalaya নামেও পরিচিত।

এর গড় উচ্চতা প্রায় ৬০০০ মিটার এবং বিশ্বের কিছু উচ্চতম শৃঙ্গ এখানে অবস্থিত। যেমন –

শৃঙ্গের নামউচ্চতা (মি)বিবরণ
এভারেস্ট৮৮৪৮চীন ও নেপাল সীমান্তে অবস্থিত বিশ্বের সর্বোচ্চ পর্বত শৃঙ্গ।
কাঞ্চনজঙ্ঘা৮৫৮৬বিশ্বের ৩য় সর্বোচ্চ শৃঙ্গ, ভারতের সর্বোচ্চ (সিকিম) এবং নেপালের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ শৃঙ্গ।
লোৎসে৮৫১৬পৃথিবীর ৪র্থ উচ্চতম। নেপাল এবং তিবেতের মধ্যে অবস্থিত, এভারেষ্টের ছায়াতে।
মাকালু৮৪৬২নেপালে অবস্থিত বিশ্বের ৫ম সর্বোচ্চ শৃঙ্গ।
চো ওইয়ু৮২০১পৃথিবীর ৬ষ্ঠ উচ্চতম। নেপালে অবস্থিত।
ধবলগিরি৮১৬৭নেপালে অবস্থিত বিশ্বের ৭ম সর্বোচ্চ শৃঙ্গ।
মানাসলু৮১৫৬পৃথিবীর ৮ম উচ্চতম। গুরখা হিমাল, নেপালে অবস্থিত।
নাংগা পর্বত৯১২৫পাকিস্তানে অবস্থিত বিশ্বের ৯ম সর্বোচ্চ শৃঙ্গ। আরোহণের জন্য বিপজ্জনক পর্বতের অন্যতম।
অন্নপূর্ণা৮০৯১নেপালে অবস্থিত বিশ্বের ১০ম সর্বোচ্চ শৃঙ্গ।
নন্দা দেবী৭৮১৭ভারতের উত্তরখন্ডে অবস্থিত।
হিমালয় পর্বতের উচ্চতম শৃঙ্গ তালিকা

হিমাদ্রি হিমালয়ে কিছু গিরিপথ আছে এবং এর উচ্চতা প্রায় ৮৫০০ মিটারের বেশি। এদের মধ্যে কয়েকটি হলো

  • হিমাচলপ্রদেশের – সিপকি লা, বড়ো লেপ্চা লা
  • কাশ্মীরের – বুরজিল, বানিহাল, চ্যাংলা, জোজিলা
  • উত্তরাখণ্ডের – নীতি, লিপুলেখ, থাগলা
  • সিকিমের – জেলেপ লা, নাথুলা

দেখে নাও : ভারতের উল্লেখযোগ্য গিরিপথ সমূহ তালিকা –  PDF –  গুরুত্বপূর্ণ পাস্

অবহিমাচল বা হিমাচল 


  • গড় উচ্চতা : ৩৭০০ – ৪৫০০ মিটার।
  • এটি Middle বা the Lesser Himalaya নামেও পরিচিত।
  • পর্বত ও উপত্যকা এখানে চারিদিকে বৃস্তিত ( পর্বতগুলি ৫০০০ মিটার পর্যন্ত এবং উপত্যকাগুলি ১০০০ মিটার উঁচু ) ।
  • এই অঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ পর্বত : ধৌলাধার, পীরপাঞ্জাল, নাগটিব্বা, মুসৌরি।
  • এই অঞ্চলের কিছু গুরুত্বপূর্ণ শৈল শহর – সিমলা, রানীক্ষেত, চক্রতা, মুসৌরি, নৈনীতাল, আলমোড়া, দার্জিলিং।

দেখে নাও : ভারতের বিখ্যাত কিছু শৈল শহরের তালিকা –  PDF

বহিঃহিমালয় বা শিবালিক 


  • এটি Outer Himalaya নামেও পরিচিত।
  • হিমালয়ের সর্বনিম্ন অঞ্চল ( গড় উচ্চতা : ৯০০ – ১২০০ মিটার ) এটি।
  • এটি হিমালয়ের নবীনতম অংশ।
  • পাদদেশের পাহাড়গুলি সৃষ্টি করেছে। অবহিমালয় ও সমভূমির মধ্যে অবস্থিত শিবালিক হিমালয়।
  • শিবালিকের উত্তরে উপত্যকাগুলি ‘দুন’ নামে পরিচিত। যেমন – দেরাদুন (বৃহত্তম ), কোটা, পাটলি, চৌখাম্বা।
  • গ্রেটার হিমালয় ও লেসার হিমালয়কে পৃথক করেছে : Main Central Thrust (MCT)
  • লেসার হিমালয় ও শিবালিককে পৃথক করেছে : Main Boundary Thrust (MBT)
  • শিবালিক ও গঙ্গা সমভূমিকে পৃথক করেছে : Himalayan Front Fault (HFF)

ট্রান্স-হিমালয় অঞ্চল


  • এটি টেথিস হিমালয় বা Trans-Himalaya নামে পরিচিত।
  • গ্রেট হিমালয়ের উত্তরে অবস্থিত।
  • এটি তিব্বত হিমালয় নামেও পরিচিত।
  • এই অঞ্চলের গড় উচ্চতা – ৩০০০ মিটার।
  • এটির গুরুত্বপূর্ণ অংশ গুলি হলো – কারাকোরাম, লাদাখ, জাস্কর,  ইত্যাদি।
  • এই অঞ্চলের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ গডউইন অস্টিন বা K2 ( উচ্চতা ৮৬১১ মিটার, পাক অধিকৃত কাশ্মীরে অবস্থিত )
  • অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ শৃঙ্গগুলি হলো – হিডেন শৃঙ্গ (৮০৬৫ মিটার), ব্রড শৃঙ্গ (৮০৪৭ মিটার ), গাশের ব্রাম ১১ (৮০৩৫ মিটার ) ।
  • দীর্ঘতম হিমবাহ নুব্রা উপত্যকার সিয়াচেন। এটি প্রায় ৭২ কিলোমিটার দীর্ঘ। বিয়াফো, বাতারো, হিসপার ইত্যাদি এই অঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ হিমবাহ।
  • ট্রান্স-হিমালয়ে উৎপত্তি এমন কিছু বিখ্যাত নদী – সিন্ধু, ব্রহ্মপুত্র, শতদ্রু।

দেখে নাও : ভারতের বিভিন্ন নদ-নদী – তাদের উপনদী, শাখানদী ও অন্যান্য তথ্য

দৈর্ঘ্য বরাবর হিমালয়কে  প্রধান দুটি ভাবে ভাগ করা যায়।

ভূপ্রাকৃতিক বৈশিষ্ট অনুসারে বিভাগ

পশ্চিম হিমালয় 


পশ্চিমে জম্মু ও কাশ্মীরের নাঙ্গাপর্বত থেকে পূর্বে নেপালের কালী নদী পর্যন্ত পশ্চিম হিমালয় অবস্থিত।

আঞ্চলিক বৈশিষ্ট্য অনুসারে পশ্চিম হিমালয়ের বিভিন্ন বিভাগগুলাে হল-

  • পাঞ্জাব হিমালয় : সিন্ধু ও শতদ্রু নদীবাহিত পলি দ্বারা পাঞ্জাব হিমালয় গঠিত। এর পূর্ব দিকে রয়েছে কাশ্মীর এবং হিমাচল হিমালয়।
  • কাশ্মীর হিমালয় : প্রায় সমগ্র জম্মু ও কাশ্মীর জুড়ে এর অবস্থান। কারাকোরাম, লাদাক, জাস্কর, পিরপাঞ্জল এখানকার প্রধান পর্বত। জোজিলা, পিরপাঞ্জল, বানিহাল প্রভৃতি এখানকার প্রধান গিরিপথ। জোজিলার দক্ষিণে রয়েছে হিন্দুতীর্থস্থান অমরনাথ গুহা।

কাশ্মীর উপত্যকা

  • এখানকার ধাপযুক্ত জমিকে বলা হয় ‘কারেওয়া’।
  • কারেওয়া জাফরান বা স্যাফরন বা কেশর চাষের জন্য বিখ্যাত।
  • কাশ্মীর হিমালয়ে ডাল ও উলার হ্রদ অবস্থিত।
  • হিমাচল হিমালয় : হিমাচলপ্রদেশের অন্তর্গত এই অংশে রয়েছে। ধওলাধর, পিরপাঞ্জাল, নাগটিক্কা, মুসৌরি প্রভৃতি পর্বতশ্রেণি। আছে। কাঙড়া উপত্যকা, রােটাং গিরিপথ।
  • কুমায়ুন হিমালয় : পশ্চিম হিমালয়ের এই অংশটি উত্তরাখণ্ডের অন্তর্গত। শতদ্রুও কালী নদীর মধ্যভাগে কুমায়ুন হিমালয় অবস্থিত। নন্দাদেবী, কামেট, চৌখাম্বা, ত্রিশূল প্রভৃতি এখানকার প্রধান শৃঙ্গ। গঙ্গোত্রী, যমুনােত্রী – হিমবাহ দুটি এখানে রয়েছে। এখানকার নিম্ন উপত্যকাগুলাে ‘দুন’নামে পরিচিত।

পূর্ব হিমালয়/পূর্বাচল :


কালী ও তিস্তা নদী উপত্যকা নেপাল হিমালয় নামে পরিচিত। তিস্তা ও দিহং নদী উপত্যকা আসাম হিমালয় নামে পরিচিত। সিঙ্গলিলা পর্বতশ্রেণি নেপাল ও ভারতকে পৃথক করেছে।

পুর্ব হিমালয়ে একেবারে পূর্ব সীমান্তে ব্রম্মপুত্র নদ রয়েছে। হিমালয় থেকে উৎপন্ন হয়ে দিহং নদী দক্ষিণে কিছুটা বেঁকে পূর্ব সীমান্ত দিয়ে ভারতে প্রবেশ করেছে। পূর্বদিকের এই পাহাড় পর্বতগুলাে পূর্বাচল নামে পরিচিত।

দেখে নাও : রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ –  PDF

এই পাহাড়শ্রেণি উত্তর-পূর্বাঞলের রাজ্যগুলােতেও প্রসারিত হয়েছে। এই পাহাড়শ্রেণিগুলাে শক্ত বালুকাময় পলি দ্বারা গঠিত। উত্তর-পূর্বাঞ্চলের এই পাহাড়শ্রেণিগুলাে পরস্পর সমান্তরালভাবে বিন্যস্ত এবং ঘন অরণ্যাবৃত।

পূর্বাচলের প্রধান পর্বত পাটকই, মিশমি, বুম, নাগা, লুসাই, কোহিমা পাহাড়, মিজো পাহাড়, জম্পুইটাং প্রভৃতি নামে অরুণাচল, আসাম, নাগাল্যান্ড, মণিপুর, মিজোরাম, ত্রিপুরা প্রভৃতি রাজ্যের মধ্য দিয়ে আরও দক্ষিণে প্রসারিত হয়েছে। পূর্বাচলের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ দাফাকুম (মিশমি পাহাড়)।

Download Section :

  • File Name : হিমালয় পর্বতমালা – উৎপত্তি – উল্লেখযোগ্য শৃঙ্গ – বিভাগ – বাংলা কুইজ
  • File Size : 2.8 MB
  • No. of Pages : 05
  • Format : PDF
  • Language : Bengali
  • Subject : Indian Geography

To check our latest Posts - Click Here

Telegram

Related Articles

Back to top button