মেঘ কি ? মেঘ কতপ্রকার ও কি কি ? – PDF
Different Types of Clouds
মেঘ কি ? মেঘ কতপ্রকার ও কি কি ?
প্রিয় পাঠকেরা, আজকে আমাদের আলোচ্য বিষয় – মেঘ কি ? মেঘ কতপ্রকার ও কি কি ?। কোন ধরণের মেঘের বজ্রপাত বেশি হয়, মেঘ কি ভাবে সৃষ্টি হয়, মেঘের শ্রেণীবিভাগ প্রভৃতি বিভিন্ন তথ্য আজকের এই পোস্ট থেকে তোমার পেয়ে যাবে।
মেঘ কি ?
বায়ুমণ্ডলে ভাসমান অতি ক্ষুদ্র জলকণা বা তুষারকণার সমষ্টিকে মেঘ বলে।।
মেঘ কিভাবে সৃষ্টি হয়?
জলীয় বাষ্পপূর্ণ হাল্কা বায়ু ক্ৰমশঃ ওপরে উঠলে অতিরিক্ত শীতলতার সংস্পর্শে সম্পৃক্ত হয়। এই সম্পৃক্ত বায়ুর তাপমাত্রা শিশিরাঙ্কের নিচে নেমে গেলে ঘনীভবনের ফলে অতিরিক্ত জলীয় বাষ্প ঘনীভূত হয়ে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জলকণা ও তুষারকণায় পরিণত হয়। বায়ুতে ভাসমান ধূলিকণা, কয়লার কণা প্রভৃতিকে আশ্রয় করে এই সমস্ত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জলকণা ও তুষারকণা আকাশে ভেসে বেড়ায়। এদের মেঘ বলে।
মেঘের শ্রেণীবিভাগ :
আকাশে বিভিন্ন আকৃতির, বিভিন্ন রঙের এবং বিভিন্ন প্রকৃতির মেঘ দেখা যায়। ক্ষণে ক্ষণে এই সব মেঘের চরিত্রও পরিবর্তিত হয়। আবার, অধিকাংশ ক্ষেত্রে অনেকগুলি মেঘ একসঙ্গে মিশে আকাশে ভেসে বেড়ায়। তাই মেঘের শ্রেণীবিভাগ করা খুবই কঠিন ব্যাপার।
সাধারণতঃ বিভিন্ন প্রকার মেঘকে দু’ভাগে ভাগ করা হয়ে থাকে; যেমন- [১] উচ্চতা অনুসারে এবং [২] আকৃতি ও চেহারা অনুসারে।
[১] উচ্চতা অনুসারে মেঘের শ্রেণীবিভাগ
ভূ-পৃষ্ঠ থেকে উচ্চতা অনুযায়ী মেঘকে প্রধানতঃ তিন ভাগে ভাগ করা হয়ে থাকে; যেমন—
[i] নিচু মেঘ (ভূ-পৃষ্ঠ থেকে উচ্চতা ২,১৩৫ মিটার),
[ii] মাঝারি উঁচু মেঘ (২,১৩৫ মিটার —৬,০৯৭ মিটার),
[iii] উঁচু মেঘ (৬,০৯৭ মিটার—১২,৩৫০ মিটার)।
[২] আকৃতি ও চেহারা অনুসারে মেঘের শ্রেণীবিভাগ
ইংরেজ রসায়নবিদ লিউক হাওয়ার্ড আকৃতি ও চেহারা অনুসারে মেঘকে চার ভাগে ভাগ করেছেন; যেমন—
[i] সিরাস বা অলক মেঘ,
[ii] স্ট্রাটাস বা স্তর মেঘ,
[iii] কিউমুলাস বা স্তুপ মেঘ, এবং
[iv] নিম্বাস বা নীরদ মেঘ বা ঝা মেঘ বা বাদল মেঘ।
প্রধান প্রধান মেঘের বৈশিষ্ট্য :
১. উঁচু মেঘ ( ৬,০৯৭ – ১২,৩৫০ মিটার )
সিরাস বা অলক মেঘ
[i] আকাশে সর্বোচ্চ স্তরের মেঘ।
[ii] অলক শব্দের অর্থ কেশগুচ্ছ। ঘােড়ার লেজ বা ঝাটা বা চামরের মত এই মেঘের আকৃতি।
[iii] দিনের আলােয় এই মেঘকে সাদা পালকের মত দেখায়, কিন্তু সূর্যাস্তের আলােয় এই মেঘে অপূর্ব বর্ণচ্ছটার সৃষ্টি হয়।
[iv] এই মেঘ সাদা ও স্বচ্ছ হয়।
[v] আবহাওয়া পরিষ্কার থাকে, বৃষ্টিপাত প্রায় হয় না।
সিরো-কিউমুলাস বা অলক-স্তুপ মেঘ
[i] গােলাকার সুপের মত ছােট ছােট সাদা মেঘ ঢেউ-এর মত আকাশে ভেসে থাকে।
[ii] অতি সূক্ষ্ম তুষারকণা দিয়ে এই মেঘ গঠিত।
[iii] আবহাওয়া পরিষ্কার থাকে, বৃষ্টিপাত প্রায় হয় না।
সিরো-স্ট্রাটাস বা অলক-স্তর মেঘ
[i] পাতলা ফিনফিনে সাদা পর্দা বা চাদরের মত দেখতে।
[ii] এই মেঘের মধ্য দিয়ে সূর্য ও চাঁদকে উজ্জ্বল মণ্ডলের মত দেখায়।
[iii] আকাশে রামধনু দেখা যায়।
[iv] এই মেঘ ঝড়ের সঙ্কেত বহন করে।
[v] আকাশ পরিষ্কার থাকে কিন্তু কখনও কখনও বৃষ্টি হয়।
অল্টো-কিউমুলাস বা মাঝারি উঁচু স্তুপ মেঘ
[i] গােলাকার পশমগুচ্ছের মত আকৃতি বিশিষ্ট এই মেঘের রঙ ধূসর।
[ii] এই মেঘের মাঝে মাঝে নীল আকাশ দেখা যায়।
[iii] এই মেঘের স্তুপগুলি আকারে বড় এবং ঢিবির মত দেখায়।
[iv] আকাশ পরিষ্কার থাকে।
২. মাঝারি উঁচু মেঘ ( ২,১৩৫ – ৬,০৯৭ মিটার )
অল্টো-স্ট্রাটাস বা মাঝারি উঁচু স্তর মেঘ
[i] এই মেঘের রঙ ধূসর বা নীল।
[ii] চাদরের মত এই মেঘ সমগ্র আকাশ জুড়ে ভেসে থাকে।
[iii] এই মেঘের মধ্য দিয়ে সূর্যরশ্মি ক্ষীণভাবে আসে এবং সূর্যকে আবছা ও অনুজ্জ্বল দেখায়।
[iv] ব্যাপক বৃষ্টিপাত হয় এবং অনেকক্ষন ধরে চলে।
৩. নিচু মেঘ ( ভূপৃষ্ঠ থেকে ২,১৩৫ মিটার )
স্ট্রাটো-কিউমুলাস বা নিচু স্তর মেঘ
[i] মাঝ আকাশের অল্টো-কিউমুলাস মেঘ আরও ভারী ও ঘন হয়ে নিচে নেমে এসে এই মেঘের সৃষ্টি করে।
[ii] অনেক সময় কিউমুলাস মেঘের ওপর ও নিচের অংশ সমতল হয়ে এই মেঘের সৃষ্টি হয়।
[iii] এই মেঘের রঙ ধূসর থেকে কালাে পর্যন্ত হয়।
[iv] নাতিশীতােষ্ণ অঞ্চলে শীতকালে এই মেঘ অনেক সময় সারা আকাশ ঢেকে ফেলে।
[v] নাতিশীতােষ্ণ অঞ্চলে এই মেঘের জন্য প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়।
স্ট্রাটাস বা স্তর মেঘ
[i] ভূ-পৃষ্ঠ থেকে ২ কি.মি.-র মধ্যে এই মেঘ দেখা যায়।
[ii] এই মেঘ সাদা ও ধূসর রঙের হয় এবং দিগন্তের নিকট পরপর সমান্তরালে সজ্জিত অবস্থায় থাকে।
[iii] কুয়াশার চাদরের মত এই মেঘ সারা আকাশ ঢেকে রাখে।
[iv] এই মেঘের মধ্য দিয়ে পাহাড়ে ওঠা, বিমান চালানাে প্রভৃতির অসুবিধা দেখা দেয়।
[iv] এই মেঘে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিপাত হয়।
নিম্বাস বা বাদল বা নীরদ মেঘ
[i] এই মেঘের রঙ গাঢ় ধূসর বা কালাে।
[ii] এই মেঘে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয় বলে এর নাম নিম্বাস বা বাদল বা নীরদ মেঘ।
[iii] ভূ-পৃষ্ঠের খুব কাছেই এই মেঘে সারা আকাশ ঢেকে থাকে।
[iv] এই মেঘে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়।
নিম্বো-স্ট্রাটাস বা বাদল স্তর মেঘ
[i] বর্ষাকালে এই মেঘ আকাশের এক দিক জুড়ে সমুদ্রের ঢেউ-এর মত স্তরে স্তরে সজ্জিত অবস্থায় থাকে।
[ii] এই মেঘের রঙ গাঢ় ধূসর বা গাঢ় কালাে।
[iii] এই মেঘ এত ঘন হয় যে এর মধ্য দিয়ে সূর্যকে দেখা যায় না।
[iv] নিম্নচাপ সৃষ্টি হলে এই মেঘ সারা আকাশ ঢেকে থাকে।
[v] এরূপ মেঘে বিদ্যুৎ চমকায় না, বজ্রপাতও হয় না।
[vi] এই ধরণের মেঘে প্রচুর বৃষ্টিপাত ও শিলা বৃষ্টি হয়।
কিউমুলাস বা স্তুপ মেঘ
[i] গম্বুজের মত দেখতে এই মেঘ বহু উঁচু পর্যন্ত বিস্তৃত হয়।
[ii] এই মেঘের নিচের অংশ সমতল এবং ওপরের অংশ অনেকটা ফুল কপির মত।
[iii] মেঘের উপরিভাগ দিয়ে উজ্জ্বল সূর্যালােক দেখা যায়।
[iv] এই মেঘ বিচ্ছিন্নভাবে আকাশে অবস্থান করে।
[v] এই ধরণের মেঘে আবহাওয়া সাধারণত পরিষ্কার থাকে।
৪. নিচু ও উঁচু মেঘ ( ভূপৃষ্ঠ থেকে ৯০০০ মিটার পর্যন্ত বিস্তৃত )
কিউ-মুলো-নিম্বাস বা বাদল স্তুপ মেঘ
[i] ভূ-পৃষ্ঠের খুব কাছেই এই মেঘ দেখা গেলেও এর উচ্চতা বিশাল পর্বতের মত বহু উঁচুতে বিস্তৃত।
[ii] তলদেশে এই মেঘের রঙ কালাে, কিন্তু পাশ্ববর্তী অংশের রঙ ধূসর বা সাদা।
[iii] কালবৈশাখীর সময় উত্তর-পশ্চিম আকাশে এই মেঘ দেখা যায়।
[iv] প্রচণ্ড বজ্র বিদ্যুৎ এই মেঘে দেখা যায় বলে একে বজ্রমেঘ বলা হয়।
উত্তর : কিউমুলোনিম্বাস মেঘে।
আরও দেখে নাও :
Download Section
- File Name : মেঘ কি _ মেঘ কতপ্রকার ও কি কি _ – PDF – বাংলা কুইজ
- File Size : 2.7 MB
- No. of Pages : 04
- Format : PDF
- Language : Bengali
To check our latest Posts - Click Here