কৃষি বিল ২০২০ – বিস্তারিত তথ্য – ভালো ও খারাপ দিক
নতুন ৩টি কৃষিবিল ( যা বর্তমানে আইনে পরিণত হয়েছে ) নিয়ে বিতর্ক লেগেই রয়েছে। দীর্ঘ দিন কৃষকদের ধর্ণা থেকে শুরু করে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের এক এক রকম বক্তব্য এই বিলকে দীর্ঘদিন সংবাদমাধ্যমের শিরোনামে নিয়ে এসেছে। অনেকে এই বিল সম্পর্কে বিভিন্ন ধরণের মতবাদ দিয়েছে। তাই সংক্ষেপে এই কৃষি বিল ২০২০ সম্পর্কে আলোচনা করা রইলো।
ফারমার্স প্রােডিউস ট্রেড অ্যান্ড কমার্স (প্রােমােশন অ্যান্ড ফেসিলিটেশন) বিল ২০২০
(কৃষকের উত্পাদন ব্যবসা ও বাণিজ্য (প্রচার ও সুবিধাদি) বিল, ২০২০ )
এই বিলের মূল বিষয়গুলাে হল
- কৃষকদের নিজেদের উদ্যোগে বাজার তৈরির উৎসাহ দেওয়া, এমনকি ব্যক্তি মালিকানাতেও যাতে এই বাজার তৈরি হতে পারে তার ব্যবস্থা করা।
- কৃষির উপর সরকারি নিয়মের রাশ শিথিল করা।
- রাজ্যের ভিতরে ও বাইরে কৃষি পণ্যের বাণিজ্য বাধামুক্ত হবে।
- কৃষি বাজার থেকে আসা নানান কর ও সেস থেকে কোষাগারে আসা রাজস্ব দিয়ে কৃষি বিপণন ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করা।
- কৃষক ও ব্যবসায়ীরা রাজ্যের নিয়ন্ত্রিত কৃষি মান্ডিগুলির বাইরে খামারজাত পণ্য ক্রয়-বিক্রয়ের স্বাধীনতা পাবে।
- বিপণন ও পরিবহণ ব্যয় কমবে, যার ফলে কৃষকরা তাদের উৎপাদিত পণ্যের আরও ভাল দাম পাবেন।
- পচনশীল পণ্যের জন্য নির্দিষ্ট বাজার ব্যবস্থা।
- কৃষকের ই-কমার্সের জন্য একটি সুবিধাজনক পরিকাঠামাে ও সরবরাহ করা।
ফারমার্স (এমপাওয়ারমেন্ট অ্যান্ড প্রােটেকশন) এগ্রিমেন্ট অব প্রাইস অ্যাসিওরেন্স অ্যান্ড ফার্ম সার্ভিসেস বিল, ২০২০
(কৃষকদের (ক্ষমতায়ন এবং সুরক্ষা) মূল্য আশ্বাস এবং খামার পরিষেবার চুক্তির বিল, ২০২০ )
এই আইনেই চুক্তি চাষের কথা বলা হয়েছে। আইনে কীভাবে কষক ও ক্রেতার মধ্যে চুক্তি হবে তার একটা রূপরেখা দেওয়া হয়েছে। এই আইন অনুসারে –
- কৃষকরা ভবিষ্যতের কৃষিপণ্য বিক্রির জন্য কৃষি বাণিজ্য সংস্থা, প্রক্রিয়াকারক সংস্থা, হােলসেলার, পাইকারি ব্যবসাদার, রপ্তানিকারক বড় ও খুচরাে বিক্রেতাদের সঙ্গে প্রাক-সম্মত মুল্যে চুক্তি করতে পারবেন।
- প্রাক চুক্তির ফলে অপ্রত্যাশিত বাজারের ঝুঁকি থেকে কৃষকদের প্রাপ্য সহায়ক মূল্যের পাওনায় বাধা হবে না।
- মধ্যস্থতাকারীদের এড়িয়ে কৃষকরা সরাসরি বিপণনে জড়িত থেকে সম্পূর্ণ দাম নিজেরাই পেতে পারবেন।
- বিপণনের ব্যয় কমার ফলে কৃষকদের আয় বাড়বে ও সাধারণ মানুষের কাছে কম দামে খাদ্যশস্য পৌছবে।
- আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার কৃষিপণ্যের উৎপাদন বৃদ্ধি করবে।
- প্রতিকারের সময়সীমা বেঁধে বিভিন্ন বিরােধ নিষ্পত্তির কার্যকরী প্রক্রিয়া তৈরি হবে।
- বিলের উদ্দেশ্য কৃষকদের কৃষি-বাণিজ্য সংস্থা, রপ্তানিকারী এবং খুচরাে পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত করা।
এসেনশিয়াল কমােডিটিজ (অ্যামেন্ডমেন্ট) বিল বা অত্যাবশ্যক পণ্য আইন
(অত্যাবশ্যক পণ্য (সংশোধনী) বিল, ২০২০ )
দেশের খাদ্যসংকটের সময় ১৯৫৫ সালে চালু হয় অত্যাবশ্যকীয় পণ্য আইন। ওই সময়ে বিদেশ থেকে খাদ্যশস্য আমদানি করতে হত ভারতের। কিন্তু বর্তমানে খাদ্যশস্য বিদেশে রপ্তানি করে ভারত। ফলে সুষ্ঠু আইনের অভাবে উদ্বৃত্ত অত্যাবশ্যকীয় খাদ্যশস্যের অসমবণ্টনে লাভ ঘরে তুলতে পারে না প্রান্তিক কৃষকরা। তাই এই আইনের বদল আনা অবশ্যম্ভাবী হয়ে পড়েছিল। এই বিলে অত্যাবশ্যকীয় কৃষিপণ্যের তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে চাল, ডাল, আলু, পেঁয়াজ, তৈলবীজ, ভােজ্য তেলসহ আরও কিছু সামগ্রী। বিল বর্তমানে রাষ্ট্রপতির অনুমােদন পেলেই এই সব কৃষিপণ্যের উপর আর সরকারের সেভাবে নিয়ন্ত্রণ থাকবে না। সংশােধিত আইনে উঠে যাবে পণ্য মজুতের ঊর্ধ্বসীমাও। এরফলে চাষিদের ফসল নষ্ট বা কম দামে বিক্রির সম্ভাবনা কমবে। ফড়ে মুক্ত হবে চাষি। তারা ফসল উৎপাদন, মজুত, পরিবহণ, বণ্টন ও বিক্রির স্বাধীনতা পাবেন। কৃষিক্ষেত্রে বিপুল বিনিয়ােগের সম্ভাবনার দরজা খুলে যাবে। আয়ের সম্ভাবনা কৃষিক্ষেত্রে উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে। তবে অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে (অত্যাধিক মূল্যবৃদ্ধি, যুদ্ধ, দুর্ভিক্ষ, ভয়াবহ প্রাকৃতিক বিপর্যয়) সরকার এইসব পণ্যের সকল বিষয়ের উপর নিয়ন্ত্রণ আরােপ করবে।
সরকারি মতে কৃষি বিলের ভালাে দিক :
- কৃষক নিজের মতাে ক্রেতাকে ফসল বেচতে পারবে।
- সরকারি সহায়ক মূল্যের উপর থেকে নির্ভরশীলতা কমবে কৃষকদের।
- ভারতের অঞ্চল ভিত্তিক কৃষি নির্ভর পরিকাঠামােগত পার্থক্য হ্রাসের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হবে ‘ওয়ান নেশন-ওয়ান মার্কেট’।
- সারা ভারতে এক গুণমানের বীজ ব্যবহারে ফসলের গুণমাণে ‘সাম্য।
- দেশব্যাপী শস্যের গুণমান, ফসল বাজারজাত করা, সংরক্ষণ, উৎকৃষ্ট খাদ্যগুণ বজায় রাখা থেকে বিদেশে রপ্তানির পর্যন্ত সাম্যতা বজায়।
- কৃষি অর্থনীতিতে বিনিয়ােগ, প্রযুক্তি, মেধা, পরিকাঠামাের প্রসার।
- কোল্ড স্টোরেজের মতাে কৃষি পরিকাঠামাে এবং খাদ্য সরবরাহের শৃঙ্খলকে আধুনিকীকরণের জন্য বিনিয়ােগ আসবে।
তাই কৃষিক্ষেত্রে দরকার শিল্পমহলের আদলে আমূল সংস্কার। কৃষিকে পেশা করে তুলতে হবে যাতে কৃষকের পরিচয় সংকোচ না হয়।
বিলের বিপক্ষে থাকা ১২টি দলের মতে –
- রাজ্যের হাত থেকে কৃষি গেল কেন্দ্রের অধিকারে।
- মান্ডির বাইরে কৃষি থেকে আয়ের কোনও উপায় থাকল না রাজ্যের হাতে।
- চুক্তি ভঙ্গে সাধারণ কৃষকের পাশে সরকার কীভাবে থাকবে তা জানা নেই।
- অত্যাবশ্যক হলেও চাল, ডাল, তৈলবীজ, পেঁয়াজ আর আলু অত্যাবশ্যক থাকল না।
- নানান আইন সত্বেও ছােট কৃষকরা ফড়েদের হাতের শিকার।
- জটিল তিন ধরনের বাজার। মান্ডি, চুক্তি চাষ ও মান্ডির বাইরের বাজার।
- বহু সংখ্যক ক্ষুদ্র এবং প্রান্তিক কৃষকদের সঙ্গে চুক্তি করতে স্পন্সররা পছন্দ করবে না।
- বিরােধ নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে বড় সংস্থা বা পাইকারি ব্যবসায়ীরা সুবিধা পাবে।
আরও দেখে নাও :
কমন এলিজিবিলিটি টেস্ট | ন্যাশনাল রিক্রুটমেন্ট এজেন্সি
আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি নির্বাচন -২০২০
৬৬তম ফিল্মফেয়ার পুরস্কার ২০২১ । ৬৬তম ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ডস – PDF
To check our latest Posts - Click Here