রচনা

পরিবেশ দূষণ ও তার প্রতিকার – রচনা

Bengali Essay on environmental pollution and its prevention

পরিবেশ দূষণ ও তার প্রতিকার – রচনা

রচনা – বিষয় : পরিবেশ দূষণ ও তার প্রতিকার – রচনা – Bengali Essay on Environmental Pollution and its Prevention


সূচনা :

“এই নদী, এই মাটি বড়ো প্রিয় ছিল / এই মেঘ,
এই রৌদ্র, এই বাতাসের উপভোগ / আমরা
অনেক দূরে সরে গেছি, কে কোথায় আছি ?” – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

সৃষ্টির আদি লগ্নে প্রাকৃতিক পরিবেশ পৃথিবীর বুকে স্পন্দন জাগিয়েছে। গাছপালা, পশুপাখী, বন্যপ্রাণী, মাছ, কীটপতঙ্গ, আলো, শব্দ, উত্তাপ, জল, বায়ু, মাটি এবং সর্বোপরি মানুষ ও মানুষের তৈরী ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট, কলকারখানা ইত্যাদি — এক কথায় সমগ্র পরিবেশ বর্তমান যন্ত্রযুগের বিষবাষ্পে এবং নগরকেন্দ্রিক সভ্যতার অভিঘাতে ক্রমে ক্রমে দূষিত হয়ে উঠছে। মানব সভ্যতার বয়স যত বেড়ে চলেছে তার সাথে পাল্লা দিয়ে ক্রমশ বিষিয়ে যাচ্ছে পরিবেশ। সত্যি প্রকৃতি মাতা প্রাকৃতিক পরিবেশকে দূষিত করবার জন্য তার শ্রেষ্ঠ সন্তান মানুষকে ক্ষমা করবে না। দূষণ দৈত্য পরিবেশের বিভিন্ন উপাদানগুলিকে ধ্বংস করে চলেছে।

দূষণের কারণ : 

সভ্যতার অগ্রগতির সাথে সাথে নানা ভাবে পরিবেশ দূষিত হয়ে চলেছে। প্রাকৃতিক দূষণের ক্ষেত্র অনুসারে পরিবেশ দূষণের বিভিন্ন ভাগ যথা – বায়ুদূষণ, জলদূষণ, মৃত্তিকা দূষণ, শব্দ দূষণ, সামাজিক/সংস্কৃতিক/মনস্তাত্ত্বিক দূষণ ইত্যাদি লক্ষিত হয়।

  • কলকারখানা : বিভিন্ন কলকারখানার ধোঁয়া ক্রমাগত বায়ুমণ্ডলকে দূষিত করছে। রাসায়নিক বর্জ্য পদার্থ কারখানা থেকে নির্গত হয়ে নদীর জলকে মারাত্মক ভাবে দূষিত করছে। কলকারখানার প্রচন্ড যান্ত্রিক শব্দ শব্দদূষণ ঘটাচ্ছে।
  • যানবাহন : বাস, ট্রেন, ট্রাম, ট্যাক্সি ইত্যাদি যানবাহন থেকে নির্গত ধোঁয়া বাতাসে হাইড্রো-কার্বোনসহ বিভিন্ন বিষাক্ত গ্যাসের মাত্রা বৃদ্ধি করছে।
  • আকাশযান: উড়োজাহাজ, জেট প্লেনসহ বিভিন্ন আধুনিক আকাশযানের বিকট শব্দ পরিবেশে মারাত্মক শব্দদূষণ ঘটিয়ে চলেছে।
  • রাসায়নিক সার : চাষের ভূমিতে নানারকম রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ওষুধের প্রয়োগের ফলে ভূমি দূষিত হচ্ছে। কারখানার বর্জ্য পদার্থ ও শহর অঞ্চলের আবর্জনার স্তুপ পচে মাটি ও বায়ু দূষিত করছে। নানান সংক্রামক রোগ বিস্তার লাভ করছে।
  • পারমাণবিক পরীক্ষা : বর্তমান বিশ্বে নানাবিধ মারণাস্ত্র, নানা পারমাণবিক পরীক্ষা ও বিস্ফোরণের তেজস্ক্রিয় রশ্মি ও কণা বায়ুমণ্ডলকে প্রাণহানীকর পর্যায়ে দূষিত করছে।
  • অরণ্য ধ্বংস : ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার খাদ্য ও বাসস্থান জোগাতে নির্বিচারে বনাঞ্চল ধ্বংস করা হচ্ছে।
  • মনস্তাত্ত্বিক অবনমন: সামাজিক অপসংস্কৃতি, বেকারত্ব, কুরুচিকর অপসংস্কৃতি-প্রীতি মানুষের বিশেষত ছাত্র-ছাত্রীদের নৈতিক অধঃপতন ঘটাচ্ছে।

এছাড়াও বাজি পটকার বিকট শব্দ ও বিষাক্ত ধোঁয়াও পরিবেশ দূষণে যথেষ্ট ভূমিকা বহন করে।

পরিবেশ দূষণের ফলাফল 

সামগ্রিক এই পরিবেশ দূষণের ফল মানব জীবনের ওপর বিপর্যয় ডেকে আনছে।

  • বিষাক্ত ধোঁয়ায় মানুষের শ্বাসকষ্টসহ শ্বাসযন্ত্রের বিভিন্ন অসুখ দেখা দিচ্ছে।
  • জল ও মাটি দূষণের কারণে কলেরা, হেপাটাইটিস, টাইফয়েড ইত্যাদি রোগ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
  • বিভিন্ন বিকট শব্দ মদের শ্রবণ যন্ত্রের মারাত্মক ক্ষতি করছে। এমনকি মানুষ স্থায়ী ভাবে বধিরও হয়ে পরছে।
  • নির্বিচারে গাছ কাটার ফলে পরিবেশে অক্সিজেনের যোগান কমছে। ফলে পরিবেশ অস্বাস্থ্যকর হয়ে উঠছে।
  • বায়ুমণ্ডলে গ্রিনহাউস গ্যাসের পরিমান বাড়ছে, ফলে বিশ্ব উষ্ণায়ন জন্ম নিয়েছে। এর ফলে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা বাড়ছে, মেরু প্রদেশের বরফ গলছে, সমুদ্রের জলস্তর বাড়ছে, জলবায়ুর ব্যাপক পরিবর্তন ঘটছে।

কবির ভাষায় এই দূষণের ভয়াবহতা প্রকার করতে বলা যায় –

“যাহারা তোমার বিষায়েছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমিকি বেসেছো ভালো”

– সত্যিই প্রকৃতি মাতা আমাদের ক্ষমা করতে পারছেন না। পরিবেশ দূষণের ফলস্বরূপ পৃথিবী থেকে চিরতরে হারিয়ে যাচ্ছে প্যাসেঞ্জের পিজিয়ন, তোসমানিয়ান টাইগার, কোয়াগ্গা, ডোডো প্রজাতির পাখি, নানান মাছ। সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ অরণ্য বিলুপ্তির পথে। সুনামিতে ধ্বংসের বার্তা বয়ে আনছে।

পরিবেশ দূষণের প্রতিকার :

“দাও ফিরে সে অরণ্য ——-” – কবির এই আকুতিকে পাথেয় করেই আমাদের পরিবেশ দূষণ রোধে সচেষ্ট হতে হবে।

  • কলকারখানা ও যানবাহনের ধোঁয়ার নির্গমন বিজ্ঞানিক উপায়ে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
  • শব্দসীমার মাত্রা নিয়ন্ত্রনে উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার অবশ্যক।
  • বাতাসে অক্সিজেনের ভারসাম্য ফিরিয়ে আনতে ও বন্যপ্রাণীদের জন্য বেশি বেশি করে গাছ লাগাতে হবে। গাছ কাটা বন্ধ করতে হবে।

সর্বোপরি, নাগরিক সচেতনতা ও প্রশাসনিক সক্রিয়তা – এই দুই মিলে, পরিবেশকে দূষণমুক্ত করতে পারে। এক্ষেত্রে ছাত্রছাত্রীদের ভূমিকা খুব গুরুত্বপূর্ণ।

উপসংহার :

বিজ্ঞানের আশীর্বাদে গতিশীল এই সভ্যতা পরিবেশ দূষণের আক্রমণে প্রতিমুহূর্তে যেন মৃত্যুর হিমশীতলতাকে অনুভব করছে। তাই চাঁদে পৌঁছনোর থেকেও গুরুতর বিষয় হলো পৃথিবীকে রক্ষা করা। রাষ্ট্রসংঘ সার্বিক পরিবেশ দূষণ প্রতিকারের জনিত এগিয়ে এসেছে। প্রতিবছর সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ৫ই জুন দিনটি ‘বিশ্ব পরিবেশ দিবস’ হিসাবে পালিত হচ্ছে। পরিবেশের দূষণ নিয়ন্ত্রণ তথা রোধ করে যে কোনো মূল্যে তার ভারসাম্য ফিরিয়ে আনতেই হবে। পরিবেশ সুস্থ না থাকলে আমরা তথা মানব সভ্যতার ধ্বংস অবশ্যম্ভাবী। তাই এ পৃথিবীকে বাসযোগ্য করে তোলার জন্য আমাদের অঙ্গীকারবদ্ধ হতেই হবে।

“এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি—
নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।”– কবি সুকান্ত

আরও দেখে নাও :

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচনা  । Rabindranath Tagore

১০০০+ এক কথায় প্রকাশ –  বাক্য সংকোচন-  PDF –  বাংলা ব্যাকরণ

বিশ্ব উষ্ণায়ন –  গ্লোবাল ওয়ার্মিং –  Global Warming

সমোচ্চারিত ভিন্নার্থক শব্দ ১৫০+ PDF –  বাংলা ব্যাকরণ

সমার্থক শব্দ বা একার্থক শব্দ –  বাংলা ব্যাকরণ –  PDF

Covered Topics : Class ১০ রচনা, পরিবেশ দূষণ রচনা, Class 10 Essay

To check our latest Posts - Click Here

Telegram

দোলন ঘোষ

সহকারী শিক্ষিকা, বালিপাড়া হাই স্কুল, ভগবানগোলা

Related Articles

Back to top button