খিলাফত আন্দোলন – ১৯১৯ সাল – Khilafat movement
Khilafat movement - Causes, Date, History & Facts
খিলাফত আন্দোলন – ১৯১৯ সাল
এক সুবর্ণ সুযােগরূপে চিহ্নিত হয়েছিল।
খিলাফত আন্দোলন
প্রথম বিশ্বযুদ্ধে তুরস্কের পরাজয় এবং সেভার্স চুক্তির (আগস্ট ১০, ১৯২০) অধীনে তুরস্কের ভূখন্ড ইউরোপীয় শক্তিগুলির মধ্যে ভাগ-বাটোয়ারা হওয়ায় ইসলামের পবিত্র স্থানসমূহের ওপর খলিফার অভিভাবকত্ব নিয়ে ভারতীয় মুসলিমদের মধ্যে আশংকা দেখা দেয়। এ কারণে তুর্কি খিলাফত রক্ষা এবং গ্রেট ব্রিটেন ও ইউরোপীয় শক্তিগুলির তুরস্ক সাম্রাজ্যকে বাঁচানোর জন্য ১৯১৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে একটি গোঁড়া সাম্প্রদায়িক আন্দোলন হিসেবে খিলাফত আন্দোলন শুরু হয়। এই আন্দোলনের প্রধান নেতৃবর্গের মধ্যে ছিলেন – আলী ভ্রাতৃদ্বয় মুহম্মদ আলী ও শওকত আলী, আবুল কালাম আজাদ, ড. এম.এ আনসারী ও হসরত মোহানী। খিলাফত আন্দোলনের প্রস্তুতি হিসাবে ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে ১৭ ই অক্টোবর খিলাফত দিবস পালিত হয় ।
উত্তর ভারতের বেশ কয়েকটি শহরে খিলাফত সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় এবং বোম্বাই শহরে একটি কেন্দ্রীয় খিলাফত কমিটি গঠিত হয়। শেঠ ছোটানী নামীয় এক ধনী ব্যবসায়ীকে এ কমিটির সভাপতি ও মওলানা শওকত আলীকে সম্পাদক করা হয়। ১৯২০ সালে আলী ভ্রাতৃদ্বয় খিলাফত ইশতেহার ঘোষণা করেন। কেন্দ্রীয় খিলাফত কমিটি তুরস্কে জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে সহায়তা দান এবং দেশে খিলাফত আন্দোলন সংগঠিত করার জন্য একটি তহবিলও গঠন করেছিল।
এসময়ে মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী ১৯১৯ সালের এপ্রিলে সংঘটিত জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকান্ড এবং ১৯১৯ সালের রাওলাট অ্যাক্টকে সরকারি নির্যাতনের প্রমাণরূপে চিহ্নিত করে এর প্রতিবাদে অহিংস জাতীয়তাবাদী আন্দোলন ‘সত্যাগ্রহ’ শুরু করেন। তাঁর আন্দোলনের প্রতি মুসলমানদের সমর্থন নিশ্চিত করার জন্য গান্ধী খিলাফত আন্দোলনকে সমর্থন করেন এবং কেন্দ্রীয় খিলাফত কমিটির সদস্য হন। সর্ব ভারতীয় কংগ্রেসের নাগপুর সম্মেলনে (১৯২০) গান্ধী ‘স্বরাজ’ কর্মসূচিকে খিলাফত আন্দোলনের দাবির সঙ্গে যুক্ত করেন এবং উভয় লক্ষ্য অর্জনের জন্য অসহযোগ পরিকল্পনা গ্রহণ করেন।
খিলাফত আন্দোলনের কারণ
- প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে তুরস্ক জার্মানির পক্ষ নেয় ও ইংল্যান্ডের বিরােধিতা করে। কিন্তু যুদ্ধে জার্মানি হেরে যাওয়ার পর মিত্রশক্তি তুরস্কের ব্যবচ্ছেদ করে ও খলিফা পদ কেড়ে নেয়। এতে বিশ্বের মুসলিম সমাজ ক্ষুব্ধ হয়।
- ১৯১৮ সালের ৫ জানুয়ারি ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী লয়েড জর্জ ঘােষণা করেন ব্রিটেন, ফ্রান্স তুরস্ক সাম্রাজ্য থেকে এশিয়া মাইনর, থ্রেস ইত্যাদি অঞ্চল বিচ্ছিন্ন করবে না। কিন্তু প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর তিনি তার কথা রাখেনি। ফলে ভারতের মুসলিমরা শওকত আলি ও মহম্মদ আলির নেতৃত্বে শুরু করে খিলাফত আন্দোলন।
খিলাফত আন্দোলনের উদ্দেশ্য ও দাবি
বিশ্বের মুসলিম রাষ্ট্রগুলির অখণ্ডতা রক্ষার দাবি এবং সমগ্র আরব অঞ্চল (জাজিরাত-উল-আরব) তুরস্কের খলিফার হাতে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানানাে হয়। এছাড়াও খিলাফত কমিটির নেতারা দাবি জানান
- খলিফার সাম্রাজ্য অক্ষুন্ন রাখতে হবে।
- খলিফার পার্থিব ও ধর্মীয় অধিকারে হস্তক্ষেপ করা চলবে না।
- পবিত্র মক্কা-মদিনার ওপর বিদেশি রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ বন্ধ রাখতে হবে।
- মেসােপটেমিয়া, আরব, সিরিয়া ও প্যালেস্টাইনের খলিফার কর্তৃত্ব বজায় রাখতে হবে।
খিলাফত আন্দোলনের ব্যর্থতার কারণ :
- এই আন্দোলন শেষপর্যন্ত অহিংস ছিল না, মালাবারের মােপালা বিদ্রোহের মতাে হিংসাত্মক ঘটনা ঘটেছিল।
- খলিফা তথা মুসলিম জগতের ধর্মগুরু নিজের দেশেই ততটা জনপ্রিয় ছিলেন না, এ ব্যাপার ভারতের খিলাফত নেতৃবর্গ জানতেন না। এ চরম সত্য উন্মােচিত হয় যখন দেখা যায় কামাল পাশার নেতৃত্বে তুরস্কে খলিফাতন্ত্রের অবসান ঘটে এবং ভারতে মুসলমান সম্প্রদায় এর কোন প্রতিবাদ করেনি।
- বেশিরভাগ মুসলমান নেতৃবর্গ খিলাফত প্রশ্নের সমাধান নিয়েই বেশি ব্যগ্র ছিলেন, তাঁদের কাছে স্বরাজের দাবি উপেক্ষিত ছিল।
- এক শ্রেণির উলেমা, মােল্লা, মৌলবাদী প্রচারের মাধ্যমে বিচ্ছিন্নতাবাদ ও সাম্প্রদায়িক বিভেদে মদত দেওয়ায় এই আন্দোলন তার চরিত্র হারায় এবং হিন্দু-মুসলমান ঐক্য বিনষ্ট হয়।
দেখে নাও :
রাওলাট আইন – ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দ – রাওলাট আইন টিকা
ভারতের ঐতিহাসিক সন্ধি ও চুক্তি – তালিকা PDF
তুঘলক বংশের ইতিহাস : সুলতানি সাম্রাজ্য – PDF
সুলতানি সাম্রাজ্য : খলজি বংশের ইতিহাস – PDF
Download Section
File Name : খিলাফত আন্দোলন – ১৯১৯ সাল – Khilafat movement – বাংলা কুইজ
File Size : 1,338 KB
Format : PDF
No. of Pages : 03
Click Here to DownloadTo check our latest Posts - Click Here