জাতীয় শিক্ষানীতি ২০২০ । National Education Policy 2020
National Education Policy 2020
জাতীয় শিক্ষানীতি ২০২০
বদলে যাচ্ছে পড়াশোনার রকমসকম। বদলাচ্ছে জাতীয় শিক্ষানীতি। কেরানি তৈরি করা নয়, প্রকৃত শিক্ষায় গুরুত্ব। গুরুত্ব বিজ্ঞান বোধে। ৩৪ বছর পর দেশের এডুকেশন পলিসির এই প্রথম বড়োসড়ো সংস্করণ করা হল জাতীয় শিক্ষানীতি ২০২০ এর মাধ্যমে।
দেওয়া রইলো জাতীয় শিক্ষানীতি ২০২০ সম্পর্কিত কিছু তথ্য।
কেন্দ্রীয় মন্ত্রী : শ্রী রমেশ পোখরিয়াল
কমিটি : ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্রের প্রাক্তন প্রধান কে কস্তুরী রঙ্গণ – এর অধীনস্থ এক কমিটির সুপারিশে এই নতুন শিক্ষানীতি।
সাধারণ পরিবর্তন:
- কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন (এমএইচআরডি) মন্ত্রকের নাম পরিবর্তন করে নতুন নাম রাখা হল শিক্ষা মন্ত্রক।
- জিডিপির ৬% শিক্ষাখাতে খরচ করা হবে (বর্তমানে ১.৭%)।
- ৬-১৪ বছরের বদলে NEP ৩-১৮ বছরের বাচ্চাদের RTE -র আওতায় আনতে চলেছে।
- প্রাথমিক শুধু নয়, ১৮ বছর পর্যন্ত শিক্ষার অধিকার। মেয়েদের শিক্ষার ক্ষেত্রে বিশেষ গুরুত্ব।
- শিক্ষার জন্য নতুন রেগুলেটরি বডি রাষ্ট্রীয় শিক্ষা আয়োগ বা National Education Commission গঠন করতে চলেছে যার প্রধান হবে প্রধানমন্ত্রী।
- বিদেশের সেরা ১০০ কলেজকে এদেশে তাদের ক্যাম্পাস গড়ার অনুমোদন দেওয়া হবে।
- ডিজিটাল শিক্ষাকে গুরুত্ব দিতে National Educational Technology Forum (NETF) তৈরি করা হবে এবং E-কোর্স প্রাথমিকভাবে ৮টি আঞ্চলিক ভাষায় প্রকাশ করা হবে।
- কস্তুরবা গান্ধী স্কুলগুলিকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত উন্নীত করা হচ্ছে।
- বিশ্বের সেরা ১০০টা ইউনিভার্সিটি এদেশে তাদের ক্যাম্পাস খুলতে পারবে।
- ই লার্নিংয়ে জোর দেওয়া হবে। ৮টি ভাষায় আপাতত অনলাইনে পড়াশোনা চলবে।
- ভাষা, সাহিত্য, সংগীত, দর্শন, শিল্প, নৃত্য, থিয়েটার, গণিত, পরিসংখ্যান, বিজ্ঞান, সমাজবিজ্ঞান, অর্থনীতি, ক্রীড়া, ইত্যাদি বিভাগে উচ্চশিক্ষাকে প্রতিষ্ঠিত ও জোরদার করা হবে ইনস্টিটিউটগুলিতে।
স্কুল স্তরে শিক্ষা:
- স্কুলশিক্ষাকে পুরোনো ১০+২ এর পরিবর্তে ৫+৩+৩+৪ ফর্ম্যাটে সাজানো হয়েছে। অর্থাৎ ৩ বছরের Early Childhood Care and Education (ECCE) এর সাথে সাথে দশমশ্রেণীর বোর্ডের পরীক্ষাব্যবস্থা অবলুপ্ত করে ৯-১২ ক্লাস পর্যন্ত একটা অভিন্ন ৮ সেমেস্টারের সিস্টেম আসতে চলেছে। NIOS বা রাজ্য ওপেন স্কুলও এরকম ফর্ম্যাট চালু করতে বাধ্য থাকবে।
- Foundational Stage (৩ বছর অঙ্গনওয়াড়ি বা প্রিপ্রাইমারী স্কুলে আর ২ বছর প্রাইমারী স্কুলে প্রথম থেকে দ্বিতীয় শ্রেণী পর্যন্ত। সব মিলিয়ে বয়স ৩ বছর থেকে ৮ বছর বয়স পর্যন্ত)
- Preparatory Stage (তৃতীয় থেকে পঞ্চমশ্রেণী পর্যন্ত অর্থাৎ বয়স ৮-১১)
- Middle Stage (ষষ্ঠ থেকে অষ্টমশ্রেণী পর্যন্ত অর্থাৎ বয়স ১১-১৪)
- Secondary Stage(নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণী অর্থাৎ ১৪-১৮ বছর বয়স)
- আলাদা করে সায়ান্স, আর্টস, কমার্স থাকছে না। কেউ ফিজিক্স নিয়ে পড়ার সাথে সাথে ইতিহাস নিয়েও পড়তে পারে।
- ২০২৫ সাল নাগাদ সব রাজ্য ও কেন্দ্রের স্কুলকে তৃতীয় শ্রেণী পর্যন্ত বাধ্যতামূলক শিক্ষা নিশ্চিত করতে হবে সব শিক্ষার্থীর জন্য।
- ষষ্ঠ শ্রেণী থেকে বৃত্তিমূলক পড়াশোনা শুরু। ২০২৫ সালের মধ্যে নুন্যতম ৫০% স্কুল ও উচ্চশিক্ষার ছাত্র ছাত্রীদের বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণের লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করা হয়েছে। ১২ ক্লাস পর্যন্ত বৃত্তিমূলক বিষয়ে ইন্টার্নশিপ করার সুযোগ দেওয়া হবে ছুটির দিন সহ।
- ষষ্ঠ শ্রেণী থেকে থাকবে কোডিং শেখানোর ব্যাবস্থা।
- ভোকেশনাল শিক্ষার ব্যাবস্থাও ষষ্ঠ শ্রেণী থেকে থাকবে।
- মূল্যায়নের ক্ষেত্রে ছাত্রছাত্রীরা নিজেরা,সহপাঠীরা এবং শিক্ষক- শিক্ষিকারা মূল্যায়ন করবে অর্থাৎ ত্রিস্তরীয় মূল্যায়ন হবে।
- বোর্ড পরীক্ষা অবজেক্টিভ ও সাব্জেক্টিভ দু’ভাবেই হবে।
- প্রথম শ্রেণীর শিশুদের জন্য ৩ মাসের play-based ‘school preparation module’ -এর রূপরেখা তৈরি করবে NCERT/SCERT.
- শিক্ষার লক্ষ্য শুধু জ্ঞান বৃদ্ধি নয়,চরিত্রগঠন ও অলরাউন্ড ডেভেলাপমেন্টও। সেজন্য সিলেবাসের বহর কমিয়ে Critical thinking and more holistic, inquiry-based, discovery-based, discussion-based, and analysis-based learning এর জায়গা বেশি দেওয়া হবে।
- ন্যূনতম পঞ্চমশ্রেণী পর্যন্ত মাতৃভাষা বা স্থানীয়ভাষায় শিক্ষাগ্রহণ করাতেই হবে। ৮ম বা তারও পরে যতদূর সম্ভব সুযোগ থাকবে ততদূর পর্যন্ত এই ভাষাতেই তা করা যেতে পারে।
- Gifted Student দের দিকে বিশেষ নজর দেওয়া হবে। NCERT এবং NCTE তার গাইডলাইন তৈরি করবে। B.Ed. এ এদের পড়ানোর জন্য স্পেশালাইজেশনের ব্যবস্থা থাকবে। অনলাইন কম্পিটিশন, ক্যুইজ,অ্যাপের ব্যবস্থা থাকবে। প্রত্যেক স্কুলে স্মার্টক্লাস গঠন করা হবে।আবার দিব্যাঙ্গ স্টুডেন্টদের পড়ানোর জন্য স্পেশাল এডুকেশনে স্পেশালাইজেশনের ব্যবস্থাও থাকবে।
- অ্যাডাল্ট এডুকেশনের ক্ষেত্রে উদ্দেশ্য স্থির করা হয়েছে.।
- স্বাক্ষরতা, প্রাথমক শিক্ষা,জটিল জীবনশৈলী, বৃত্তিমূলক ট্রেনিং প্রভৃতি বিষয়ে।
- সংস্কৃতকে স্কুল স্তরে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে তুলে ধরা হবে।
কলেজ/বিশ্ববিদ্যালয় স্তরে শিক্ষা ও উচ্চ শিক্ষা:
- ২০৪০ সাল নাগাদ সব উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলিকে মাল্টিডিসিপ্লিনারি করতে হবে এবং নুন্যতম ছাত্র ছাত্রী সংখ্যা করতে হবে ৩০০০. IIT সহ বিভিন্ন ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও মাল্টিডিসিপ্লিনারি হয়ে উঠবে।
- ২০৩০ নাগাদ প্রতি জেলায় অন্ততপক্ষে একটি করে মাল্টিডিসিপ্লিনারি উচ্চশিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে হবে।
- ২০১৮ সালের যে Gross Enrolment Ratio ২৬.৩% ছিল তা ২০২৫ সালে ৫০% ও ২০৩০ সালে ১০০% এ নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্য রাখা হয়েছে।
- মূল্যায়নের গ্রেড অনুযায়ী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গুলিকে স্বায়ত্তশাসন দেওয়া হবে।
- শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গুলিতে Open Distance Learning (ODL) এবং অনলাইন প্রোগ্রামের ব্যবস্থা থাকবে।
- ‘deemed to be university’, ‘affiliating university’, ‘affiliating technical university’, ‘unitary university’ গুলি শুধুমাত্র “বিশ্ববিদ্যালয়”(university) হিসেবে মর্যাদা পাবে।
- শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলি সমাজসেবা,পরিবেশবিদ্যা,নীতিশিক্ষা প্রভৃতি ক্ষেত্রে ক্রেডিট বেসড স্কোরিং এবং প্রজেক্ট চালু করবে। গুরুত্ব পাবে ভারতীয় কৃষ্টি,সংস্কৃতি,ইতিহাস,ভাষা প্রভৃতি।
- কলেজে ভর্তির জন্য NTA চালু হবে। সমস্ত কলেজের জন্য হবে একটি সাধারণ প্রবেশিকা পরীক্ষা। তবে সংশ্লিষ্ট কলেজ না চাইলে এটি চালু না করতেও পারে (Optional )
- স্নাতক কোর্স হবে ৩ অথবা ৪ বছরের এবং স্নাতকোত্তর কোর্স হবে ১ অথবা ২ বছরের।
- থাকবে ৫ বছরের ইন্টিগ্রেটেড কোর্সের ব্যাবস্থা।
- উচ্চশিক্ষায় এন্ট্রি বা এক্সিটে অনেক অপশন থাকছে। যেমন, ৩-৪ বছরের গ্রাজুয়েশন। কেউ মনে করলেন, ১ বছর পর আর পড়বেন না। তাহলে তাঁকে ওই ১ বছরেরই সার্টিফিকেট দেওয়া হবে। ২ বছর হলে অ্যাডভান্সড ডিপ্লোমা। ব্যাচেলর ডিগ্রি ৩ বছরে। আর পুরো কমপ্লিট করলে, ব্যাচেলর উইথ রিসার্চ।
- এম.ফিল. কোর্স রদ করা হ’ল।
- শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ইকো ক্লাব,স্পোর্টস ক্লাস, সংস্কৃতি ও কলা কেন্দ্র সহ স্ট্রেস ফ্রি শিক্ষার ব্যবস্থা থাকবে।
- হোস্টেল ফেসিলিটি বাড়াতে হবে,ন্যূনতম মেডিক্যাল ফেসিলিটি সবার জন্য ব্যবস্থা করতে হবে।
- সব উচ্চশিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গুলোকে এক ছাতার তলায় আনতে Higher Education Commission of India (HECI) গঠিত হবে। যার আওতায় থাকবে –
- National Higher Education Regulatory Council(NHERC),
- National Accreditation Council (NAC),
- Higher Education Grants Council (HEGC),
- General Education Council (GEC).
- শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলি হবে ‘not for profit’
- শিক্ষার ক্ষেত্রে প্রযুক্তিকে কীভাবে ট্রান্সলেসন ও ইন্টারপ্রিটেশনে সাহায্য করা যায় সেই হেতু Indian Institute of Translation and Interpretation (IITI) গড়ে তোলা হবে।
অন্যান্য কিছু পরিবর্তন :
- সহশিক্ষক এবং প্রধান শিক্ষক/শিক্ষিকাদের নিজের উদ্যোগের প্রতিবছর ৫০ ঘন্টার CONTINUOUS PROFESSIONAL DEVELOPMENT (CPD) এ অংশগ্রহণ করতে বলা হয়েছে।
- ২০২১ সাল নাগাদ। NCTE এবং NCERT এর যৌথ উদ্যোগে National Curriculum Framework for Teacher Education,NCFTE-2021 প্রকাশ পাবে।
- ২০৩০ সাল নাগাদ সাধারণ ডিগ্রী কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে এই ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা সম্পূর্ণ হবে।
- ৪ বছরের ইন্টিগ্রেটেড গ্র্যাজুয়েশন+বি.এড. কোর্স চালু হবে আর যারা গ্র্যাজুয়েশন করে নিয়েছে তাদের জন্য ২ বছরের বি.এড. কোর্স চালু থাকবে।
- যারা ৪ বছরের গ্র্যাজুয়েশন বা মাস্টার্স ডিগ্রী সম্পূর্ণ করেছে তাদের জন্য ১ বছরের বি.এড. করার ব্যবস্থা থাকবে।
- শিক্ষায় টেকনোলজির ব্যাবহার গুরুত্ব দেওয়া হবে।
- খোলা হবে ডিজিটাল লাইব্রেরী, ভার্চুয়াল ল্যাব।
- শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি ও ছাত্র ছাত্রীদের অগ্রগতি মূল্যায়নের ক্ষেত্রেও টেকনোলজির ব্যাবহার করা হবে।
জাতীয় শিক্ষানীতি ২০২০ সম্পর্কিত কিছু প্রশ্ন ও উত্তর :
১. ভারতের জাতীয় শিক্ষানীতি ২০২০ অনুসারে জিডিপির কত শতাংশ শিক্ষাখাতে খরচ করা হবে বলে ঘোষণা করা হয়েছে?
২. জাতীয় শিক্ষানীতি ২০২০ তৈরির জন্য কার অধীনস্থ কমিটির সুপারিশ নেওয়া হয়েছে ?
৩. নতুন শিক্ষানীতি অনুসারে কোন কোর্সটি বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে?
৪. ভারতে জাতীয় শিক্ষানীতি প্রথম কবে চালু হয়েছিল?
৫. ২০২০ এর পূর্বে শেষ কবে জাতীয় শিক্ষানীতি তৈরি করা হয়েছিল?
৬. জাতীয় শিক্ষানীতি ২০২০ অনুসারে বিদ্যালয় স্তরে ১০+২ শিক্ষা ব্যবস্থার পরিবর্তে কোন ব্যাবস্থা চালু করা হল?
৭. জাতীয় শিক্ষানীতি ২০২০ তে বলা হয়েছে ৮ টি আঞ্চলিক ভাষায় ই- কোর্স চালু করা হবে,কোন কোন ভাষায়?
৮. কততম সংবিধান সংশোধনীর মাধ্যমে শিক্ষাকে যুগ্ম তালিকার অন্তর্ভুক্ত করা হয়?
৯. ভারতে কত সালে University Education Commission গঠিত হয়?
১০. ভারতের মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের [(The Ministry of Human Resource and Development (MHRD)] নাম পরিবর্তন করে নতুন কী নাম রাখা হল?
জাতীয় শিক্ষানীতি ২০২০ সম্বন্ধীয় কিছু সংস্থা / টার্ম
- NETF ➟ National Educational Technology Forum
- GEC ➟ General Education Council
- HECI ➟ Higher Education Commission of India
- NRF ➟ National Research Foundation
- GRE ➟ Gross Enrolment Ratio
- NCFTE ➟ National Curriculum Framework for Teacher Education
- MERU ➟ Multidisciplinary Education and Research Universities
- NHERC ➟ National Higher Education Regulatory Council
- HEGC ➟ Higher Education Grants Council
- NAC ➟ National Accreditation Council
- NHEQF ➟ National Higher Education Qualification Framework
- IITI ➟ Institute of Translation and Interpretation
- NCPFECCE ➟ National Curricular and Pedagogical Framework for Early Childhood Care and Education
- PARAKH ➟ Performance Assessment, Review, and Analysis of Knowledge for Holistic Development
Download in PDF Format
File Name : জাতীয় শিক্ষানীতি ২০২০
File Format : PDF
File Size : 368 KB
No. of Pages : 05
আরো দেখে নাও :
গুরুত্বপূর্ণ কমিটি/ কমিশন । Important Committees and Commissions in India
ভারতীয় রেলওয়ে সম্পর্কিত ২১টি আশ্চর্য তথ্য যা সম্ভবত আপনি জানেন না
ভারতীয় মুদ্রা সম্পর্কিত কিছু জানা-অজানা তথ্য
To check our latest Posts - Click Here
Khub bhalo
খুব সুন্দর হয়েছে। আর সহজ, বোধগম্যও হয়েছে!
ধ্যনবাদ
sir notes guli r download option ta dile valo hoto
PDF file is now available