History NotesGeneral Knowledge Notes in Bengali
History of Maratha Empire | মারাঠা সাম্রাজ্যের ইতিহাস | PDF
Maratha Empire [1674-1818]
মারাঠা সাম্রাজ্যের ইতিহাস – History of Maratha Empire
প্রিয় পাঠকেরা, আজকে আমরা আলোচনা করবো ভারতের ইতিহাসের এক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় শিবাজী ও মারাঠা সাম্রাজ্যের ইতিহাস।
১. শিবাজী
- শিবাজী ভোঁসলে অথবা ছত্রপতি শিবাজী রাজে ভোঁসলে হলেন মারাঠা সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা।
- শিবাজি ১৬৩০ খ্রিষ্টাব্দে ( ফেব্রুয়ারী ১৯ ) পুনের শিবনেরি পার্বত্য দুর্গে জন্মগ্রহণ করেন। (মতান্তরে তিনি ১৬২৭ খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন )
- তার পিতা শাহজী ভোঁসলে ছিলেন বিজাপুর রাজ্যের অধীন পুণার জায়গীরদার।
- মাতা জীজাবাঈ এবং দাদাজী কোণ্ডদেবের অভিভাবকত্বে শিবাজী তাঁর শৈশব অতিবাহিত করেন ।
- ধর্মপরায়ণ মায়ের প্রভাব শিবাজীর জীবনে গভীর রেখাপাত করেছিল। মায়ের কাছে রামায়ণ ও মহাভারতের কাহিনী শুনে শিশুকালেই শিবাজীর মনে বীরত্ব ও দেশপ্রেমের সঞ্চার হয়েছিল।
- শিবাজী ধর্মীয় গুরু রামদাস এবং তুকারামের আদর্শে অনুপ্রাণিত ছিলেন।
- শিবাজী ১৬৪৬ খ্রিস্টাব্দে বিজাপুরের শাসকের কাছ থেকে তোর্না দুর্গ দখল করেন এবং রায়গড় দুর্গ তৈরী করেন।
- প্রতাপগড়ের যুদ্ধ ( ১৬৫৯ খ্রিস্টাব্দ) :
- ১৬৫৯ খ্রিস্টাব্দে বিজাপুরের সুলতান আলি আদিল শাহ, শিবাজীকে দমন করার উদ্দেশ্যে আফজল খাঁ-কে প্রেরণ করেন।
- আফজল খাঁ কূটকৌশলে শিবাজীকে হত্যা করার ষড়যন্ত্র করেন।
- এই ষড়যন্ত্রের কথা জানতে পেরে শিবাজী তাঁর বাঘনখ দ্বারা আফজল খাঁকে আক্রমণ করে হত্যা করেন।
- স্বাধীন শাসকের স্বীকৃতি :
- ১৬৬২ খ্রিস্টাব্দে বিজাপুরের সুলতান, শিবাজীকে স্বাধীন শাসক রূপে স্বীকৃতি জানিয়ে তাঁর সাথে মৈত্রীর সম্পর্ক স্থাপন করেন।
- বিজাপুর রাজ্যের অধীনে থাকা যে সমস্ত অঞ্চল শিবাজী দখল করেছিলেন তার নিয়ন্ত্রণ শিবাজীকে প্রদান করা হয়।
- শায়েস্তা খাঁ দমন :
- শিবাজীর উত্থানে উদ্বিগ্ন হয়ে, তাকে দমন করার উদ্দেশ্যে মুঘল সম্রাট ঔরঙ্গজেব দাক্ষিণাত্যের মুঘল সুবেদার শায়েস্তা খাঁকে প্রেরণ করেন শিবাজীকে দমন করতে।
- কিন্তু শায়েস্তা খাঁর শিবিরে শিবাজী রাত্রিবেলায় অতর্কিত হামলা করেন।
- এই হামলায় শায়েস্তা খাঁ আহত হন এবং শায়েস্তা খাঁর পুত্র নিহত হন।
- এই ঘটনায় শায়েস্তা খাঁর ওপর রেগে গিয়ে ঔরঙ্গজেব শায়েস্তা খাঁকে শাস্তিস্বরূপ বাংলায় পাঠিয়ে দেন।
- পুরন্দরের সন্ধি :
- ১৬৬৪ খ্রিস্টাব্দে শিবাজী মুঘলদের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বন্দর সুরাট দখল করে নেন ।
- এই ঘটনায় ঔরঙ্গজেব রেগে গিয়ে অম্বরের রাজা জয়সিংহ ও দিলের খাঁকে মারাঠা সাম্রাজ্য ধ্বংস করতে প্রেরণ করেন।
- রাজা জয়সিংহ ও দিলের খাঁ প্রস্তুতিসহ শিবাজীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করেন এবং সুকৌশলে পুরন্দর দুর্গ ঘিরে ফেলেন।
- ফলস্বরূপ ১৬৬৫ খ্রিস্টাব্দে শিবাজী বাধ্য হন মুঘলদের সাথে পুরন্দরের সন্ধি স্বাক্ষর করতে।
- এই চুক্তির ফলে শিবাজী –
- মুঘল সার্বভৌমত্ব স্বীকার করেন।
- তার ৩৫টি দুর্গের মধ্যে ২৩টি মুঘলদের দিতে বাধ্য হন। ১২টি দুর্গ শিবাজীকে দেওয়া হয় মুঘলদের প্রতি অনুগত থাকার প্রতিশ্রুতিতে।
- শিবাজীর পুত্র শম্ভুজী মুঘল দরবারে ৫ হাজারি মনসবদার নিযুক্ত হন।
- বিজাপুরের বিরুদ্ধে মুঘলদের সাহায্য-দানে সম্মত হন।
- স্বপুত্র বন্দি :
- ১৬৬৬ খ্রিস্টাব্দে মুঘল সম্রাট ঔরঙ্গজেবের আমন্ত্রণে শিবাজী এবং তাঁর পুত্র শম্ভুজী আগ্রা দুর্গে যান।
- সেখানে ঔরঙ্গজেব শিবাজীকে অপমান করেন এবং শিবাজীকে স্বপুত্র গৃহ বন্দী করা হয়।
- ঔরঙ্গজেবের পরিকল্পনা ছিল শিবজীকে কান্দাহারে প্রেরণ করা।
- কিন্তু শিবাজী এবং শম্ভুজী সুকৌশলে পালকি বহনকারী ছদ্মবেশে মুঘল নজরদারি এড়িয়ে পালিয়ে যান।
- কোনোভাবেই পরাজিত করা সম্ভব নয় দেখে ঔরঙ্গজেব শিবাজীকে “রাজা” বলে স্বীকার করেন এবং বেরার দান করেন।
- দুর্গ পুনরুদ্ধার :
- ১৬৬৭ থেকে ১৬৬৯ খ্রিস্টাব পর্যন্ত শিবাজী লুকিয়ে থাকেন এবং গোপনে সেনাবাহিনী তৈরী করতে থাকেন।
- ১৬৭০ খ্রিস্টাব্দে শিবাজী তার অনেক দুর্গ আবার মুঘলদের কাছ থেকে দখল করে নেন এবং সুরাট বন্দর দ্বিতীয়বারের জন্য দখল করে নেন।
- ১৬৭২ সালে সালহারের যুদ্ধে শিবাজীর কাছে মুঘল সেনাবাহিনী পরাজয় বরণ করে এবং ধীরে ধীরে শিবাজী পুরন্দরের সন্ধির মাধ্যমে হস্তান্তরিত দুর্গগুলি মুঘল নিয়ন্ত্রণ থেকে পুনরুদ্ধার করেন।
- রাজ্যাভিষেক :
- ১৬৭৪ সালে, রায়গড়ের দুর্গে, মহাসমারােহে শিবাজীর রাজ্যভিষেক সম্পন্ন হয়।
- শিবাজী সিংহাসনে আরােহণের পূর্বে ‘ছত্রপতি’ এবং ‘গাে ব্রাহ্মণ প্রজা পালক’ উপাধি ধারণ করেছিলেন।
- শাসনব্যবস্থা :
- শিবাজীর শাসনব্যবস্থায় ছত্রপতি অর্থাৎ রাজার পরেই ছিল ‘অষ্টপ্রধান’ এর স্থান ।
- ‘অষ্টপ্রধান’ বলতে আটজন মন্ত্রী বােঝায়, যাঁরা ভিন্ন ভিন্ন দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত ছিলেন। এই ৮ জন মন্ত্রী হলেন—
- পেশােয়া বা প্রধানমন্ত্রী ( ইনি সমগ্র শাসনব্যবস্থার তত্ত্বাবধানে ছিলেন এবং রাজার অবর্তমানে তিনি তার
প্রতিনিধিত্ব করতেন ) - অমাত্য (হিসাবপরীক্ষক)
- ওয়াকিনবিশ (রাজকার্যের বিবরণ লেখক)
- সর্নাবিশ বা সচিব (চিঠিপত্রের লেখক)
- সুমন্ত বা দাবির (বিদেশদপ্তর দেখাশােনা করতেন)
- সব-ই-নৌকত বা প্রধান সেনাপতি
- পণ্ডিতরাও বা ধর্মবিষয়ক মন্ত্রী এবং
- ন্যায়াধিশ বা প্রধান বিচারপতি।
- পেশােয়া বা প্রধানমন্ত্রী ( ইনি সমগ্র শাসনব্যবস্থার তত্ত্বাবধানে ছিলেন এবং রাজার অবর্তমানে তিনি তার
- বর্গী ও শিলাদার : শিবাজীর অশ্বারােহী বাহিনী দু-ধরনের সৈন্য নিয়ে গঠিত।
- পাগা বা বর্গী ছিল শিবাজীর নিজস্ব অশ্বারোহী বাহিনী| বর্গীরা নিয়মিতভাবে সরকারের কাছ থেকে বেতন পেতেন| তাছাড়া অস্ত্র-শস্ত্র, পোশাক-পরিচ্ছদ ও অশ্ব সরকারি তরফ থেকে তাদের দেওয়া হতো| বর্গীরা প্রায় ৪০ হাজার সেনা নিয়ে গঠিত ছিল|
- অন্যদিকে অনিয়মিত সেনাদের বলা হতো শিলাদার| যুদ্ধের প্রয়োজনে সরকার তাদের সাময়িকভাবে নিয়োগ করতো| শিলাদাররা নিজের দায়িত্বে যুদ্ধের সরঞ্জাম অস্ত্র-শস্ত্র, অশ্ব ও অন্যান্য যুদ্ধের উপকরণ জোগাড় করতো| বিনিময় সরকার তাদের একটি মোটা অংকের টাকা প্রদানে বাধ্য থাকতেন|
- চৌথ ও সরদেশমুখী :
- শিবাজী প্রতিবেশী রাজ্যগুলোতে তাদের আয়ের এক চতুর্থাংশ কর হিসেবে নিতেন এবং বদলে তাদের শত্রুদের আক্রমণের কত থেকে রাখা করার প্রতিশ্রুতি দিতেন। এই কর চৌথ নামে পরিচিত ছিল ।
- দাক্ষিণাত্য ও তৎসংলঙ্গ এলাকাতে শিবাজী সরদেশমুখী কর নিতেন। সরদেশমুখী কর ছিল মোট আয়ের একের দশ অংশ।
- মৃত্যু : ১৬৮০ খ্রিস্টাব্দে,মাত্র ৬ বছর রাজত্ব করে ৫০ বছর বয়সে শিবাজীর মৃত্যু হয়।
২. শম্ভুজী ( ১৬৮১ – ১৬৮৯ খ্রিস্টাব্দ )
- শিবাজীর মৃত্যুর পর, তাঁর পুত্র শম্ভুজী মারাঠা সিংহাসনে আরােহণ করেন।
- অনেক মারাঠা প্রধান শম্ভুজীর পরিবর্তে শিবাজীর অন্য পুত্র রাজারামকে সমর্থন করেছিলেন। এর ফলে মারাঠাদের মধ্যে অভ্যন্তরীণ গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব শুরু হয় এবং মারাঠা সাম্রাজ্য দুর্বল হয়ে পরে।
- শম্ভুজীর ডাক নাম দেওয়া হয়েছিল ‘কালুশা’ যার অর্থ – কলহের সৃষ্টিকর্তা।
- ঔরঙ্গজেবের বিদ্রোহী পুত্র আকবরকে শম্ভুজী আশ্রয় দিয়েছিলেন। এই অপরাধে ঔরঙ্গজেব শম্ভুজীকে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করেন এবং শম্ভুজীর শিশুপুত্র দ্বিতীয় শিবাজী(জনপ্রিয় নাম শাহ্’)-কে কারারুদ্ধ করেন।
- শম্ভুজীর মৃত্যুর পর মারাঠা সিংহাসনে আরােহণ করেন রাজারাম (১৬৮৯খ্রিস্টাব্দে )।
৩. রাজারাম ( ১৬৮৯ – ১৭০০ খ্রিস্টাব্দ )
- রাজারাম ছিলেন শম্ভুজীর ছোটভাই।
- তিনি মারাঠা সিংহাসনে বসেননি এবং দাবি করতেন যে তিনি শাহুর পরিবর্তে শাসনকার্য চালাচ্ছেন।
- তিনি তার রাজধানী গিন্জীতে স্থাপন করেন। পরে মুঘলরা গিন্জী দখল করলে তিনি প্রথমে বিশালগড় এবং পরে সাঁতারাতে পালিয়ে যান পেশোয়া হুকুমত সিংকে শাসনের দায়িত্ব দিয়ে।
- ১৭০০ খ্রিস্টাব্দে তিনি মারা গেলে তাঁর বিধবা পত্নী তারাবাই তাঁর শিশুপুত্র দ্বিতীয় শিবাজীকে সিংহাসনে বসিয়ে তাঁর নামে নিজেই শাসনভার গ্রহণ করেন।
- তারাবাঈয়ের শক্তিবৃদ্ধি হতে দেখে জুলফিকার খান মারাঠাদের মধ্যে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব লাগানোর উদ্দেশ্যে শাহুকে মুঘল বন্দিদশা থেকে মুক্তি দেন ।
৪. শাহু ( ১৭০৭- ১৭৪৯ খ্রিস্টাব্দ )
- মুঘলরা মারাঠাদের মধ্যে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব লাগিয়ে দিতে সক্ষম হয় এবং তারাবাই ধানাজি যাদবকে পাঠান শাহুকে দমন করতে।
- ১৭০৭ খ্রিস্টাব্দে বালাজি বিশ্বনাথের সহযোগিতায় শাহু খেদের যুদ্ধে তারাবাইকে হারিয়ে দেন।
- পরাজিত হয়ে তারাবাঈ তার শিশুপুত্রকে নিয়ে কোলহাপুরে চলে যান।
- শাহুর শাসনকালে বালাজি বিশ্বনাথের ক্ষমতা ক্রমশ বাড়তে থাকে ।
- ১৭১৩ খ্রিস্টাব্দে শাহু বালাজি বিশ্বনাথকে পেশোয়ার পদে নিযুক্ত করেন।
- বালাজি বাজিরাও-এর সময় মারাঠা রাজা শাহুজি প্রয়াত হন ১৭৪৯ খ্রিস্টাব্দে।
- শাহু মৃত্যুর আগে রামরাজকে রাজা হিসেবে মনোনীত করেছিলেন ।
৫. মারাঠা সাম্রাজ্যের কিছু গুরুত্বপূর্ণ পেশোয়া
পেশোয়া কথাটি হলো পারসী শব্দ যার অর্থ হলো “সবার আগে ( Foremost )” । দাক্ষিণাত্যে এই শব্দটির প্রচলন করেন মুঘলরা। একজন পেশোয়ার দায়িত্ব ছিল প্রধানমন্ত্রীর সমান।
বালাজি বিশ্বনাথের আগে পেশোয়া পদের অস্তিত্ব থাকলেও পেশোয়াপদ আসল গুরুত্ব পায় বালাজি বিশ্বনাথের সময় থেকেই ।
৫. ১ বালাজি বিশ্বনাথ ( ১৭১৩ – ১৭১৯ খ্রিস্টাব্দ )
- বালাজি বিশ্বনাথকে পেশোয়াতন্ত্রের প্রতিষ্ঠাতা মনে করা হয় ।
- তিনি পেশোয়া পদটিকে বংশানুক্রমিক করে তোলেন।
- শাহুকে মারাঠা নেতৃত্বে আনার প্রধান কারিগর ছিলেন এই বালাজি বিশ্বনাথ।
- ১৭১৯ খ্রিস্টাব্দে পেশোয়া বালাজি বিশ্বনাথ ফারুকশিয়ারের কাছ থেকে দাক্ষিণাত্যের ৬টি সুবা থেকে চৌথ ও সরদেশমুখী আদায় করার অধিকার পান এবং ফারুকসিয়ার শাহুকে রাজা বলে মেনে নেন।
- পরবর্তীকালে ফারুকসিয়ারের বিরুদ্ধে সৈয়দ ভাতৃদ্বয়ের অভিযানকে সমর্থন করেন ।
- ১৭২০ খ্রিস্টাব্দে বালাজি বিশ্বনাথের মৃত্যু হয় ।
- বালাজি বিশ্বনাথের মৃত্যুর পরে তাঁর জ্যেষ্ঠপুত্র প্রথম বাজিরাও মাত্র ২০ বছর বয়সে পেশোয়ার দায়িত্ব সামলান ।
- মারাঠা পেশোয়াদের মধ্যে সবথেকে বিখ্যাত ছিলেন তিনি। সামরিক কৌশল, রাজনৈতিক দূরদৃষ্টি এবং অক্লান্ত কর্মনিষ্ঠায় বাজীরাও তাঁর পিতা অপেক্ষাও শ্রেষ্ঠ ছিলেন।
- সমগ্র ভারতের হিন্দু জাতির মধ্যে জাতীয়তাবােধজাগাবার উদ্দেশ্যে এবং হিন্দু দলপতিগণকে একই আদর্শে উদ্বুদ্ধ করবার জন্য বাজীরাও তাঁর ‘হিন্দু পাদ পাদশাহী’ বা হিন্দু সাম্রাজ্য গঠনের পরিকল্পনা সকলের সম্মুখে তুলে ধরেন।
- প্রথম বাজীরাওকে সকলে “থোরেল ( Thorale )’ বা জ্যেষ্ঠ বাজিরাও বলে ডাকতেন।
- গেরিলা যুদ্ধে অত্যন্ত পারদর্শী ছিলেন প্রথম বাজিরাও।
- তাঁর জীবদ্দশায় তিনি একটিও যুদ্ধ হারেননি এবং মারাঠা সাম্রাজ্য তাঁর সুশাসনে ফুলে ফেঁপে উঠেছিল।
- ১৭২৮ খ্রিস্টাব্দে তিনি তাঁর প্রশাসনিক রাজধানী সাতারা থেকে পুনেতে স্থানান্তরিত করেন।
- প্রথম বাজিরাও স্থানীয় মারাঠা প্রশাসনিক প্রধান ( system of confederacy ) তৈরী করেছিলেন । এই সিস্টেমে কিছু স্বশাসিত মারাঠা প্রধান/ পরিবার প্রথম বাজিরাওয়ের অধীনে নিজ নিজ অঞ্চল শাসন করতেন । এদের মধ্যে বিখ্যাত ছিল – বরোদার গায়কোয়ার, নাগপুরের ভোঁসলে, ইন্দোরের হোলকার, গোয়ালিয়রের সিন্ধিয়া।
৫.৩ বালাজি বাজিরাও ( ১৭৪০ – ১৭৬১ খ্রিস্টাব্দ )
- বাজীরাও-এর মৃত্যুর পর তাঁর পুত্রবালাজি বাজিরাও পেশোয়া পদ লাভ করেন। তিনি নানা সাহেব নামেও পরিচিত ছিলেন।
- বালাজি বাজিরাও-এর সময় মারাঠা রাজা শাহুজি প্রয়াত হন ১৭৪৯ খ্রিস্টাব্দে।
- শাহুজী তাঁর মৃত্যুর আগে রামরাজকে মারাঠা রাজা হিসেবে মনোনীত করলেও, শাহুজির মৃত্যুর পরে বালাজি বাজিরাও রামরাজকে বন্দী করেন এবং সঙ্গলা চুক্তি ( ১৭৫০ খ্রিস্টাব্দ ) -এর মাধ্যমে মারাঠা শাসনের ভার পেশোয়ারা পেয়ে যায়।
- পিতার গৃহীত আদর্শ হিন্দু-পাদ-পাদশাহী ত্যাগ করে তিনি হিন্দু রাজাদের বিরুদ্ধেও যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছিলেন।
- তিনি সাম্রাজ্য বিস্তারের সময় পাঞ্জাব অধিকার করলে আহম্মদ শাহ আবদালীর সঙ্গে যুদ্ধ অনিবার্য হয়ে পড়ে।
- ১৭৬১ খ্রিস্টাব্দে পানিপথের প্রান্তরে (পানিপথের তৃতীয় যুদ্ধ ) দুই বাহিনীর মধ্যে যুদ্ধ হয় এবং মারাঠাগণ শােচনীয়ভাবে পরাজিত হন।
- এই সংবাদ পেয়ে তিনি১৭৬১ খ্রিস্টাব্দে মারা যান।
- বালাজি বাজীরাও-এর মৃত্যুর পর তাঁর ১৭ বছর বয়সী পুত্র মাধবরাও পেশােয়া হন।
- তিনি নিজামকে পরাজিত করেছিলেন এবং হায়দার আলীকে বাধ্য করেছিলেন খাজনা দিতে।
- 1772 খ্রিস্টাব্দে মাধবরাও-এর মৃত্যু হলে মারাঠা শক্তিকে পুনরুজ্জীবিত করার মতাে উল্লেখযোগ্য কেউ আর অবশিষ্ট ছিলেন না।
৫.৫ রঘুনাথ রাও ( ১৭৭২ – ১৭৭৩ খ্রিস্টাব্দ ) ও নারায়ণ রাও ( ১৭৭২ – ১৭৭৩ খ্রিস্টাব্দ )
- মাধবরাও-এর মৃত্যুর পরে তাঁর কনিষ্ঠ ভ্রাতা নারায়ণ রাও ও নানাসাহেবের কনিষ্ঠ ভ্রাতা রঘুনাথ রায় এর মধ্যে পেশোয়া পদ নিয়ে বিবাদ বাঁধে।
- নারায়ণ রাও-কে রঘুনাথ রাও ১৭৭৩ খ্রিষ্টাব্দে হত্যা করেন এবং পেশোয়া পদ দখল করেন। কিন্তু সুলতান তাকে স্বীকৃতি না দিয়ে তিনি তার পদ হারান।
৫.৬ সওয়াই মাধব রাও ( ১৭৭২ – ১৭৭৩ খ্রিস্টাব্দ )
- মাত্র ৪০ দিন বয়সে পেশোয়া পদের দায়িত্ব পান নারায়ণ রাও -এর পুত্র সওয়াই মাধব রাও।
- প্রকৃত পক্ষে শাসনের ভার এসে পরে নানা ফড়নবিশ ওপরে। তাঁর সুশাসন ও বুদ্ধির জন্য নানা ফড়নবিশকে মারাঠা সাম্রাজ্যের চাণক্য বলা হতো।
- অপরদিকে রঘুনাথ রাও পদচ্যুত হওয়ার পরে ব্রিটিশদের কাছে সাহায্য চান এবং প্রথম এংলো-মারাঠা যুদ্ধ ( ১৭৭৫-৮২ খ্রিস্টাব্দ ) শুরু হয় ।
- বিখ্যাত তালেগাঁও এর যুদ্ধে ( ১৭৭৬ খ্রিষ্টাব্দ ) নানা ফড়নবিশ ব্রিটিশদের হারিয়ে দেন এবং ১৭৭৬ খ্রিস্টাব্দে তাদের মধ্যে পুরন্দরের সন্ধি এবং ১৮০২ খ্রিষ্টাব্দে সলবাই -এর সন্ধি হয়।
- ১৮০০ খ্রিস্টাব্দে নানা ফড়নবিশ-এর মৃত্যুর পরে মারাঠা শক্তি আর বিশেষ মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেনি।
৫.৭ দ্বিতীয় বাজিরাও ( ১৭৯১ – ১৮১৮ খ্রিস্টাব্দ )
- দ্বিতীয় বাজিরাও ছিলেন রঘুনাথ রাও এর সন্তান এবং শেষ পেশোয়া।
- তিনি ছিলেন সবথেকে দুর্বল ও ভীরু পেশোয়া এবং ১৮০২ খ্রিস্টাব্দে তিনি ব্রিটিশদের সাথে লজ্জাজনক বেসিনের সন্ধি স্বাক্ষর করেন। এর সন্ধির মাধ্যমে মারাঠা সাম্রাজ্য ও দাক্ষিণাত্যের প্রকৃত শাসনভার পেয়ে যায় ব্রিটিশরা।
- ১৮১৮ খ্রিস্টাব্দে দ্বিতীয় বাজীরাওকে ব্রিটিশরা সম্পুর্নরূপে পরাজিত করেন।
- দ্বিতীয় বাজিরাও-এর দত্তক পুত্র ছিলেন নানা সাহেব বা ধুন্দুপন্থ । এই নানা সাহেব সিপাহী বিদ্রোহে অংশগ্রহণ করেছিলেন ।
পেশােয়াদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ ছিলেন প্রথম বাজীরাও এবং দুর্বলতম পেশােয়া ছিলেন দ্বিতীয় বাজীরাও।
Download in PDF format
File Name : মারাঠা সাম্রাজ্যের ইতিহাস.pdf
File Type : PDF
No. of Pages : 5
File Size : 1.91 MB
এরকম আরো কিছু নোটস :
বন্ধুরা নোটটি ভালো লাগলে শেয়ার করতে ভুলো না ।
To check our latest Posts - Click Here