বায়ুমণ্ডলের স্তরবিন্যাস – বায়ুমণ্ডলের বিভিন্ন স্তর – PDF
Layers of Earth's Atmosphere
বায়ুমণ্ডলের স্তরবিন্যাস – বায়ুমণ্ডলের বিভিন্ন স্তর
আজকে আমরা আলোচনা করবো বায়ুমণ্ডলের স্তরবিন্যাস নিয়ে । বায়ুমণ্ডলের কয়টি স্তর ও তাদের নাম কি কি তার একটি সুন্দর ধারণা আজকের এই পোস্টে তোমরা পেয়ে যাবে। বায়ুমণ্ডলের বিভিন্ন স্তর থেকে বিভিন্ন পরীক্ষায় মাঝে মধ্যেই প্রশ্ন এসে থাকে। তাই ছাত্রদের সুবিধার জন্য এই নোটটি খুব সুন্দর করে দেওয়া রইলো।
Table of Contents
উষ্ণতা , চাপ, ঘনত্ব ও অন্যান্য বৈশিষ্ট্যের ওপর নির্ভর করে বিজ্ঞানীরা বায়ুমণ্ডলকে মুখ্যত ছয়টি স্তরে ভাগ করেছেন। ক্রমবর্ধমান উচ্চতা অনুসারে স্তরগুলি হল—
- ট্রপােস্ফিয়ার বা ঘনমণ্ডল
- স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার বা শান্তমণ্ডল
- মেসােস্ফিয়ার বা মধ্যমণ্ডল
- থার্মোস্ফিয়ার বা তাপমণ্ডল
- এক্সোস্ফিয়ার বা বহিঃমণ্ডল
- ম্যাগনেটোস্ফিয়ার বা চুম্বকমণ্ডল।
[ আরো দেখুন : ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের উৎসব (PDF সহ) ]
বায়ুমন্ডলের বিভিন্ন স্তরের বর্ণনা :
ট্রপােস্ফিয়ার (Troposphere) :
বায়ুমণ্ডলের সবচেয়ে নীচে অবস্থিত বিভিন্ন উপাদান মিশ্রিত ও পরিবর্তনশীল সবচেয়ে ঘন ও ভারী যে স্তরটি ভূপৃষ্ঠকে স্পর্শ করে থাকে, তাকেই ট্রপােস্ফিয়ার বলে। (গ্রিক শব্দ Tropos = মেশানাে বা অশান্ত, Sphere = অঞ্চল অর্থাৎ, Troposphere = মিশ্রিত বা অশান্ত অঞ্চল )।
বিস্তৃতি : ভূপৃষ্ঠ থেকে গড়ে 10 কিলােমিটার, নিরক্ষীয় অঞ্চলে 16–18 কিলােমিটার ও মেরু অঞলে 7-8 কিলােমিটার।
গঠন : বায়ুমণ্ডল গঠনকারী বিভিন্ন উপাদান যেমন অক্সিজেন, নাইট্রোজেন, কার্বন ডাইঅক্সাইড, জলীয় বাষ্প, ধূলিকণা ইত্যাদির 75% এই স্তরে অবস্থান করে।
বৈশিষ্ট্য :
(i) এই স্তরে আমরা বসবাস করি।
(ii) বায়ুপ্রবাহ, মেঘ, ঝড়, বৃষ্টি, বজ্রবিদ্যুৎ ইত্যাদি বায়বীয় গােলযােগ এই স্তরে ঘটে। তাই এই স্তরের অপর নাম ক্ষুব্ধমণ্ডল।
(iii) উচ্চতার তারতম্যের কারণে এই স্তরে উন্নতার পার্থক্য দেখা যায়। ভূপৃষ্ঠ থেকে প্রতি 1 কিলােমিটার উচ্চতার পার্থক্যে উষ্ণতা প্রায় 6.5°C-10°C হ্রাস পায়। তাই এই স্তরকে ‘ক্রমহ্রাসমান উষ্ণতা স্তর’ বলে। এই স্তরের সর্বনিম্ন উষ্ণতা প্রায় –56°C বা 217K হয়।
(iv) বায়ুদূষণকারী প্রায় সকল উপাদানই এই স্তরে উপস্থিত থাকে।
(v) বায়ুমণ্ডলের উপাদানের বেশিরভাগই এই স্তরে অবস্থান করায় বায়ুর চাপ এই স্তরে সর্বোচ্চ এবং প্রায় 76 সেন্টিমিটার উচ্চতাসম্পন্ন পারদস্তম্ভের চাপের সমান।
(vi) এই স্তরে প্রপেলার বিমান চালানাে হয়।
(vii) ট্রপােস্ফিয়ারের ঊর্ধ্বসীমায় প্রায় 3 কিলােমিটার অংশে উয়তার হ্রাসবৃদ্ধি হয় না, এই অংশকে ট্রপােপজ বলে।
[ আরো দেখুন : ভারতের নদী তীরবর্তী প্রসিদ্ধ শহর ( PDF )]
স্ট্রাটোস্ফিয়ার (Stratosphere) :
ট্রপােস্ফিয়ারের উপরে অবস্থিত বায়ুমণ্ডলের দ্বিতীয় স্তরটি হল স্ট্রাটোস্ফিয়ার। (গ্রিক শব্দ Stratos = শান্ত, Sphere = অঞ্চল অর্থাৎ, Stratosphere = শান্ত অঞ্চল বা শান্তমণ্ডল)।
বিস্তৃতি : ট্রপােপজের ঊর্ধ্বে প্রায় 50 কিলােমিটার পর্যন্ত এই স্তর বিস্তৃত।
গঠন : স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারের উপাদানগুলি ট্রপােস্ফিয়ারের উপাদানগুলি থেকে অভিন্ন হলেও পরিমাণগতভাবে অনেকটাই কম থাকে।
বৈশিষ্ট্য :
(i) এই স্তরে বায়ুর ঘনত্ব খুবই কম হওয়ায় বায়ুচাপও কম হয়।
(ii) বায়ুতে অক্সিজেনের পরিমাণ কম হওয়ায় এই স্তরে শ্বাসকার্য চালানাে কষ্টকর।
(iii) এই স্তরে জলীয় বাষ্প, বায়ুপ্রবাহ, মেঘ বা ঝড়বৃষ্টি অনুপস্থিত। তাই একে শান্তমণ্ডল বলে।
(iv) উচ্চতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে এই স্তরের উষ্ণতা বৃদ্ধি পায় এবং ঊর্ধ্বসীমায় পৌছে তা প্রায় 0°C হয়।
(v) বায়ুমণ্ডল শান্ত থাকায় এই স্তরে জেটপ্লেন চলাচল করে।
(vi) স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারের ঊর্ধ্বাংশে অতিবেগুনি রশ্মি শােষণের মাধ্যমে অক্সিজেন (O2) গ্যাস ওজোন গ্যাসে (O3) রূপান্তরিত হয়। শান্তমণ্ডলের 20-35 কিলােমিটার উচ্চতায় ওজোন গ্যাসের ঘনত্ব সবচেয়ে বেশি থাকে। তাই এই অংশটিকে ওজোন স্তর (Ozone layer) বলে। এই ওজোন গ্যাস সূর্য থেকে আসা তাপ ও অতিবেগুনি রশ্মি শােষণ করে থাকে। ফলে, জীবজগৎ ধ্বংসের হাত থেকে সুরক্ষিত থাকে। অতিবেগুনি রশ্মি শােষণের কারণেই এই স্তরের উষ্ণতা বৃদ্ধি পায়। ওজোন গ্যাসের উপস্থিতির জন্য স্তরটিকে ওজোনােস্ফিয়ার বা ওজোনমণ্ডলও বলে।
(vii) এই স্তরের শব্দ প্রতিফলিত করার ক্ষমতা আছে।
(viii) স্ট্রাটোস্ফিয়ারের ঊর্ধ্বসীমায় অবস্থিত যে অংশে উষ্ণতা অপরিবর্তিত থাকে, তাকে স্ট্রাটোপজ বলে।
[ আরো দেখুন : পশ্চিমবঙ্গের নদনদী ]
মেসােস্ফিয়ার (Mesosphere) :
স্ট্রাটোস্ফিয়ারের উপরে অবস্থিত বায়ুমণ্ডলের তৃতীয় তথা মধ্যভাগে অবস্থিত স্তরটিকে মেসােস্ফিয়ার বলে। (Meso = মধ্যভাগ, Sphere =অঞ্চল অর্থাৎ, Mesosphere = মধ্যভাগের অঞল)।
বিস্তৃতি : ভূপৃষ্ঠ থেকে 50-80 কিলােমিটার উচ্চতার পাল্লার মধ্যে স্তরটি অবস্থান করে।
গঠন : এই স্তরে সামান্য পরিমাণে উপস্থিত N2, O2, অথবা তড়িদাহিত অণু যেমন— O2+, NO+ মূল উপাদান হিসেবে থাকে।
বৈশিষ্ট্য :
(i) এটি বায়ুমণ্ডলের শীতলতমঅঞ্চল । উচ্চতা বৃদ্ধির সঙ্গে এই স্তরে উষ্ণতা ও চাপ দুই-ই কমে। ৪০ কিলােমিটার উচ্চতায় উষ্ণতা কমে প্রায় –93°C হয়।
(ii) মহাকাশ থেকে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করা উল্কাগুলি এই স্তরে এসে পুড়ে ছাই হয়ে যায়।
(iii) মেসােস্ফিয়ারের ঊর্ধ্বসীমায় যে অংশে উষ্ণতার মান প্রায় স্থির হয়, সেই অংশকে মেসােপজ বলে।
[ আরো দেখুন : ভারতের বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান সমূহ ( PDF ) ]
থার্মোস্ফিয়ার (Thermosphere) :
মেসােস্ফিয়ারের উপরে অবস্থিত বায়ুমণ্ডলের অতি তপ্ত স্তরটি হল থার্মোস্ফিয়ার বা তাপমণ্ডল। (Thermo= তাপ, Sphere = অঞ্চল অর্থাৎ, Thermosphere = তাপ অঞ্চল বা তাপমণ্ডল)।
বিস্তৃতি : ভূপৃষ্ঠ সাপেক্ষে ৪০ কিলােমিটার থেকে 500 কিলােমিটার উচ্চতার পাল্লায় এই স্তরটি অবস্থান করে।
গঠন : ছােটো ছােটো তড়িৎবাহী কণার সমন্বয়ে স্তরটি গঠিত। এর নীচের অংশে আণবিক নাইট্রোজেন ও উপরের অংশে পারমাণবিক অক্সিজেন থাকে। এই স্তরে হাইড্রোজেন, হিলিয়াম ও ওজোন গ্যাসগুলি আয়নিত অবস্থায় থাকে।
বৈশিষ্ট্য :
(i) এই অংশে বাতাস প্রায় নেই।
(ii) এই স্তরের উপাদান নাইট্রোজেন ও অক্সিজেন অণু ও পরমাণুগুলি সূর্য ও মহাবিশ্বের অন্যান্য অংশ থেকে আগত অতিবেগুনি রশ্মি, এক্স রশ্মি, গামা রশ্মি ও মহাজাগতিক রশ্মি (Cosmic ray) শােষণ করে। ফলে, উষ্ণতা দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং স্তরটির উর্ধ্বসীমায় উয়তা প্রায় 1200°C হয়ে থাকে।
(iii) রশ্মিগুলির প্রভাবে এই স্তরের নিম্নাংশের বায়ু আয়নিত অবস্থায় থাকে বলে স্তরটিকে আয়নােস্ফিয়ার বা আয়নমণ্ডল বলে। অণু, পরমাণু ও আয়নগুলি সংমিশ্রিত হয়ে প্লাজমা অবস্থায় থাকে।
(iv) তড়িদাহিত থাকায় আয়নমণ্ডল পৃথিবী থেকে পাঠানাে বেতার তরঙ্গ প্রতিফলিত করে। একে কাজে লাগিয়ে বেতার ও দূরদর্শন অনুষ্ঠান সম্প্রচার করে থাকে।
(v) আয়নিত বায়বীয় কণাগুলি ইলেকট্রন, প্রােটন ইত্যাদি আহিত কণার সংস্পর্শে এসে উজ্জ্বল আলাে বিকিরণ করায় মেরুজ্যোতি বা মেরুপ্রভা (Aurora)-এর সৃষ্টি হয়। আয়নমণ্ডলের নীচের অংশকে কেনেলি হেভিসাইড স্তর বলে। এই অংশটিই মূলত বেতার তরঙ্গ প্রতিফলন করে থাকে। আয়নমণ্ডলের উপরের অংশটি ‘অ্যাপলটন স্তর‘ নামে পরিচিত। এটিও অপেক্ষাকৃত ক্ষুদ্র তরঙ্গদৈর্ঘ্যের বেতার তরঙ্গ প্রতিফলিত করে।
[ আরো দেখুন : প্রশ্নোত্তরে পৃথিবী ]
এক্সোস্ফিয়ার (Exosphere) :
থার্মোস্ফিয়ারের উপরে প্রায় মহাশূন্য পর্যন্ত বিস্তৃত পাতলা বায়ুস্তরকে এক্সোস্ফিয়ার বা বহিঃমণ্ডল বলে। (Ex০ = বহিঃ, Sphere = মণ্ডল, Exosphere = বহিঃমণ্ডল)
বিস্তৃতি : ভূপৃষ্ঠের উপরে 500-1,500 কিলােমিটার পর্যন্ত এই স্তরটি বিস্তৃত থাকে।
গঠন : এই স্তরে মূলত হাইড্রোজেন ও হিলিয়াম গ্যাসের প্রাধান্য দেখা যায় ও গ্যাসগুলি আয়নিত অবস্থায় থাকে।
বৈশিষ্ট্য :
(i) এই স্তরেও উষ্ণতা বৃদ্ধি পায়, তবে এই বৃদ্ধি থার্মোস্ফিয়ারের মতাে দ্রুত নয়।
(ii) এই স্তরের অন্তিম অংশে উষ্ণতা প্রায় 1,600°C হয়।
(iii) কৃত্রিম উপগ্রহ, মহাকাশ কেন্দ্রগুলি এই স্তরে অবস্থান করে।
মাগনেটোস্ফিয়ার (Magnetosphere):
এক্সোস্ফিয়ারের উপরে অবস্থিত মহাশূন্য পর্যন্ত বিস্তৃত বায়ুমণ্ডলের সর্বশেষ স্তরকে ম্যাগনেটোস্ফিয়ার বলা হয়। (Magnetosphere = চুম্বকীয় মণ্ডল)
বিস্তৃতি : 1,500 – 10,000 কিলােমিটার (বায়ুমণ্ডলের শেষ সীমা) পর্যন্ত এই স্তর বিস্তৃত।
বৈশিষ্ট্য :
(i) স্তরটি প্রায় বায়ুশূন্য। এটি বিস্তৃত হয়ে সূর্যের আবহাওয়ামণ্ডলে গিয়ে মিশেছে।
(ii) এই স্তরে ইলেকট্রন ও প্রােটন দ্বারা গঠিত একটি স্থায়ী তড়িৎচুম্বকীয় ক্ষেত্রের অস্তিত্ব থাকে।
MCQ Questions are only available in PDF format. You can download the same from below.
নিচের ডাউনলোড সেকশন থেকে এই নোটটির পিডিএফ ফাইল ডাউনলোড করে নাও ।
Download Section
- File Name: বায়ুমণ্ডলের স্তরবিন্যাস
- File Size: 227 KB
- No of Pages: 04
- Format: PDF
- Language: Bengali
- Subject: Geography
- File Name: বায়ুমণ্ডলের স্তরবিন্যাস MCQ
- File Size: 550 KB
- No. of Pages: 07
- Format: PDF
বায়ুমণ্ডলের স্তরবিন্যাস সম্পর্কিত কিছু প্রশ্ন ও উত্তর
পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের সর্বনিম্ন স্তর কোনটি?
ট্রপােস্ফিয়ার বা ঘনমণ্ডল হল বায়ুমণ্ডলের সর্বনিম্ন স্তর।
বায়ুমন্ডলের কোন স্তরকে ‘আবহাওয়া স্তর’ বলা হয়?
ট্রপোস্ফিয়ারকে ‘আবহাওয়া স্তর’ বলা হয়।
পৃথিবীকে আবর্তনরত উপগ্রহ গুলি (Satellites) কোন স্তরে অবস্থান করে?
এক্সোস্ফিয়ারে
মহাকাশ থেকে আগত উল্কাপিন্ড গুলি বায়ুমন্ডলের কোন স্তরে এসে পুড়ে ধ্বংস হয়ে যায়?
মেসোস্ফিয়ারে
বায়ুমণ্ডলের কোন স্তরে মেরুজ্যোতি দেখা যায়?
আয়োনেস্ফিয়ারে মেরুজ্যোতি দেখা যায়।
বায়ুমণ্ডলের কোন স্তরে ঝড় বৃষ্টি হয়?
ট্রপােস্ফিয়ারে
To check our latest Posts - Click Here