পশ্চিমবঙ্গের নদনদী । Rivers of West Bengal
আজকে আমাদের আলোচ্য বিষয় পশ্চিমবঙ্গের নদনদী (Rivers of West Bengal PDF ) ।
পশ্চিমবঙ্গ একটি নদীমাতৃক রাজ্য । পশ্চিমবঙ্গের ভূপ্রকৃতি অনুসারে এই রাজ্যের উত্তর ও পশ্চিম দিক উঁচু এবং দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব দিক বঙ্গোপসাগরের দিকে ক্রমশ ঢালু হয়ে যাওয়ায় পশ্চিমবঙ্গের নদনদীগুলো উত্তরের পার্বত্য অঞ্চল এবং পশ্চিমের মালভূমি থেকে উৎপন্ন হওয়ার পর দক্ষিণ অথবা দক্ষিণ-পূর্ব দিকে প্রবাহিত হয়ে বঙ্গোপসাগরে পড়েছে । উৎপত্তি ও গতিপ্রকৃতি অনুসারে পশ্চিমবঙ্গের নদীগুলিকে চারটি প্রধান ভাগে ভাগ করা যায় ।
- উত্তরবঙ্গের নদনদী
- সমভূমি অঞ্চলের নদী
- পশ্চিমের মালভূমি অঞ্চলের প্রধান নদী
- দক্ষিণের সুন্দরবন অঞ্চলের নদনদী
পশ্চিমবঙ্গের নদী সম্পর্কে আলোচনা করো ।
১. উত্তরবঙ্গের নদনদী
তিস্তা (৩১৫ কিমি ) :
- ত্রাসের নদী নাম পরিচিত ।
- উৎপত্তি – সিকিমের জেমু হিমবাহ , পতনস্থল – বাংলাদেশের যমুনা ( ব্রহ্মপুত্র নদ) নদী ।
- একে সিকিম ও উত্তরবঙ্গের জীবনরেখাও বলা হয়।
- উপনদী – ছোট রঙ্গীত, বড়ো রঙ্গীত, জলঢাকা ।
- তিস্তার ডানদিক তরাই ও বামদিকের অঞ্চল ডুয়ার্স নাম পরিচিত ** ।
মহানন্দা ( ৩৬০ কিমি ) :
- উৎপত্তি – কার্শিয়াংয়ের উত্তরে মহালদিরাম নামক পার্বত্য অঞ্চল , পতনস্থল – বাংলাদেশের পদ্মা নদী ।
- উপনদী – রত্না, কংকাই, মেচি, বালাসন ।
- এই নদীর উপকূলভাগ খুব উর্বর ও ঘনজনবসতিপূর্ণ । এই অঞ্চল দিয়ারা নামে পরিচিত ।
জলঢাকা ( ১৯২ কিমি ) :
- উৎপত্তি – সিকিম-ভুটানের সীমান্তের বিদ্যাং হ্রদ, পতনস্থল – বাংলাদেশের যমুনা ( ব্রহ্মপুত্র নদ) নদী ।
- উপনদী – ধরলা, গিধারি, ডোলং, ডায়না ।
- গরুমারা অভয়ারণ্য এই নদীর তীরে অবস্থিত ।
দেখে নাও : পশ্চিমবঙ্গের অভয়ারণ্য তালিকা । Wildlife Sanctuary of West Bengal – PDF
তোর্সা ( ৩৫৮ কিমি ) :
- উৎপত্তি – তিব্বতের চুম্বি উপত্যকা, পতনস্থল – জলঢাকা নদী ।
- উপনদী – মালেঙ্গি, বেলা, সুনজাই ।
কালজানি :
- উৎপত্তি – ডিমা বক্সা পাহাড় ও আলাইকুড়ি ভুটান পাহাড়, পতনস্থল – বাংলাদেশের সংকোশ নদীতে মিশে ব্রহ্মপুত্রে পরেছে ।
- উপনদী – গদাধর, নেনাই ।
রায়ঢাক ( ৩৭০ কিমি ) :
- উৎপত্তি – চোমলহারি পর্বত, পতনস্থল – ব্রহ্মপুত্র নদ ।
- উপনদী – দীপা ।
২. সমভূমি অঞ্চলের নদী
গঙ্গা ( মোট ২৫২৫ কিমি, পশ্চিমবঙ্গে প্রায় ৫২০ কিমি ) :
- উৎপত্তি – গঙ্গোত্রী হিমবাহ , পতনস্থল -বঙ্গোপসাগর ।
- এই পশ্চিমবঙ্গের দীর্ঘতম ও প্রধান নদী ।
- গঙ্গা নদী হিমালয় পর্বতের গঙ্গোত্রী হিমবাহের গোমুখ নামে তুষার গুহা থেকে উৎপন্ন হয়ে প্রথমে উত্তরপ্রদেশ এবং পরে বিহারের উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে রাজমহল পাহাড়ের কাছে পশ্চিমবঙ্গে প্রবেশ করে কিছুদুর প্রবাহিত হয়ে মুর্শিদাবাদ জেলার মিঠিপুরের কাছে ভাগীরথী ও পদ্মা নামে দুটি শাখায় বিভক্ত হয়েছে । গঙ্গার একটি শাখা ভাগীরথী-হুগলী নামে দক্ষিণ দিকে পশ্চিমবঙ্গের উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বঙ্গোপসাগরে পড়েছে, আর প্রধান শাখাটি পদ্মা নামে দক্ষিণ-পূর্ব দিকে প্রবাহিত হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে । পশ্চিমবঙ্গে ভাগীরথী–হুগলী নদীই গঙ্গা নামে পরিচিত । মুর্শিদাবাদ থেকে নবদ্বীপ শহর পর্যন্ত এই নদীর নাম ভাগীরথী এবং নবদ্বীপ থেকে মোহানা পর্যন্ত এই নদীর নাম হুগলী নদী । হুগলী নদীর দক্ষিণাংশে জোয়ার ভাঁটার প্রভাব দেখা যায় । অতিরিক্ত জল এনে কলকাতা বন্দরকে বাঁচানোর জন্য গঙ্গা নদীর উপর ফারাক্কা ব্যারেজ নির্মিত হয়েছে ।
- উপনদী : দামোদর, রূপনারায়ণ, ময়ূরাক্ষী, কংসাবতী, অজয় ।
৩. পশ্চিমের মালভূমি অঞ্চলের নদনদী
দামোদর ( ৫৯২ কিমি ):
- বাংলার দুঃখ নাম পরিচিত ।
- উৎপত্তি – ভারতের ঝাড়খণ্ড রাজ্যের ছোটনাগপুর মালভূমিতে, পালামৌ জেলার টোরির নিকট উচ্চগিরি শৃঙ্গ, পতনস্থল – উলুবেড়িয়ার কাছে ভাগীরথী-হুগলী নদী ।
- উপনদী – বরাকর, কোনার, বোকারো, আয়ার ।
সুবর্ণরেখা ( ৪৭০ কিমি ) :
- উৎপত্তি – পালামৌ জেলার টোরির কাছে, পতনস্থল – বঙ্গোপসাগর ।
- উপনদী – শঙ্খ, রুপাই, সাপুলিনালা ।
কংসাবতী ( ৩৩৬ কিমি ) :
- উৎপত্তি – অযোধ্যা পাহাড় সংলগ্ন ঝাবর পাহাড়, পতনস্থল – হুগলি নদী (হলদি নদীরূপে ) ।
- উপনদী – কুমারী ।
অজয় ( ২৮৮ কিমি ) :
- উৎপত্তি – ছোটনাগপুর মালভূমি, পতনস্থল -ভাগীরথী ( কাটোয়াতে ) ।
- উপনদী – কুনুর, হিংলা, তুমুনি ।
ময়ূরাক্ষী ( ২৫০ কিমি ) :
- উৎপত্তি – বৈদ্যনাথ ধামের ত্রিকূট পাহাড়, পতনস্থল – ভাগীরথী নদী ( কালনাতে )।
- উপনদী – পুশকানি ।
রূপনারায়ণ ( ৮০ কিমি ) :
- উৎপত্তি – পশ্চিমের মালভূমি অঞ্চল ( তিলাবানি পাহাড় ), পতনস্থল – হুগলি নদী ।
- উপনদী – মুণ্ডেশ্বরী ।
হলদি ( ২৪ কিমি ) :
- উৎপত্তি – পূর্ব মেদিনীপুরের ময়নার নারিকেলদার কাছে কেলেঘাই নদীর সঙ্গে যুক্ত হয়ে , কাঁসাই নদীর নাম হয়েছে হলদিনদী । পতনস্থল – ভাগীরথী ।
৪. দক্ষিণের সুন্দরবন অঞ্চলের নদনদী
এই অঞ্চলের নদীগুলি প্রধানত জোয়ারের জলে পুষ্ট এবং সবই হুগলি নদীর শাখানদী। সুন্দরবন অঞ্চলের উলেখযোগ্য নদনদীগুলি হলো – মাতলা, ইচ্ছামতী, রায়মঙ্গল, বিদ্যাধরী, গোসাবা, সপ্তমুখী, পিয়ালী, ঠাকুরান, কালিন্দী ইত্যাদি ।
পশ্চিমবঙ্গের নদনদী PDF নিচে প্রদত্ত ডাউনলোড লিংক থেকে ডাউনলোড করে নাও ।
Download Section :
- File Name : পশ্চিমবঙ্গের নদনদী
- File Size : 200 KB
- No. of Pages: 03
- Format : PDF
- Language : Bengali
- Subject : West Bengal Geography
আরো দেখুন :
- পশ্চিমবঙ্গের নদী তীরবর্তী শহর
- ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের লোকনৃত্য
- গুরুত্বপূর্ণ পাস্
- পশ্চিমবঙ্গ সম্পর্কিত কিছু তথ্য
Covered Topics : পশ্চিমবঙ্গের নদনদীর তালিকা , পশ্চিমবঙ্গের নদ-নদী PDF, নদ-নদীর অবস্থান তালিকা. List of Rivers of West Bengal, West Bengal River System PDF Download
কিছু প্রশ্ন ও উত্তর –
পশ্চিমবঙ্গের ত্রাসের নদী বলা হয় কাকে?
তিস্তা নদীকে পশ্চিমবঙ্গের ত্রাসের নদী বলা হয়। বর্ষাকালে দার্জিলিংয়ের পার্বত্য অঞ্চলে প্রচুর বৃষ্টিপাতের ফলে তিস্তা নদীর জল বিপুল পরিমানে বেড়ে যায় এবং সমতল অঞ্চলে বন্যার সৃষ্টি করে। তাই তিস্তাকে ত্রাসের নদী বলা হয়ে থাকে।
দামোদর কে দুঃখের নদী বলা হয় কেন?
দামোদর নদীকে।
গঙ্গা নদীর উৎপত্তি কোথা থেকে ?
গঙ্গা নদী হিমালয় পর্বতের গঙ্গোত্রী হিমবাহের গোমুখ নামে তুষার গুহা থেকে উৎপন্ন হয়েছে।
গঙ্গা নদীর দৈর্ঘ্য কত?
গঙ্গা নদীর দৈর্ঘ্য ২৫২৫ কিলোমিটার ।
পশ্চিমবঙ্গের প্রধান নদী কোনটি ?
পশ্চিমবঙ্গের প্রধান নদী হল হুগলি।
উত্তরবঙ্গের প্রধান নদী কোনটি?
উত্তরবঙ্গের প্রধান নদী তিস্তা।
কোন নদী পশ্চিমবঙ্গ ও আসামকে বিভক্ত করে?
আসাম ও পশ্চিমবঙ্গের মধ্যে সীমানা তৈরি করেছে সংকোশ নদী।
To check our latest Posts - Click Here